দারসুল কুরআন | সূরা আল ইমরান | ১৩৩-১৪৮ নং আয়াত
মূল আয়াত ও বাংলা অনুবাদ:
আয়াত: ১৩৩
وَ سَارِعُوْۤا اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ١ۙ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِیْنَۙ
দৌঁড়াও তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে, যা এমন সব আল্লাহভীরু লোকদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।
আয়াত: ১৩৪
الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الْكٰظِمِیْنَ الْغَیْظَ وَ الْعَافِیْنَ عَنِ النَّاسِ١ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَۚ
যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ–ত্রুটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।
আয়াত: ১৩৫
وَ الَّذِیْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْۤا اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللّٰهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْ١۪ وَ مَنْ یَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللّٰهُ١۪۫ وَ لَمْ یُصِرُّوْا عَلٰى مَا فَعَلُوْا وَ هُمْ یَعْلَمُوْنَ
আর যারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা কোন গোনাহের কাজ করে নিজেদের ওপর জুলুম করে বসলে আবার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়ে তাঁর কাছে নিজেদের গোনাহ খাতার জন্য মাফ চায় – কারণ আল্লাহ ছাড়া আর কে গোনাহ মাফ করতে পারেন – এবং জেনে বুঝে নিজেদের কৃতকর্মের ওপর জোর দেয় না,
আয়াত: ১৩৬
اُولٰٓئِكَ جَزَآؤُهُمْ مَّغْفِرَةٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ جَنّٰتٌ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا١ؕ وَ نِعْمَ اَجْرُ الْعٰمِلِیْنَؕ
এ ধরনের লোকদের যে প্রতিদান তাদের রবের কাছে আছে তা হচ্ছে এই যে, তিনি তাদের মাফ করে দেবেন এবং এমন বাগীচায় তাদের প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। সৎকাজ যারা করে তাদের জন্য কেমন চমৎকার প্রতিদান!
আয়াত: ১৩৭
قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُمْ سُنَنٌ١ۙ فَسِیْرُوْا فِی الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَیْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِیْنَ
তোমাদের আগে অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে। পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা (আল্লাহর বিধান ও হিদায়াতকে) মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।
আয়াত: ১৩৮
هٰذَا بَیَانٌ لِّلنَّاسِ وَ هُدًى وَّ مَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِیْنَ
এটি মানব জাতির জন্য একটি সুস্পষ্ট সতর্কবাণী এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশ।
আয়াত: ১৩৯
وَ لَا تَهِنُوْا وَ لَا تَحْزَنُوْا وَ اَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ
মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
আয়াত: ১৪০
اِنْ یَّمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهٗ١ؕ وَ تِلْكَ الْاَیَّامُ نُدَاوِلُهَا بَیْنَ النَّاسِ١ۚ وَ لِیَعْلَمَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ یَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَآءَ١ؕ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیْنَۙ
এখন যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, তাহলে এর আগে এমনি ধরনের আঘাত লেগেছে তোমাদের বিরোধী পক্ষের গায়েও। এ–তো কালের উত্থান-পতন, মানুষের মধ্যে আমি এর আবর্তন করে থাকি। এ সময় ও অবস্থাটি তোমাদের ওপর এ জন্য আনা হয়েছে যে, আল্লাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কে? আর তিনি তাদেরকে বাছাই করে নিতে চান, যারা যথার্থ (সত্য ও ন্যায়ের) সাক্ষী হবে -কেননা জালেমদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না
