Close

Tuesday, June 7, 2022

অবৈধ হারাম সম্পর্ক - ইমাম হোসাইন

খুবই প্রশান্তির সাথে মাগরিবের নামাজ শেষ করলেন রহিম মিয়া। মসজিদ থেকে বাহির হতে ডান পা আগবাড়াতেই মনে হলো ডান পা দেয়াতো সুন্নাহর খেলাফ, তাই ওহ! বলেই বাম পা দিয়ে দোয়া পড়লেন "আল্লাহুম্মা ইন্নি আসয়ালুকা মিন ফাদলিক"।

শুক্রবার হওয়ায় কোন কাজ না থাকাতে মসজিদ থেকে বের হয়ে কলিম মিয়ার দোকানে যায় চাখেতে। দোকানে গিয়ে দেখে কলিম মিয়া নেই তার ছেলে দোকানে বসে অশ্লীল বিভিন্ন গান চালাচ্ছে। তা দেখে রহিম মিয়া ঐখানে না বসে আবু মিয়ার দোকানে যায়। সেখানে বসে চা পান করছিলেন আর আবু মিয়াকে বললেন, " দেখছো মিয়া, এই মাগরিবের সময় সবাই নামাজ পড়ে বাহির হচ্ছে আর রহিম মিয়ার ছেলেটা দোকানের মধ্যে কিসব উলটা পালটা গান চালাচ্ছে। কলিম মিয়া ছেলেটারে আর মানুষ করতে পারলোনা, দ্বীনধর্ম শিখাতে পারলোনা।"

দোকানদার আবু মিয়া সুর মিলিয়ে বললো, "কি বলমু ভাই সব পোলাপাইন এরহম।" রহিম মিয়া আবু মিয়ার কথায় সম্মতি দিয়ে বললেন, "হুম! তুমি ঠিকই বলছো, তবে একটু আধটু শাসনে রেখে শিখাতে পারলে শিখবো।"

কথার মাঝেই রফিক এসে সালাম দিয়ে কিছু খরচ করে প্রস্থান করলে রহিম মিয়া বলে উঠলো, "এই দেখছো, আক্তার মিয়ার ছেলে যথেষ্ট ভদ্র নামাজ পড়ে, আলহামদুলিল্লাহ। শিখাতে পারলে শিখবে আবু মিয়া..."

এই কথাবার্তা শেষ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছে আর চিন্তা করছে কাজ যেহেতু নেই বাসায় যাই কিছুক্ষন কোরআন তিলাওয়াত করবে। চিন্তা করতে করতে বাসায় এসে স্ত্রীকে ডাক দিয়া বলেন "কই গেছো?" 

স্ত্রী সামনে আসাতে বললো আমার কোরআন শরীফটা  দাও, একটু তিলাওয়াত করবো। বলেই চেয়ারে বসে স্ত্রীর দিকে তাকাতেই দেখলো স্ত্রীর চোখে পানি, মুখে নেই আওয়াজ, চেহারায় ভয়! রহিম মিয়া অনেকটা নরম এবং শান্ত মেজাজের হওয়াতে খুব বেশী এক্সাইটেড না হয়ে বললো কি হইছে বলো, আর তুমি এমন করতাছো কেন?

"গোলাপি কই?" বলে ডাক দিলো নিজের সবচাইতে কলিজার টুকরো একমাত্র মেয়েকে। কোন সাড়া শব্দ নেই, পিনপন নিরব বাসা। ঠিক তখনই রহিম মিয়ার স্ত্রী হাউমাউ করে কেঁদে যে সংবাদটি দিলো তা শুনতে রহিম মিয়া একেবারেই অপ্রস্তুত, শুনার সাথে সাথে অনেকটা পাথর হয়ে কোন প্রকার নড়াচড়া ছাড়া বসে পড়লেন।চোখ দিয়ে  টপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো পাঞ্জাবীতে।বুকফেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। হাত-পা যেন শীতল হয়ে অবশ হয়ে যাচ্ছে।

এমন সময় ভাবছিলো, যে সন্তানকে এতো ভালোবাসা আর আদর যত্নে মানুষ করলাম, যাকে নিয়ে জীবনের  সবকিছু, আজ সে সন্তান হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে বাড়ি থেকে পালালো পিতামাতার সিদ্ধান্তে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে। আহ! এই সংবাদ শুনার আগে যদি আমার মরণ হতো কতইনা ভালো হতো!

