Close

Wednesday, June 8, 2022

আধুনিক রাষ্ট্রে ইসলামী দলের শরীয়াহর ভিত্তি - ইমাম হোসাইন



আধুনিক জাতি রাষ্ট্রে যে কোন মত আর পথকে প্রতিষ্ঠিত করতে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই নিয়মাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলা হয়। আর গণতান্ত্রিক মতবাদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেকোনো মত আর পথকে প্রতিষ্ঠিত করতে দলীয় রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলই প্রধান এবং মুখ্য হাতিয়ার। জাতি রাষ্ট্রসমূহে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়ে থাকে রাজনৈতিক দলসমুহের নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। জনমতের সংখ্যাগরিষ্ঠতার আলোকেই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসীন হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আধুনিক জাতি রাষ্ট্রে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে রাজনৈতিক দল তৈরী বা দলীয় রাজনীতি কতটুকু শরীয়াহভিত্তিক?

এ প্রশ্নের উত্তরে একটা গোষ্ঠী এককথায় উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে যে রাসুল (স) এভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেনি তাই এটি বিদয়াত। জানার বিষয় হতে পারে আদৌ কি দলীয় রাজনীতি বিদয়াত?

প্রসঙ্গত দলীয় রাজনীতিকে বিদয়াত বলার আগেই বিদয়াতের সংজ্ঞা বা মুলনীতিকে জানা একান্ত আবশ্যক।

বিদয়াত-হলো দ্বীন বা ইসলামের মধ্যে (ভিতরে) নতুন কোন জিনিস আবিষ্কার করা বা প্রতিষ্ঠা করা । সে অর্থে বলা যায় যে, যদি কেউ আল্লাহর রাসুলের নির্দেশিত সুন্নাহর খেলাফ নামাজ, রোজা, হজ্ব ইত্যাদি আমলের ভিতরে কেউ যদি বৃদ্ধি বা হ্রাস করে তা হলো বিদয়াত।কিন্তু এই আমল গুলো পালনে সুবিধার জন্য কারুকার্য খচিত এসি মসজিদ তৈরি করে, ঘড়ি ব্যাবহার করে বা যাতায়াতে গাড়ী কিংবা, বিমান ইত্যাদি ব্যবহার করে তাহলে তা বিদয়াত হবেনা। যদিও রাসুল ﷺ এগুলো ব্যবহার করেনি।

মুলনীতি হলো আমলের মধ্যে হ্রাস বা বৃদ্ধি হলে তা বিদয়াত কিন্তু আমলের সুবিধার জন্যে হলে তা বিদয়াত নয়।

সে অর্থে দলীয় রাজনীতি যদিও আল্লাহর রাসুলের যুগে ছিলোনা কিন্তু আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য(দ্বীনকে জাতি রাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করার জন্য) দলীয় রাজনীতিকে ব্যবহার করা যায়। উপরোক্ত মুলনীতির আলোকে যা বিদয়াতের পর্যায়ে পড়েনা।

বিদয়াত প্রশ্নের বাহিরে গিয়ে আরো একটি প্রশ্ন থেকে যায় যে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ইসলামি দলের গনতন্ত্রকে ব্যবহার কতটুকু জায়েজ হতে পারে? যেখানে ইসলাম তথা শরিয়াহর দৃস্টিভঙ্গি থেকে গনতন্ত্র হালাল এবং হারামে মিশ্রিত। ফলে এটাকি গ্রহণ করা যায়?

এক্ষেত্রে শরীয়াহর মুলনীতি হলো;
'ইসলামের হালাল এবং হারামের মুলনীতি হলো জীবন পরিচালনায় আনুষ্ঠানিক ইবাদতে সমস্ত ইবাদতই হারাম শুধুমাত্র ঐ ইবাদতই জায়েজ যে ইবাদত আল্লাহ আল্লাহর রাসুল সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যা কোরআন এবং হাদীসের নস দিয়ে প্রমানিত। বিপরীতে ইবাদতের বাইরে অনানুষ্ঠানিক জীবন পরিচালনায় চলা-ফেরা, খাওয়া-দাওয়া, কথাবার্তা ইত্যাদি মোয়ামেলাত মোয়াশারাতের জায়গা থেকে সবকিছুই হালাল। শুধুমাত্র হারাম তা-ই যা আল্লাহ এবং তার রাসুল কোরআন এবং সুন্নাহর নস দ্বারা নিষিদ্ধ করেছেন।'

অতএব দলীয় রাজনীতিতে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক ইবাদতের মধ্যে পড়েনা বরং তা অনানুষ্ঠানিক জীবন পরিচালনা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার একটা মতবাদ যা মূলনীতির আলোকে এককথায় গনতন্ত্রকে হারাম বলা যায়না।

বরং তার মাধ্যে যে বিষয় গুলো ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক সেগুলো বাদ দিয়ে যেগুলো সাংগর্ষিক নয় সেগুলোকে হালালিয়তের জায়গা থেকে ইসলামের জন্য ব্যাবহার করা যায়। আর আধুনিক এই জাতি রাষ্ট্রে দলীয় রাজনীতিতে ইসলামি দলগুলো এই মুলনীতির আলোকে সাংঘর্ষিক গুলোকে বাদ দিয়ে গনতন্ত্রের বাকি হালালিয়ত গুলো দিয়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে( আধুনিক উপকরণ হিসেবে) ব্যবহার করলে যা শরিয়াহর হুরমতের মধ্যে পড়ে না। বরং তা দাওয়াতে হিকমতের অন্যতম পন্থা হতে পারে।

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় দলীয় রাজনীতিতে একাধিক দল কি ইসলামকে বিভক্ত করে নাকি দলাদলি করে?

বলতে গেলে একাধিক ইসলামী দল দলাদলি নয় বরং দ্বীনের বৃহত্তর ইসলাম প্রতিষ্ঠায় পরস্পর সহযোগী।এছাড়াও একেকটা ইসলামি দল জনগনের বৃহৎ একেকটা অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। বরং দ্বীনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ছোটখাট বিষয় নিয়ে ইফতিরাকই হলো দলাদলি। যেমন হাত বাধা, আমীন বলা, নুর না মাটি এছাড়া আকিদার ফিরকা ইত্যাদি বরং দাওয়াতে দ্বীনের জন্য একহাজার দল হলেও প্রত্যেকে নিজ নিজ তরবিয়াতের আলোকে দাওয়াত প্রদান বৃহত্তর ক্ষেত্রে কল্যাণকর।

সর্বোপরি আল্লাহর রাসুলের এই হাদীসটিও মনে রাখা দরকার।
’যে লড়াই করে আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য, সেই আল্লাহর পথে জিহাদ করে।’(তারগীব ওয়াত তাহরীব)

আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য হালালিয়াতের মধ্যে থেকে যত প্রচেষ্টা আছে সবগুলোই আল্লাহর পথ।


লেখক:
মাওলানা ইমাম হোসাইন
ইসলামী চিন্তাবিদ ও সংগঠক
Facebook Id-(Click Here)

3 Comments:

Anonymous said...

মাশা আল্লাহ

Imam Hossain Arman said...

জাযাকাল্লাহ

Anonymous said...

মাশা-আল্লাহ