আয়াত: ১৪১
وَ لِیُمَحِّصَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ یَمْحَقَ الْكٰفِرِیْنَ
– এবং তিনি এই পরীক্ষার মাধ্যমে সাচ্চা মুমিনদের বাছাই করে নিয়ে কাফেরদের চিহ্নিত করতে চাইছিলেন।
আয়াত: ১৪২
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَ لَمَّا یَعْلَمِ اللّٰهُ الَّذِیْنَ جٰهَدُوْا مِنْكُمْ وَ یَعْلَمَ الصّٰبِرِیْنَ
তোমরা কি মনে করে রেখেছো তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো আল্লাহ দেখেনইনি, তোমাদের মধ্যে কে তাঁর পথে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে প্রস্তুত এবং কে তাঁর জন্য সবরকারী।
আয়াত: ১৪৩
وَ لَقَدْ كُنْتُمْ تَمَنَّوْنَ الْمَوْتَ مِنْ قَبْلِ اَنْ تَلْقَوْهُ١۪ فَقَدْ رَاَیْتُمُوْهُ وَ اَنْتُمْ تَنْظُرُوْنَ۠
তোমরা তো মৃত্যুর আকাংখা করছিলে! কিন্তু এটা ছিল তখনকার কথা যখন মৃত্যু সামনে আসেনি। তবে এখন তা তোমাদের সামনে এসে গেছে এবং তোমরা স্বচক্ষে তা দেখছো।
আয়াত: ১৪৪
وَ مَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوْلٌ١ۚ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ١ؕ اَفَاۡئِنْ مَّاتَ اَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ١ؕ وَ مَنْ یَّنْقَلِبْ عَلٰى عَقِبَیْهِ فَلَنْ یَّضُرَّ اللّٰهَ شَیْئًا١ؕ وَ سَیَجْزِی اللّٰهُ الشّٰكِرِیْن
মুহাম্মাদ একজন রসূল বৈ তো আর কিছুই নয়। তার আগে আরো অনেক রসূলও চলে গেছে। যদি সে মারা যায় বা নিহত হয়, তাহলে তোমরা কি পেছনের দিকে ফিরে যাবে? মনে রেখো, যে পেছনের দিকে ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করবে না, তবে যারা আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকবে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন।
আয়াত: ১৪৫
وَ مَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تَمُوْتَ اِلَّا بِاِذْنِ اللّٰهِ كِتٰبًا مُّؤَجَّلًا١ؕ وَ مَنْ یُّرِدْ ثَوَابَ الدُّنْیَا نُؤْتِهٖ مِنْهَا١ۚ وَ مَنْ یُّرِدْ ثَوَابَ الْاٰخِرَةِ نُؤْتِهٖ مِنْهَا١ؕ وَ سَنَجْزِی الشّٰكِرِیْنَ
কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে। যে ব্যক্তি দুনিয়াবী পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে আমি তাকে দুনিয়া থেকেই দেবো। আর যে ব্যক্তি পরকালীন পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে সে পরকালের পুরস্কার পাবে এবং শোকরকারীদেরকে আমি অবশ্যি প্রতিদান দেবো।
আয়াত: ১৪৬
وَ كَاَیِّنْ مِّنْ نَّبِیٍّ قٰتَلَ١ۙ مَعَهٗ رِبِّیُّوْنَ كَثِیْرٌ١ۚ فَمَا وَ هَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ مَا ضَعُفُوْا وَ مَا اسْتَكَانُوْا١ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الصّٰبِرِیْنَ
এর আগে এমন অনেক নবী চলে গেছে যাদের সাথে মিলে বহু আল্লাহ ওয়ালা লড়াই করেছে। আল্লাহর পথে তাদের ওপর যেসব বিপদ এসেছে তাতে তারা মনমরা ও হতাশ হয়নি, তারা দুর্বলতা দেখায়নি এবং তারা বাতিলের সামনে মাথা নত করে দেয়নি। এ ধরনের সবরকারীদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন।
আয়াত: ১৪৭
وَ مَا كَانَ قَوْلَهُمْ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْا رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَ اِسْرَافَنَا فِیْۤ اَمْرِنَا وَ ثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكٰفِرِیْنَ
তাদের দোয়া কেবল এতটুকুই ছিলঃ “হে আমাদের রব! আমাদের ভুল –ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দাও। আমাদের কাজের ব্যাপারে যেখানে তোমার সীমালংঘিত হয়েছে, তা তুমি মাফ করে দাও। আমাদের পা মজবুত করে দাও এবং কাফেরদের মোকাবিলায় আমাদের সাহায্য করো।”
আয়াত: ১৪৮
فَاٰتٰىهُمُ اللّٰهُ ثَوَابَ الدُّنْیَا وَ حُسْنَ ثَوَابِ الْاٰخِرَةِ١ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَ۠
শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার পুরস্কারও দিয়েছেন এবং তার চেয়ে ভালো আখেরাতের পুরস্কারও দান করেছেন। এ ধরনের সৎকর্মশীলদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন।
সুরার পরিচয়:
নাম: আলে ইমরান। আয়াত সংখ্যা: ২০০। রুকু: ২০। আল কুরআনের সুরা ধারাবাহিকতায় ৩য় সুরা এটি।
আলোচ্য সূরার নামকরণ:
এই সূরার ৩৩ নং আয়াতে উল্লেখিত وَآلِ عِمْرَانَ "ইমরানের বংশধর” বাক্যটিকেই পরিচিতির জন্য চিহ্ন হিসেবে এই সূরার নামকরণ "আলে ইমরান" করা হয়েছে। কেননা, আল কুরআনে ১১৪ টি সূরার অধিকাংশ সূরাই শিরোনাম হিসেবে নয় বরং প্রতীকী বা চিহ্ন হিসেবেই নামকরণ করা হয়েছে। আর এই নামকরণ আল্লাহর নবী (সঃ) নিজে করেননি বরং আল্লাহই করেছেন যা অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও এ সূরাকে সূরা তাইবাহ, আল-কানুয, আল-আমান, আল-মুজাদালাহ, আল-ইস্তেগফার, আল-মানিয়াহ ইত্যাদি নাম দেয়া হয়েছে।
সূরা নাযিলের সময়কাল: আলোচ্য সূরাটি সর্বসম্মত মতে মাদানী। তবে একই সময় সম্পূর্ণ সূরাটি অবতীর্ণ হয়নি। চারটি ভাষণে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।
প্রথম ভাষণ : প্রথম ভাষণটি সূরার প্রথম থেকে শুরু করে চতুর্থ রুকুর দ্বিতীয় আয়াত পর্যন্ত চলেছে। ১নং আয়াত থেকে ৩২নং আয়াত পর্যন্ত। এই ভাষণটি সম্ভবত বদর যুদ্ধের সমসাময়িক সময় নাযিল হয়।
দ্বিতীয় ভাষণ : এই ভাষণটি সূরার চতুর্থ রুকুর তৃতীয় আয়াত থেকে শুরু হয়ে ষষ্ঠ রুকুর শেষ পর্যন্ত চলেছে। ৩২নং আয়াত থেকে ৬৩নং আয়াত পর্যন্ত। নবম হিজরীতে আল্লাহর নবীর নিকট নাজরানের প্রতিনিধি দলের আগমনের সময় এটি নাযিল হয়।
তৃতীয় ভাষণ : এই ভাষণটি সূরার সপ্তম থেকে শুরু করে দ্বাদশ রুকুর শেষ পর্যন্ত চলেছে। ৬৪নং আয়াত থেকে ১২০নং আয়াত পর্যন্ত। বিষয় অনুযায়ী প্রথম ভাষণের সাথে সাথেই এটি নাযিল হয় বলে মনে হয়।
চতুর্থ ভাষণ : এই ভাষণটি সূরার ত্রৈদশ রুকু থেকে শুরু করে সূরার শেষ পর্যন্ত চলেছে। ১২১নং আয়াত থেকে ২০০নং আয়াত পর্যন্ত। ওহুদ যুদ্ধের পর এটি নাযিল হয় বলে মনে হয়। (আল্লাহই বেশী ভাল জানেন)।
আজকের দারসের অংশটি চতুর্থ ভাষনে নাজিল হয়েছে।
সূরাটির বিষয়বস্তু বা আলোচ্য বিষয়ঃ এই সূরায় দু'টি দলকে সম্বোধন করা হয়েছে। একটি দল হলো 'আহলি কিতাব' তথা ইহুদী ও নাসারা (খৃষ্টান) এবং অপর দলটি হলো স্বয়ং রাসূল (সাঃ) এর অনুসারী মুসলমান। সূরার প্রথমে 'আহলি কিতাব' তথা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে জোরাল ভাষায় তাদের আকীদাগত বিভ্রান্তি এবং চারিত্রীক দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে রাসূল (সঃ) এবং আল কুরআনকে মেনে নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
অপর পক্ষে দ্বিতীয় দল আর্থাৎ রাসূল (সঃ) এর অনুসারী মুসলমানদেরকে শ্রেষ্ঠতম দলের মর্যাদার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের মহান দায়-দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সত্যের পতাকা বহন এবং বিশ্ব মানবতার সংস্কার ও সংশোধনের জন্য পূর্ববর্তী উম্মতদের ধর্মীয় ও চারিত্রীক অধঃপতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে তাদের পদাঙ্কনুসরণ না করে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
একটি সংস্কারবাদী দল হিসেবে তারা কিভাবে তাদের দায়-দায়িত্ব পালন করবে এবং যেসব আহলি কিতাব ও মুনাফিক নামধারী মুসলমানেরা আল্লাহর দ্বীনের পথে নানা প্রকারের বাধা সৃষ্টি করছে তাদের সাথে কি ধরণের আচরণ করতে হবে, তাদেরকে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ওহুদ যুদ্ধে মুসলমান দলটির মধ্যে যেসব দূর্বলতা দেখা দিয়েছিলো তার পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে বিরাজমান দূর্বলতাকে দূর করার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
আয়াতদ্বয়ের ব্যাখ্যা:
আয়াত: ১৩৩
وَ سَارِعُوْۤا اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ١ۙ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِیْنَۙ
দৌঁড়াও তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে, যা এমন সব আল্লাহভীরু লোকদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।
আয়াত: ১৩৪
الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الْكٰظِمِیْنَ الْغَیْظَ وَ الْعَافِیْنَ عَنِ النَّاسِ١ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَۚ
যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ–ত্রুটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।
আয়াত: ১৩৫
وَ الَّذِیْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْۤا اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللّٰهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْ١۪ وَ مَنْ یَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللّٰهُ١۪۫ وَ لَمْ یُصِرُّوْا عَلٰى مَا فَعَلُوْا وَ هُمْ یَعْلَمُوْنَ
আর যারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা কোন গোনাহের কাজ করে নিজেদের ওপর জুলুম করে বসলে আবার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়ে তাঁর কাছে নিজেদের গোনাহ খাতার জন্য মাফ চায় – কারণ আল্লাহ ছাড়া আর কে গোনাহ মাফ করতে পারেন – এবং জেনে বুঝে নিজেদের কৃতকর্মের ওপর জোর দেয় না,
আয়াত: ১৩৬
اُولٰٓئِكَ جَزَآؤُهُمْ مَّغْفِرَةٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ جَنّٰتٌ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا١ؕ وَ نِعْمَ اَجْرُ الْعٰمِلِیْنَؕ
এ ধরনের লোকদের যে প্রতিদান তাদের রবের কাছে আছে তা হচ্ছে এই যে, তিনি তাদের মাফ করে দেবেন এবং এমন বাগীচায় তাদের প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। সৎকাজ যারা করে তাদের জন্য কেমন চমৎকার প্রতিদান।
আয়াত: ১৩৭
قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُمْ سُنَنٌ١ۙ فَسِیْرُوْا فِی الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَیْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِیْنَ
তোমাদের আগে অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে। পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা (আল্লাহর বিধান ও হিদায়াতকে) মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।
আয়াত: ১৩৮
هٰذَا بَیَانٌ لِّلنَّاسِ وَ هُدًى وَّ مَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِیْنَ
এটি মানব জাতির জন্য একটি সুস্পষ্ট সতর্কবাণী এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশ।
আয়াত: ১৩৯
وَ لَا تَهِنُوْا وَ لَا تَحْزَنُوْا وَ اَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ
মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
আয়াত: ১৪০
اِنْ یَّمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهٗ١ؕ وَ تِلْكَ الْاَیَّامُ نُدَاوِلُهَا بَیْنَ النَّاسِ١ۚ وَ لِیَعْلَمَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ یَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَآءَ١ؕ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیْنَۙ
এখন যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, তাহলে এর আগে এমনি ধরনের আঘাত লেগেছে তোমাদের বিরোধী পক্ষের গায়েও। এ–তো কালের উত্থান-পতন, মানুষের মধ্যে আমি এর আবর্তন করে থাকি। এ সময় ও অবস্থাটি তোমাদের ওপর এ জন্য আনা হয়েছে যে, আল্লাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কে? আর তিনি তাদেরকে বাছাই করে নিতে চান, যারা যথার্থ (সত্য ও ন্যায়ের) সাক্ষী হবে -কেননা জালেমদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।
আয়াত: ১৪১
وَ لِیُمَحِّصَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ یَمْحَقَ الْكٰفِرِیْنَ
– এবং তিনি এই পরীক্ষার মাধ্যমে সাচ্চা মুমিনদের বাছাই করে নিয়ে কাফেরদের চিহ্নিত করতে চাইছিলেন।
