সুন্দর কথা সুন্দর মানুষের পরিচায়ক, অসুন্দর/কুৎসিত কথা খারাপ মানুষের পরিচায়ক
🔷 সুন্দর কথাঃ
রাসুল ﷺ বলেন,"খেজুর দানার একটি টুকরা দিয়ে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। যদি তা না পাও, তবে সুন্দর কথার দ্বারা আত্মরক্ষা কর।" -বুখারী।
রাসুল ﷺ বলেন, জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বালাখানা আছে যার ভিতর থেকে বাহিরে দেখা যায়, এবং বাহির থেকে ভিতরে দেখা যায়।
এক বেদুইন প্রশ্ন করলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ সেটি কার জন্য? রাসুল ﷺ বলেন, "যে ব্যক্তি সুন্দর কথা বলে, মানুষকে খাবার খাওয়ায়, দীর্ঘ রোজা রাখে এবং যখন মানুষ ঘুমায় এমন সময় নামাজ আদায় করে।"
আলী রা. বলেন, "তোমরা মানুষকে অর্থ দিয়ে তুষ্ট করতে পারবেনা, বরং তোমরা তাদেরকে তোমাদের চরিত্র ও সুন্দর কথার দ্বারা তুষ্ট কর।"
শেখ সাদি র. বলেন, "সুন্দর ও নরম ভাষা হলো বৈধ যাদু।"
জনৈক মনিষী বলেন, "নরম এবং সুন্দর আচরন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে লুকিয়ে থাকা বিদ্বেষকে ধৌত করে দেয়।"
বিশেষতঃ সুন্দর কথা বলতে বুঝায় "মানুষের সাথে এমন কথা বলা, যে কথার মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয় এবং ভালো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
যে কথার দ্বারা কল্যানের পথ প্রশস্থ হয়, অকল্যানের পথ রুদ্ধ হয় তাকে বলে সুন্দর কথা।
সুন্দর কথা মানুষের মাঝে কল্যান, ভালোবাসা, সোহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং আন্তরিকতার সম্পর্ক তৈরী করে।
সুন্দর কথা হলো উত্তম দাওয়াত। এটার চেয়ে বড় দাওয়াতি চরিত্র হতে পারেনা। সুন্দর কথার দ্বারা নিজের চরম শত্রুকে আপন করা যায়। যেমন জনৈক ইহুদি মসজিদে নববীর সামনে এসে রাসুল ﷺ কে ডাকতেছিলেন, "হে মুহাম্মদ, হে মুহাম্মদ বলে। তখন রাসুল ﷺ কাছে আসলে ইহুদি রাসুল(স) এর জামার কলার মুডিয়ে ধরে বলে, আমার পাওনা টাকা কই।
তখন সাহাবা কেরাম তা দেখে রাগে ফেটে পড়ার অবস্থা! এমন অবস্থা তৈরী হয়েছিলো যে, ইহুদিকে এখনই কিছু করে ফেলবে। কিন্তু মানবতার নবী ﷺ বললেন,
"হে আল্লাহর বান্দা, তোমার টাকাতো আজকে দেওয়ার কথা না। আগামী বুধবার দেওয়ার কথা।"
তখন লোকটি রাসুলের সুন্দর ও শালীন ভাষা দেখে ইসলাম গ্রহন করে। আর বলে, আমি এমনই চরিত্র পড়েছি তাওরাতে আখেরী নবীর বিষয়ে। সুবহানআল্লাহ!
