১৯৫৬–৬১ সালে পাকিস্তানের শিক্ষা কমিশনকে ঘিরে লেখকের গবেষণা ও প্রবন্ধ থেকে বইটির সূত্রপাত। বারবার আলোচনা ও পরিমার্জনের পর এটি ২০০৪ সালে প্রথম বই আকারে প্রকাশিত হয়। লেখকের অভিযোগ, নীতিমালায় নৈতিকতা ও ইসলামী চেতনা অনুপস্থিত।
সারাংশ: বইটি দীর্ঘ আলোচনার ফসল; মূল সমস্যা—ইসলামী ভিত্তির অভাব।
২) বইয়ের উদ্দেশ্য
বাংলাদেশে শিক্ষা দুই মেরুতে—মাদ্রাসা বনাম আধুনিক শিক্ষা। কোনোটিই একা যথেষ্ট নয়। বইটির উদ্দেশ্য: ইসলামী আদর্শে ভিত্তিকৃত সমন্বিত শিক্ষার রূপরেখা দেওয়া।
সারাংশ: সমন্বিত ইসলামী-আধুনিক শিক্ষা দরকার।
৩) চারটি মৌলিক প্রশ্ন
শিক্ষাব্যবস্থা সাজাতে আগে নির্ধারণ করতে হবে:
১) শিক্ষা কী?
২) মানুষ কে?
৩) জাতীয় আদর্শ কী?
৪) বিদ্যমান শিক্ষার সমস্যা কোথায়?
সারাংশ: কাঠামোর আগে দর্শন জরুরী
৪) শিক্ষা কী
শিক্ষা হলো—“পরিকল্পিত ব্যবস্থায় মানুষের মধ্যে গুণাবলি ও জ্ঞান বিকাশ।” অন্য প্রাণীরা স্বভাবত শিখে, কিন্তু মানুষের জন্য কৃত্রিম/সচেতন আয়োজন দরকার।
সারাংশ: শিক্ষা = পরিকল্পিত মানবিক বিকাশ।
৫) মানুষ কে?
মানুষ দেহ–আত্মার সমন্বয়ে গঠিত নৈতিক জীব। শুধু জ্ঞান বা প্রযুক্তি নয়, নৈতিকতা ছাড়া শিক্ষা ব্যর্থ। দেহ বাহন, আত্মা পরিচালক।
সারাংশ: মানুষ নৈতিক-সত্তা, দেহ–আত্মা ভারসাম্য জরুরি।
৬) দেহ–আত্মার দ্বন্দ্ব
শুধু ভোগবাদ (দেহ) বা শুধু বৈরাগ্য (আত্মা) অমানবিক। ইসলাম মধ্যপথ নির্দেশ করে—প্রবৃত্তি ও বিবেকের সমন্বয়।
সারাংশ: শিক্ষা হবে প্রবৃত্তি–বিবেকের ভারসাম্যপূর্ণ।
৭) মানুষের উপযোগী শিক্ষা
কেবল ভৌত বা কেবল আধ্যাত্মিক শিক্ষা যথেষ্ট নয়। নৈতিক সীমার ভেতরে আধুনিক জ্ঞান প্রয়োগ করতে শেখায় এমন শিক্ষাই সঠিক।
সারাংশ: উপযোগী শিক্ষা = নৈতিকতা + জ্ঞান।
৮) জাতীয় আদর্শ ও শিক্ষা
প্রতিটি রাষ্ট্র শিক্ষায় নিজস্ব আদর্শ প্রতিফলিত করে। আদর্শ ছাড়া শিক্ষা অর্থহীন।
সারাংশ: শিক্ষা গড়ে আদর্শের মানুষ।
৯) বাংলাদেশের জাতীয় আদর্শ—ইসলাম
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ইতিহাস, সংবিধান ও জনমত অনুযায়ী জাতীয় আদর্শ ইসলাম। সেক্যুলার ধারাকে জনগণ ও আইন প্রত্যাখ্যান করেছে।
সারাংশ: জাতীয় আদর্শ ইসলাম।
১০) শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য
ইসলামী মূল্যবোধে গড়ে তোলা নাগরিক, যারা আধুনিক জ্ঞানে দক্ষ হবে।
সারাংশ: আধুনিক দক্ষতা + ইসলামী নৈতিকতা।
১১) প্রধান অন্তরায়: দ্বিমুখী শিক্ষা
মাদ্রাসায় আধুনিক জ্ঞানের ঘাটতি, আধুনিক ধারায় ইসলামী চেতনার ঘাটতি। সমাধান: মেলবন্ধন।
সারাংশ: বিভক্ত শিক্ষা একতা ভাঙে।
১২) সংস্কারচেষ্টার সীমাবদ্ধতা
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ—বিভিন্ন কমিশন ধর্মকে কেবল “বিষয়” বানিয়েছে, পূর্ণ দর্শন নয়। ফলে বাস্তবায়ন হয়নি।
সারাংশ: কমিশন রিপোর্ট আছে, পরিবর্তন হয়নি।
১৩) আধুনিক শিক্ষার গলদ
পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে জ্ঞান শেখানো হয়, পরে দীনিয়াত যোগ করলে তা বেমানান লাগে।
সারাংশ: সেক্যুলার কোর + ধর্মীয় অ্যাড-অন = দ্বিধা।
১৪) ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা কী চায়?
শুধু নামাজ–রোজা নয়; অর্থনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান—সবকিছুতে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত শিক্ষা।
সারাংশ: ইসলাম = পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা
১৫) ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
১) দীন–দুনিয়া মিলিত।
২) সব জ্ঞান ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে।
৩) ইসলামী পরিবেশ।
৪) উচ্চশিক্ষায় তুলনামূলক শ্রেষ্ঠতা।
৫) কুরআন–হাদিস–ফিকহে দক্ষতা।
সারাংশ: বিষয়বস্তু + পরিবেশ + উৎসে দক্ষতা।
১৬) বাস্তব রূপ (ক) দীন–দুনিয়া একীভূত
ধর্মীয়–পার্থিব আলাদা নয়। সব কাজ ইসলামী সীমায় হলে ইবাদত।
সারাংশ: শিক্ষা-জীবন একক ব্যবস্থা।
১৭) বাস্তব রূপ (খ) পরোক্ষ পদ্ধতি
শিক্ষায় সরাসরি নীতিশিক্ষা নয়; বিষয়ভিত্তিক উদাহরণে ইসলামী নীতি শেখানো। যেমন: সুদের অঙ্ককে যুলুম হিসেবে উপস্থাপন।
সারাংশ: বিষয়ভিত্তিক ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি।
১৮) বাস্তব রূপ (গ) পরিবেশ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নামাজ, পর্দা, নৈতিকতা—এসব অনুশীলন থাকতে হবে।
সারাংশ: পরিবেশ গড়ে চরিত্র।
১৯) বাস্তব রূপ (ঘ) উচ্চশিক্ষা
উচ্চশিক্ষায় ইসলামী বনাম পাশ্চাত্য দর্শনের তুলনা—ইসলামের যুক্তিগত শ্রেষ্ঠতা প্রমাণ করা।
সারাংশ: উচ্চশিক্ষায় ইসলামী কোর অপরিহার্য।
২০) উৎসে দক্ষতা
কুরআন–হাদিস–ফিকহে গভীর জ্ঞান থাকা জরুরি।
সারাংশ: উৎসে দক্ষতা ছাড়া শিক্ষার গভীরতা আসে না।
২১) শিক্ষকের ভূমিকা
শিক্ষকই আদর্শ। বইয়ের চেয়ে শিক্ষকের চরিত্র বড়।
সারাংশ: শিক্ষকই আসল কারিকুলাম।
২২) আধুনিক শিক্ষা-বিজ্ঞান ব্যবহার
আধুনিক টুলস (টেকনোলজি, গবেষণা) ইসলামী শিক্ষায় কাজে লাগাতে হবে।
সারাংশ: আধুনিক টুলস ইসলামী নীতিতে কাজে লাগান।
২৩) উপসংহার
পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সম্ভব, তবে ছোট ছোট মডেল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। “ইসলামই বাঁচিয়েছে, ইসলামই বাঁচাবে”—এই আশাবাদে সমাপ্তি।
সারাংশ: ছোট মডেল থেকে জাতীয় রূপায়ণ।
• পুরো বইয়ের সামারি:
সমস্যা: দ্বিমুখী শিক্ষা ও আদর্শশূন্য দৃষ্টি।
সমাধান: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে দীন–দুনিয়া একীভূত শিক্ষা, পরিবেশ-নির্ভর চরিত্রগঠন, উৎসে দক্ষতা ও আধুনিক টুলসের সৃজনশীল ব্যবহার।