Close

Tuesday, July 9, 2024

আলোচনা নোট || বাদ দিন বাজে অভ্যাস

মানুষ অভ্যাসের দাস, তবে সেই অভ্যাস যেন অন্যের বিরক্তির কারণ না হয়-তাহলে কিন্তু সমস্যায় পড়তে হবে। অনেক সময় লজ্জা- অপমানও হজম করতে হবে। তারপরও বাজে অভ্যাস ছাড়ে না। আমরা নিজেদের বাজে বা বদ অভ্যাস গুলো পরিবর্তন করতে চাই। তাই কিছু অভ্যাস ও সেগুলোর হাত থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আমাদের আজকের মূল উপস্থাপনা। 


১. কথা লাগানো:- বিশ্বস্ততা জীবনে খুব জরুরি। কেউ হয়তো আপনাকে বিশ্বাস করে কোনো কথা বলেছে। আপনি সেই কথা অন্যকে বলে দেন তাহলে সেটাও বাজে অভ্যাস।
সমাধান :- যখন আপনাকে বিশ্বাস করেছে বলেছে মনে রাখবেন তা রক্ষা করার দায়িত্বও আপনার। যদি মনে করেন আপনি বলে দিতে পারেন, তাহলে এ ধরনের কথা শোনা থেকে বিরত থাকুন।

২. বেশি কথাঃ- বাচালতা নিজের ব্যক্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত কথা আপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেবে। 
সমাধান:- কথা দীর্ঘ করলে আসল কথাই হারিয়ে যতে পারে। যদি মনে করেন আপনি বেশী কথা বলছেন তাহলে বলার সময় সচেতন থাকুন। আপনজনদের জিজ্ঞাসা করুন কথা বলার সময় খেয়াল করতে আপনি বেশি বলছেন কিনা। তাহলে থামিয়ে দিতে কিংবা বিরক্তি প্রকাশ করতে। অনর্থক কথা না বলে সার কথাটুকু বলুন। দেখবেন যা বলছেন সবাই তা মনযোগ দিয়ে শুনছে। চেষ্টা করুন যা ঘটেছে বা যা সত্য তাই বলতে। 

. আঘাত দিয়ে কথা:- আপনি স্পষ্টবাদি, এর অর্থ এই নয় যে অন্যকে আঘাত দিয়ে কথা বলবেন। কেউ আপনার মত নাও হতে পারে।
সমাধান:- মনে রাখবেন অন্যকে আঘাত দেওয়ার মধ্যে কোন কৃতিত্ব নেই। অনেক কঠিন কথাও অনেক সুন্দর করে বলা সম্ভব- এ অভ্যাস রপ্ত করুন। কথা বলার সময় সচেতন থাকুন যেন আপনার কথায় কেউ কষ্ট না পায়।

৪. অন্যকে বলতে না দেওয়া:- এক তরফা অনেকেই কথা বলতে থাকেন। অথচ আলোচনা বা আড্ডার সময় অন্যের কথাও শুনতে হয়, বলার সুযোগ দিতে হয় এ খেয়াল থাকেনা। 
সমাধান :- আলোচনা বা আড্ডায় ভালো শ্রোতার কদর অনেক। আগে অন্যের কথা শুনে তারপর বলুন। খেয়াল রাখুন অন্যরা বলার সুযোগ পাচ্ছে কিনা। নিজে কম কথা বলে অন্যকে বলতে দিন।

৫. কথা না রাখা: অনেকেই আছেন কথা দেওয়ার সময় হয়তো না বুঝেই কথা দিয়ে ফেলেন। পরবর্তিতে রক্ষা করতে পারেন না। তেমনি সবসময় দেরি করে পৌঁছানোও বাজে অভ্যাস। দেরি করে আসার কারণে অনেকেই হয়তো বিরক্ত হন এবং বিড়ম্বনায় পড়েন।
সমাধান :- খেয়ালের বশে কখনো কাউকে কথা দিবেন না। কথা দেওয়ার সময় সচেতন থাকুন আপনি রক্ষা করতে পারবেন তো? কথা দেওয়ার পর যদি বুঝতে পারেন আপনি রাখতে পারবে না তবে আগে ভাগেই জানিয়ে দিন। যাতে আপনার জন্য কারো অসুবিধা না হয়। সময়ানুবর্তিতা জীবনের জন্য জরুরি। সব সময় হাতে সময় নিয়ে বের হবেন। যাতে নির্দিষ্ট সময় পৌছাতে পারেন। 

৬. ঈর্ষা:- ঈর্ষা জীবনকে পিছিয়ে দেয়। অপরের ভালো বা সুখ দেখে হিংসা না করে বরং নিজে সেই গুণগুলো অর্জনের চেষ্টা করুন।

সমাধান:- নিজের যা কিছু আছে তা নিয়ে সুখী হওয়ার চেষ্ট করা উচিত। বরং ঈর্ষা না করে অন্যের ভালো কিছু অনুসরন করে সে রকম হওয়ার চেষ্টা করুন। নিজে নিজে অনুধাবন করার চেষ্ট করুন আপনি ঈর্ষা করছেন এত আপনার কোনো লাভ হচ্ছে কি?