ইবনুল আস রা. বলেন, রাসুল ﷺ সমাজের নিকৃষ্টতম ব্যক্তির সাথেও পরিপূর্ন মনোযোগ সহকারে তার দিকে মুখ করে নম্র ভাষায় কথা বলতেন।
রাসুল ﷺ বলেন "কিয়ামতের দাড়িপাল্লায় উত্তম আচরনের চেয়ে বেশী ভারী কোন আমল হবেনা। আর উত্তম আচরনের অধিকারী ব্যক্তি তার আচরনের দ্বারাই তাহাজ্জুদ ও নফল রোজা পালনকারীর মর্যাদা পাবে। -তিরমীজি
এমনকি রাসুল ﷺ বলেন, "একটা সুন্দর কথার দশগুন সাওয়াব লিখা হয়। অন্যত্র বলেন, একটা সাদকার সাওয়াবও লিখা হয়।"
🔶 খারাপ কথাঃ
অশ্লীল অসুন্দর ভাষা ব্যবহারকারীর ব্যাপারে রাসুল (স)বলেন, "যারা অশ্লীল কথা বলে এবং নির্লজ্জ কথা বলে তারা প্রকৃত মুমিন নয়।"
খারাপ কথা সত্য হলেও বলা উচিত না, কারন বার বার বললে এটা অভ্যসে পরিনত হয়ে যায়।
রাসুল ﷺ বলেন, শয়তানকে অভিসম্পাত করিওনা, বরং তার অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাও।
মুলত হলো খারাপ কথা এমন, যা সত্য হলেও বলা উচিত না।
খারাপ কথা গুলো হলো, "মিথ্যা বলা, গীবত করা, চোগলখোরী, অপবাদ দেওয়া, অশ্লীলতা ছড়ানো, ঝগড়া করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, অপমান করা ইত্যাদি।"
এই গুলো এমন বদগুন যে, যা একজন মানুষকে কালো এবং কুৎসিত করে তোলে। আর জাহান্নামী মানুষগুলোর অধিকাংশই হবে কথার অসংলগ্নতা এবং বিচ্যুতির কারনে।কারণ, আল্লাহ কখনো খারাপ কথা পছন্দ করেন না।
তাই সালাম বিন দীনার বলেছিলেন, মানুষ পা ফেলতে যতটা না সতর্ক হওয়া উচিৎ তার চেয়ে বেশী মুখ খুলতে সতর্ক হওয়া উচিৎ।
ইবনে তাইমিয়া র. বলেন, "আশ্চর্য ব্যাপার হলো, মানুষ সহজেই হারাম উপার্জন, জুলুম, জিনা, চুরি, মদ্যপান, কু-দৃষ্টি ইত্যাদি গুনাহ থেকে বেচে থাকতে পারে, কিন্তু জবানের অসংযত নড়াচড়া বন্ধ করা তার জন্য দুঃসাধ্য ব্যাপার। আপনি এমন অনেক মানুষ দেখবেন যারা দ্বীনদার, দুনিয়াবিমুখ ও ইবাদত গুজার হিসেবে সমাজে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে, কিন্তু তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তা আল্লাহ তা'আলাকে অসন্তোষ করে অথচ তাদের এদিকে কোন খেয়ালই নেই।কখনো এমন কথা বলে যা তাদের ছুড়ে দেয় গোমরাহির অতল গহ্বরে।আপনি এমন লোকও দেখবেন যারা অন্যায় অশ্লীলতা থেকে নিরাপদ দুরত্বে বাস করে; কিন্তু তার জবান অবিরাম মানুষের ইজ্জতহানী করছে।কি জীবিত কি মৃত কেউ তার জঘন্য আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এবং কি সে অনুধাবন ও করেনা!
সুতরাং সুন্দর কথা সুন্দর মানুষের পরিচায়ক, অসুন্দর/কুৎসিত কথা খারাপ মানুষের পরিচায়ক।
(চলবে)
লেখক:
ইমাম হোসাইন
রাসুল ﷺ বলেন,"খেজুর দানার একটি টুকরা দিয়ে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। যদি তা না পাও, তবে সুন্দর কথার দ্বারা আত্মরক্ষা কর।" -বুখারী।
রাসুল ﷺ বলেন, জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বালাখানা আছে যার ভিতর থেকে বাহিরে দেখা যায়, এবং বাহির থেকে ভিতরে দেখা যায়।
এক বেদুইন প্রশ্ন করলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ সেটি কার জন্য? রাসুল ﷺ বলেন, "যে ব্যক্তি সুন্দর কথা বলে, মানুষকে খাবার খাওয়ায়, দীর্ঘ রোজা রাখে এবং যখন মানুষ ঘুমায় এমন সময় নামাজ আদায় করে।"
আলী রা. বলেন, "তোমরা মানুষকে অর্থ দিয়ে তুষ্ট করতে পারবেনা, বরং তোমরা তাদেরকে তোমাদের চরিত্র ও সুন্দর কথার দ্বারা তুষ্ট কর।"
শেখ সাদি র. বলেন, "সুন্দর ও নরম ভাষা হলো বৈধ যাদু।"
জনৈক মনিষী বলেন, "নরম এবং সুন্দর আচরন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে লুকিয়ে থাকা বিদ্বেষকে ধৌত করে দেয়।"
বিশেষতঃ সুন্দর কথা বলতে বুঝায় "মানুষের সাথে এমন কথা বলা, যে কথার মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয় এবং ভালো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
যে কথার দ্বারা কল্যানের পথ প্রশস্থ হয়, অকল্যানের পথ রুদ্ধ হয় তাকে বলে সুন্দর কথা।
সুন্দর কথা মানুষের মাঝে কল্যান, ভালোবাসা, সোহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং আন্তরিকতার সম্পর্ক তৈরী করে।
সুন্দর কথা হলো উত্তম দাওয়াত। এটার চেয়ে বড় দাওয়াতি চরিত্র হতে পারেনা। সুন্দর কথার দ্বারা নিজের চরম শত্রুকে আপন করা যায়। যেমন জনৈক ইহুদি মসজিদে নববীর সামনে এসে রাসুল ﷺ কে ডাকতেছিলেন, "হে মুহাম্মদ, হে মুহাম্মদ বলে। তখন রাসুল ﷺ কাছে আসলে ইহুদি রাসুল(স) এর জামার কলার মুডিয়ে ধরে বলে, আমার পাওনা টাকা কই।
তখন সাহাবা কেরাম তা দেখে রাগে ফেটে পড়ার অবস্থা! এমন অবস্থা তৈরী হয়েছিলো যে, ইহুদিকে এখনই কিছু করে ফেলবে। কিন্তু মানবতার নবী ﷺ বললেন,
"হে আল্লাহর বান্দা, তোমার টাকাতো আজকে দেওয়ার কথা না। আগামী বুধবার দেওয়ার কথা।"
তখন লোকটি রাসুলের সুন্দর ও শালীন ভাষা দেখে ইসলাম গ্রহন করে। আর বলে, আমি এমনই চরিত্র পড়েছি তাওরাতে আখেরী নবীর বিষয়ে। সুবহানআল্লাহ!
ইবনুল আস রা. বলেন, রাসুল ﷺ সমাজের নিকৃষ্টতম ব্যক্তির সাথেও পরিপূর্ন মনোযোগ সহকারে তার দিকে মুখ করে নম্র ভাষায় কথা বলতেন।
রাসুল ﷺ বলেন "কিয়ামতের দাড়িপাল্লায় উত্তম আচরনের চেয়ে বেশী ভারী কোন আমল হবেনা। আর উত্তম আচরনের অধিকারী ব্যক্তি তার আচরনের দ্বারাই তাহাজ্জুদ ও নফল রোজা পালনকারীর মর্যাদা পাবে। -তিরমীজি
এমনকি রাসুল ﷺ বলেন, "একটা সুন্দর কথার দশগুন সাওয়াব লিখা হয়। অন্যত্র বলেন, একটা সাদকার সাওয়াবও লিখা হয়।"
🔶 খারাপ কথাঃ
অশ্লীল অসুন্দর ভাষা ব্যবহারকারীর ব্যাপারে রাসুল (স)বলেন, "যারা অশ্লীল কথা বলে এবং নির্লজ্জ কথা বলে তারা প্রকৃত মুমিন নয়।"
খারাপ কথা সত্য হলেও বলা উচিত না, কারন বার বার বললে এটা অভ্যসে পরিনত হয়ে যায়।
রাসুল ﷺ বলেন, শয়তানকে অভিসম্পাত করিওনা, বরং তার অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাও।
মুলত হলো খারাপ কথা এমন, যা সত্য হলেও বলা উচিত না।
খারাপ কথা গুলো হলো, "মিথ্যা বলা, গীবত করা, চোগলখোরী, অপবাদ দেওয়া, অশ্লীলতা ছড়ানো, ঝগড়া করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, অপমান করা ইত্যাদি।"
এই গুলো এমন বদগুন যে, যা একজন মানুষকে কালো এবং কুৎসিত করে তোলে। আর জাহান্নামী মানুষগুলোর অধিকাংশই হবে কথার অসংলগ্নতা এবং বিচ্যুতির কারনে।কারণ, আল্লাহ কখনো খারাপ কথা পছন্দ করেন না।
তাই সালাম বিন দীনার বলেছিলেন, মানুষ পা ফেলতে যতটা না সতর্ক হওয়া উচিৎ তার চেয়ে বেশী মুখ খুলতে সতর্ক হওয়া উচিৎ।
ইবনে তাইমিয়া র. বলেন, "আশ্চর্য ব্যাপার হলো, মানুষ সহজেই হারাম উপার্জন, জুলুম, জিনা, চুরি, মদ্যপান, কু-দৃষ্টি ইত্যাদি গুনাহ থেকে বেচে থাকতে পারে, কিন্তু জবানের অসংযত নড়াচড়া বন্ধ করা তার জন্য দুঃসাধ্য ব্যাপার। আপনি এমন অনেক মানুষ দেখবেন যারা দ্বীনদার, দুনিয়াবিমুখ ও ইবাদত গুজার হিসেবে সমাজে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে, কিন্তু তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তা আল্লাহ তা'আলাকে অসন্তোষ করে অথচ তাদের এদিকে কোন খেয়ালই নেই।কখনো এমন কথা বলে যা তাদের ছুড়ে দেয় গোমরাহির অতল গহ্বরে।আপনি এমন লোকও দেখবেন যারা অন্যায় অশ্লীলতা থেকে নিরাপদ দুরত্বে বাস করে; কিন্তু তার জবান অবিরাম মানুষের ইজ্জতহানী করছে।কি জীবিত কি মৃত কেউ তার জঘন্য আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এবং কি সে অনুধাবন ও করেনা!
সুতরাং সুন্দর কথা সুন্দর মানুষের পরিচায়ক, অসুন্দর/কুৎসিত কথা খারাপ মানুষের পরিচায়ক।
(চলবে)
লেখক:
ইমাম হোসাইন
ইসলামী চিন্তাবিদ ও সংগঠক
0 Comments:
Post a Comment