আয়াত: ১৪২
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَ لَمَّا یَعْلَمِ اللّٰهُ الَّذِیْنَ جٰهَدُوْا مِنْكُمْ وَ یَعْلَمَ الصّٰبِرِیْنَ
তোমরা কি মনে করে রেখেছো তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো আল্লাহ দেখেনইনি, তোমাদের মধ্যে কে তাঁর পথে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে প্রস্তুত এবং কে তাঁর জন্য সবরকারী।
আয়াত: ১৪৩
وَ لَقَدْ كُنْتُمْ تَمَنَّوْنَ الْمَوْتَ مِنْ قَبْلِ اَنْ تَلْقَوْهُ١۪ فَقَدْ رَاَیْتُمُوْهُ وَ اَنْتُمْ تَنْظُرُوْنَ۠
তোমরা তো মৃত্যুর আকাংখা করছিলে! কিন্তু এটা ছিল তখনকার কথা যখন মৃত্যু সামনে আসেনি। তবে এখন তা তোমাদের সামনে এসে গেছে এবং তোমরা স্বচক্ষে তা দেখছো।
আয়াত: ১৪৪
وَ مَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوْلٌ١ۚ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ١ؕ اَفَاۡئِنْ مَّاتَ اَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ١ؕ وَ مَنْ یَّنْقَلِبْ عَلٰى عَقِبَیْهِ فَلَنْ یَّضُرَّ اللّٰهَ شَیْئًا١ؕ وَ سَیَجْزِی اللّٰهُ الشّٰكِرِیْن
মুহাম্মাদ একজন রসূল বৈ তো আর কিছুই নয়। তার আগে আরো অনেক রসূলও চলে গেছে। যদি সে মারা যায় বা নিহত হয়, তাহলে তোমরা কি পেছনের দিকে ফিরে যাবে? মনে রেখো, যে পেছনের দিকে ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করবে না, তবে যারা আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকবে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন।
আয়াত: ১৪৫
وَ مَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تَمُوْتَ اِلَّا بِاِذْنِ اللّٰهِ كِتٰبًا مُّؤَجَّلًا١ؕ وَ مَنْ یُّرِدْ ثَوَابَ الدُّنْیَا نُؤْتِهٖ مِنْهَا١ۚ وَ مَنْ یُّرِدْ ثَوَابَ الْاٰخِرَةِ نُؤْتِهٖ مِنْهَا١ؕ وَ سَنَجْزِی الشّٰكِرِیْنَ
কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে। যে ব্যক্তি দুনিয়াবী পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে আমি তাকে দুনিয়া থেকেই দেবো। আর যে ব্যক্তি পরকালীন পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে সে পরকালের পুরস্কার পাবে এবং শোকরকারীদেরকে আমি অবশ্যি প্রতিদান দেবো।
আয়াত: ১৪৬
وَ كَاَیِّنْ مِّنْ نَّبِیٍّ قٰتَلَ١ۙ مَعَهٗ رِبِّیُّوْنَ كَثِیْرٌ١ۚ فَمَا وَ هَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ مَا ضَعُفُوْا وَ مَا اسْتَكَانُوْا١ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الصّٰبِرِیْنَ
এর আগে এমন অনেক নবী চলে গেছে যাদের সাথে মিলে বহু আল্লাহ ওয়ালা লড়াই করেছে। আল্লাহর পথে তাদের ওপর যেসব বিপদ এসেছে তাতে তারা মনমরা ও হতাশ হয়নি, তারা দুর্বলতা দেখায়নি এবং তারা বাতিলের সামনে মাথা নত করে দেয়নি। এ ধরনের সবরকারীদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন।
আয়াত: ১৪৭
وَ مَا كَانَ قَوْلَهُمْ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْا رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَ اِسْرَافَنَا فِیْۤ اَمْرِنَا وَ ثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكٰفِرِیْنَ
তাদের দোয়া কেবল এতটুকুই ছিলঃ “হে আমাদের রব! আমাদের ভুল –ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দাও। আমাদের কাজের ব্যাপারে যেখানে তোমার সীমালংঘিত হয়েছে, তা তুমি মাফ করে দাও। আমাদের পা মজবুত করে দাও এবং কাফেরদের মোকাবিলায় আমাদের সাহায্য করো।”
আয়াত: ১৪৮
فَاٰتٰىهُمُ اللّٰهُ ثَوَابَ الدُّنْیَا وَ حُسْنَ ثَوَابِ الْاٰخِرَةِ١ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَ۠
শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার পুরস্কারও দিয়েছেন এবং তার চেয়ে ভালো আখেরাতের পুরস্কারও দান করেছেন। এ ধরনের সৎকর্মশীলদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন।
0 Comments:
Post a Comment