রহিম মিয়া আর সারারাত ঘুমোতে পারেনি। সকালে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেনা লোকচক্ষুর লজ্জায়।গতকালকেও যে রহিম মিয়া খুবই সাচ্ছন্দে মসজিদে গেলো, দোকানে গেলো। আজ বের হতেই চাপাকান্না আর লজ্জায় বের হতে পারছেনা।

ভাবতেছে আহ! এই সন্তান যদি জন্ম না দিতাম, তাহলে কতইনা ভালো হতো...


➡️ কাল্পনিক একজন রহিম মিয়ার কথা বললেও এরকম হাজারো রহিম মিয়ারা সন্তানদের হারাম আর অবৈধ সম্পর্কের বলি হচ্ছে, স্ট্রোক করছে, সারাজীবনের অপমানের বোঝা মাথায় নিচ্ছে। এই কষ্টে মারাও যাচ্ছে অথচ যার জন্য সারা জীবনের পুঁজি বিলীন করছে।


↘️ চিন্তা করা দরকার এই হারাম সম্পর্ক কোন পরিবার, কোন সমাজের জন্য কল্যানকর নয়। বরং এটি একটি অন্যায় অশ্লীল সমাজ গঠনের দিকে দাবিত হচ্ছে। তৈরী করছে বিকৃত চিন্তার একটা প্রজন্ম যাদের কাছে নেই কোন পিতা-মাতা, ভাই-বোন এর সম্মান; নাই সামাজিকতা আর আত্মসম্মানবোধ। ভালোবাসা আর প্রেমের নামে নিকৃষ্ট চিন্তার কিছু কলুষিত হাইওয়ান যারা বিবেক নয় বরং তাদের প্রবৃত্তি কুচিন্তার কাছে নিজেদের বিক্রি করে দিচ্ছে। চিন্তা করা যায়? একটি হারাম অবৈধ সম্পর্কের মাঝে কিভাবে ভালোবাসা, সম্মান, থাকতে পারে যেটা আসেই শয়তানের কুচিন্তা মস্তক হতে। যা জাহেলিয়াতের নষ্ট লেবুর রস সিক্তিতো চলচিত্রের পতিতাদের দেখানো কর্ম। যা শুধু তৈরী করে নষ্ট আসক্তির বিকৃত মানষিকতা।


↘️ ভালোবাসাতো থাকবে আমার রবের সাথে, রাসুলের সাথে। থাকবে নিজের পিতা-মাতা, ভাই-বোনের সাথে। প্রেমতো হবে নিজের বৈধ স্ত্রীর সাথে। যা হলো পবিত্র জান্নাতের মৃদু হাওয়ার সুভাষ।

এসব হারাম সম্পর্ক তৈরী করে, "বিকৃত চিন্তার প্রজন্ম অসামাজিক প্রজন্ম, অবাধ্য প্রজন্ম, ইসলামহীন প্রজন্ম।"

আল্লাহ আমাদের এসব বিকৃত চিন্তার প্রজন্ম থেকে হেফাজত করুন, আমীন।




লেখক:
মোঃ ইমাম হোসাইন
ইসলামী চিন্তাবিদ ও সংগঠক।

4 Comments:

Rumon said...

আল্লাহ আপনার লেখার পরিধিকে আরো বৃদ্ধি করে দিক প্রিয় ভাই

Imam Hossain Arman said...

আমীন, ইয়া রাব্বুল আ'লামীন।

Anonymous said...

উনি একজন ভালো লেখক,পড়তেই ভালো লাগে।

Imam Hossain Arman said...

জাযাকাল্লাহ, সবসময় এভাবে পাশে থেকে লেখককে উৎসাহিত করবেন।