৭. সন্দেহ: সন্দেহ নিঃসন্দেহে খারাপ অভ্যাস। সম্পর্কে ফাটল ধরায়। সন্দেহপ্রবণ মানুষ নিজেকে নিয়েও নিজের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত থাকে। তার এ অভ্যাসে অন্যরাও বিরক্ত হয়।
সমাধান:- কাউকে সন্দেহ না করে বরং ওই ব্যক্তিকেই সরাসরি জিজ্ঞেস করুন। আসল সত্যটা জানার চেষ্টা করুন। সন্দেহ থেকে দুরে থাকার সবচেয়ে ভালো পন্থা নিজের বিষয়ে সচেতন ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া। আপনি এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন না- এমন আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন। আপনাকে কেউ সন্দেহ করলে চুপ থাকুন। আসল সত্য এমনিতেই বেরিয়ে আসবে। 

. পরনিন্দাঃ- কারণে-অকারণে অপরের দোষ-ত্রুটি সবাইকে বলে বেড়ানো বাজে অভ্যাস। অনেক সময় অপরে যা করেনি তাও বানিয়ে বানিয়ে বলতে দেখা যায় কাউকে কাউকে। 
সমাধান :- অপরের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখুন। প্রচার করবেন না। মনে রাখবেন, আপনারও ভুল হতে পারে। পরনিন্দা ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কে ফাটল ধরায়। এরকম বাজে অভ্যাস হলে নিজে নিজে সচেতন হয়ে কাটিয়ে উঠুন।

৯. অন্যের দোষ খোঁজা: অযথা কারো দোষ ধরবেন না। কেউ কোনো ভুল করলে অন্যায় করলে নিজেই সংশোধন করে দিন। কারো কথা বার্তা, চালচলন পছন্দ না হলে চুপ থাকুন, তবে সেটা যদি আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হয়। 

সমাধান:- অন্যের দোষ না খুজে তার ভাল দিক খুজে বের করার মধ্যেই আনন্দ। দোষ যদি বলতেই হয় সবার সামনে না বলে আড়ালে শুধরে দিন। 

১০. পক্ষপাতিত্বঃ- আপনার বন্ধু বা আপন জন অন্যায় করলে, খারাপ ব্যবহার করলে তাকে ছেড়ে দিবেন না। নিরপেক্ষ বিচার করুন। অন্যায় করলে ক্ষমা চাইতে বলুন। পক্ষপাতহীন আচরণ ব্যক্তিত্বকে দৃঢ় করবে।
সমাধান:- পক্ষপাত দুষ্ট মানুষকে কেউ পছন্দ করেন না। পক্ষপাত আচরনে অন্যের ক্ষতি হতে পারে। কোন কিছু করার আগে অন্তত একবার ভেবে দেখুন সবার প্রতি আচরণ ঠিক আছে কি না। নিজে বুঝতে না পারলে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচনা করে নিতে পারেন।

১১. মোবাইল ফোন:- অনেকেই অহেতুক জোরে জোরে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। অন্যের বিরক্তির বিষয়ে খেয়াল করেন না। কোনা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মধ্যেও কথা বলতে থাকেন। অনেকের মোবাইল ফোনের রিংটোনও অনেক সময় বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সমাধান:- মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় খেয়াল রাখুন আপনার কথায় অন্যের অসুবিধা হচ্ছে কিনা। জরুরি হলে অন্য জায়গায় গিয়ে কথা বলুন। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সময় ফোন সাইলেন্ট রাখুন। কাছের মানুষদের জানিয়ে রাখুন এ সময় আপনি ব্যস্ত থাকেন জরুরি না হলে ফোন না করতে। ফোনের রিংটোন আপনার রুচির প্রকাশ করে। তাই সচেতন থাকুন।

১২. আরও যত বাজে অভ্যাস:-
• আঙ্গুল মটকানো
• দাঁত খোচানো
• যেখানে সেখানে পানের পিক ফেলা।
• নাক-মুখে রুমাল বা হাত না দিয়ে হাচিকাশি
• মেঝেতে পা ঘষে হাঁটা
• দাঁত দিয়ে নখ কাটা
• বেতন ও বয়স কত জিজ্ঞেস করা
কিভাবে ত্যাগ করবেন :- অভ্যাসতো আপনিই সৃষ্টি করেছেন। আপনারতো ভালো অভ্যাসও আছে। সুতরাং অভ্যাসের পরিবর্তন করার দায়িত্বটাও একান্তই আপনার। তার জন্য প্রয়োজন শুধু নিজের সচেতনতা আর সদিচ্ছা। বাজে অভ্যাস পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতন থাকুন। কাছের জনকেও বলুন শুধরে দিতে। আপনার আশপাশে এমন মানুষ আছে যাদের মধ্যে আপনার বাজে অভ্যাসগুলো নেই। তাদের অনুসরণ করতে পারেন। প্রয়োজনে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

১৩. দোষনীয় বিষয়:-

•আতরের দাগ
•মুখের গন্ধ 
•টাই বাধা
•কাপড়ে/শরীরে ঘামের গন্ধ
•জুতা কালি করতে সময় না থাকা 
•খাবারগ্রহণ কালীন শব্দ/চা পানের শব্দ
•পানি পরিবেশনের সময় গ্লাস ধুয়ে গ্লাসের গায়ের পানি না মুছে পানি দেয়া
•মোজা/গেঞ্জি গন্ধ হবার পরও তা ব্যবহার করা/স্প্রে ব্যবহার


নোট: সংকলিত 

0 Comments: