Close

Tuesday, July 9, 2024

মকবুল আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ : জীবন ও কর্ম

মকবুল আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ : জীবন ও কর্ম

ফেনী জেলার অন্তর্গত দাগনভূঞা উপজেলার ৩নং পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ছায়াঘেরা, পাখি ডাকা সবুজের সমারোহে বেষ্টিত এক সুন্দর গ্রামের নাম ওমরাবাদ। যার পূর্ব পাশ ঘেঁষে বয়ে যাচ্ছে সিলোনিয়া নদী। এ নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম জোতদার পেশায় সার্ভেয়ার (আমিন) জনাব নাদেরুজ্জমানের বাড়ী। সে বাড়ীতে ১৯৩৯ সালের ৮ আগস্ট জনাব নাদেরুজ্জামান ও জনাবা আঞ্জিরের নেছার ঘর আলোকিত করে এক শিশু জন্মগ্রহণ করে। তারা এ প্রিয় সন্তানটির নাম রাখেন মকবুল আহমাদ। এ মকবুল আহমাদ ছিলেন ৫ ভাই ৩ বোনের মধ্যে পঞ্চম আর ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। সে শিশুটি কালক্রমে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে একসময় যে বিখ্যাত হয়ে উঠবে সেদিন মা-বাবা, ভাই-বোন বা গ্রামবাসী কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু সেটাই আজ বাস্তব সত্য।

ওমরাবাদ গ্রামের নাম ওমরাবাদ কেন হলো সে ইতিহাস জানা নেই। তবে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রা.) এর নামে নামকরণের পেছনে সে গ্রামের ভূমিপুত্রদের কেউ ইনসাফ আর আদলে সে গ্রামকে অনন্য হিসেবে অত্যুজ্জল ইতিহাস রচনায় কালের সাক্ষী করে রাখার মানসে করেছেন কিনা কে জানে? ওমরাবাদ গ্রামের সকল অধিবাসীই মুসলিম। সে গ্রামের শিশু মকবুল আহমাদ তার শৈশব, কৈশর, যৌবন আর বার্ধক্যের ক্রান্তিকালসহ পুরো জীবন ব্যাপী হযরত ওমরের মত ঈমানী দৃঢ়তা, অসীম সাহসীকতা, কঠিন আমানতদারী, ইনসাফ-আদল আর মানব কল্যাণে ভূমিকা রেখে ওমরের আদর্শকে আবাদ করে গেছেন এ জমিনে। এ মকবুল আহমাদের কারণে হয়তোবা ওমরাবাদ নামকরণের সার্থকতা একদিন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। রাহবারের পাঠকদের উদ্দেশ্যে জনাব মকবুল আহমাদের জীবন ও কর্ম সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো:

শিক্ষা জীবন:
জনাব মকবুল আহমাদের যখন প্রাইমারী স্কুলে যাওয়ার বয়স তখন চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বর্তমান বাংলাদেশ তখন ব্রিটিশ কলোনী। আর ফেনীতে ছিল ব্রিটিশদের বৃহৎ বিমান বন্দর। সে বিমান বন্দর এখন নেই। কিন্তু বিমান বন্দরের রানওয়ে আর হ্যাঙ্গারগুলো কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে। এ বন্দর থেকে প্রতিনিয়ত বোমা নিয়ে উড়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ বিমান। এখানে ওখানে বোমা পড়ছে, আকাশ লড়াইয়ে বিমান বিধ্বস্ত হচ্ছে। বিমানের ধ্বংসাবশেষ এদিক সেদিক ছিটকে পড়ছে। সে এক কঠিন পরিস্থিতি। এর মাঝে আবার সে সময় সুনসান পাকা রোড-ঘাট ছিল না। স্কুল ছিল অনেক দূরে দূরে। ভাগ্যবান ছাড়া বেশী শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেত না সে সময়। আর যারা এসব দূর-দূরান্তের স্কুলে যেত তাদের ভরসা ছিল স্রষ্টার দেয়া দু'টি পা। মাইলকে মাইল মেঠো পথে ধুলো কাদা মাড়িয়ে সংগ্রাম করেই লেখা পড়া করতে হতো। মকবুল সাহেবের বাড়ীর পাশে নদীর উপর তখনকার সময় ভাল কোন পুল কালভার্ট ছিল না। এসব প্রাকৃতিক বাধা আর যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে মকবুল সাহেবের প্রাইমারী শিক্ষা বর্তমানের শিশুদের চাইতে সম্ভবত দেরীতে শুরু হয়েছিল। তাই মকবুল সাহেব সংগ্রামী জীবন অতিক্রম করে প্রাইমারী শিক্ষা শেষ করেছেন পারিবারিক পরিসরে ও গ্রামীন স্কুলে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এক সময়কার অফিস সম্পাদক জনাব অধ্যাপক মাযহারুল ইসলাম ছিলেন মকবুল সাহেবের দীর্ঘ দিনের দ্বীনি আন্দোলনের সহকর্মী। তিনি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেন- "পূর্বচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে দাগনভূঞার কামাল আতাতুর্ক হাইস্কুলে ভর্তি হন। অতঃপর তিনি ফেনী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন।" কিন্তু তিনি নবম শ্রেণিতে পাইলট হাইস্কুলে ভর্তি হয়েও সেখান থেকে ম্যাট্টিক পরীক্ষা দেননি। কারণ বাড়ী থেকে পাইলট হাইস্কুলে পায়ে হেটে ক্লাস করতে কি পরিমাণ কষ্টকর ছিল তা শুধু বর্তমানে কল্পনাই করা যায়। বর্তমান সময়ে মোটর সাইকেলে ফেনী থেকে মকবুল সাহেবের বাড়ী যেতে ৩০/৪০ মিনিটের বেশী সময় লাগে। যা হোক সে কারণে তিনি স্কুল পরিবর্তনে বাধ্য হয়ে জায়লস্কর হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৫৭ সালে কৃতিত্বের সাথে এ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে ফেনী কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাস করেন এবং ১৯৬২ সালে বি.এ পাস করেন। এখানে মকবুল সাহেবের জাগতিক শিক্ষার সমাপ্তি। কিন্তু দ্বীনি শিক্ষা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

কর্ম জীবন:
বি.এ পাশ করার পর তিনি শিক্ষকতার মত মহান পেশাকে গ্রহণ করেন। এ ব্যাপারে জনাব অধ্যাপক আবু ইউসুফ লিখেন- “প্রথমে তিনি ফেনী উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ঐ সময়ের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরিষাদি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কথিত আছে যে, উক্ত বিদ্যালয়ে বিভিন্ন নিয়ম কানুন শক্তভাবে পালন করা হতো। মকবুল সাহেব তখন জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করার কারণে তার আচার আচরণে ইসলামের রীতিনীতির প্রতিফলন ঘটেছিল। তাই উক্ত বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী জনাব আবদুল খালেককে তিনি নাম ধরে না ডেকে খালেক ভাই বলে সম্বোধন করার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতির বিপরীত আচরণের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক প্রধান শিক্ষক তাঁকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন আবদুল খালেক ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হলেও সে তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। সুতরাং তাকে ভাই ডাকতে সমস্যা কোথায়? তিনি সরিষাদি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ বছর শিক্ষকতা করেছিলেন। পরবর্তীতে বর্ণিত ঘটনার জের ধরে তিনি উক্ত বিদ্যালয়ের চাকুরী ত্যাগ করেন এবং শহরে অবস্থিত ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলে চাকুরী গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন।

সাংবাদিকতায় মকবুল আহমাদ:
অধ্যাপক মাযহারুল ইসলাম লেখেন- "১৯৭০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতীয় দৈনিক 'দৈনিক সংগ্রাম' পত্রিকার ফেনী মহকুমার নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সত্তর দশকের দিকে 'বাংলাদেশের হোয়াইটগোল্ড' শিরোনামে বাংলাদেশের কক্সবাজারের চিংড়ি মাছের উৎপাদনের ওপর তার লেখা একটি প্রতিবেদন ব্যবসায়ী জগতে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিষয় ছিল 'বাংলাদেশের হোয়াইট গোল্ড' (চিংড়ি

সম্পদ) সৌদি আরবের 'তরল সোনা (পেট্রোল)' কে হার মানাবে।" তিনি সুযোগ পেলে পত্র পত্রিকা বা সাময়িকীতে লেখালেখি করতেন এবং প্রতিভাবানদের লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় উৎসাহিত করতেন। মিড়িয়ার গুরুত্ব তাঁর কাছে পরিষ্কার ছিল। তাই তাঁর পরিচিত কেউ সাংবাদিকতায় ঢুকলে এ পেশায় টিকে থাকার জন্য তাকে প্রণোদনা দিতেন। যত বাধা আসুক এ পেশা পরিত্যাগ করতে নিরুৎসাহিত করতেন।

সাংগঠনিক জীবন:

১৯৬২ সালে : জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান।

১৯৬৬ সালে : জামায়াতে ইসলামীর রুকন শপথ নেন।

১৯৬৭-৬৮ সালে : ফেনী শহর নাযেমের দায়িত্ব পালন।

১৯৬৮-৭০ সাল : ফেনী মহকুমা সভাপতির দায়িত্ব পালন।

১৯৭০ সালে : ফেব্রুয়ারী মাস থেকে ১৯৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত নোয়াখালী জেলা আমীরের দায়িত্ব পালন।

১৯৭১ সালে : বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি সংগঠনের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। তখন চট্টগ্রাম বিভাগ ছিল চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও সিলেট এর বৃহত্তর জেলা নিয়ে। বিভাগ হিসেবে তখন দেশের এ বিভাগ ছিল সবচেয়ে বড়।

১৯৭৯ সাল : থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৯ সাল : থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি সহকারী সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৪ সালে : ২০১০ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১০ সালের : ৩০ জুন থেকে ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত জামায়াতের তৎকালীন আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হলে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত হিসেবে সংকটকালীন সময়ে নেতৃত্ব দেন।

২০১৬ সালের : ১৭ অক্টোবর তিনি আমীর নির্বাচিত হন এবং ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৃতীয় নির্বাচিত আমীরে জামায়াত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


বিভিন্ন সংস্থায় দায়িত্ব পালন:

১৯৮৪ সালে : তিনি ঢাকায় অবস্থিত জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান “ফালাহ- ই-আম ট্রাস্টের" চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

১৯৯৭ সাল : থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইসলামী আন্দোলনের পতাকাবাহী জাতীয় পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া তিনি দৈনিক সংগ্রাম ট্রাস্টি বোর্ডের একজন ডাইরেক্টর ছিলেন।

২০০৪ সাল : তিনি বাংলাদেশ ইসলামিক ইনস্টিটিউটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।


বিদেশ সফর:

১৯৭৬ ও ৭৯ সালে তিনি "রাবেতা আলম আল ইসলামীর” মেহমান হিসাবে দু'বার পবিত্র হজ্জব্রত পালনের জন্য সৌদী আরব সফর করেন।

• জাপান ইসলামী সেন্টারের দাওয়াতে জাপান সফর করেন।

কুয়েতে প্রবাসী ভাইদের দাওয়াতে তিনি একবার কুয়েত সফর করেন।


সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা:

> তাঁর সহযেগিতায় সিলোনিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন 'আল ফালাহ মসজিদ' ও 'উম্মুল মু'মেনীন আয়েশা (রা.) মহিলা মাদরাসা' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

➤ ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তিনি ফেনীর বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাহীন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ ফেনী এর নিয়ন্ত্রক ট্রাস্ট 'ফেনী ইসলামিক সোসাইটি'র চেয়ারম্যান ছিলেন।

১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত 'আঞ্জুমানে ফালাহিল মুসলেমিন' নামক ট্রাস্টের তিনি ফাউন্ডার ও আজীবন মেম্বার ছিলেন। এ ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয় দেশের টপটেন মাদরাসার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা ফেনী' এবং ফেনী সদর উপজেলার 'লক্ষীপুর বাইতুল আমিন দাখিল মাদরাসা'।

১৯৮৮ সালে দাগনভূঞা সিরাজাম মুনিরা সোসাইটির সভাপতি ছিলেন।

> দেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী সাহিত্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আধুনিক প্রকাশনী বি.আই ট্রাস্টের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

> এছাড়া তিনি ঢাকা রহমতপুরস্থ ডা. আবদুস সালাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আশ-শেফা আর রাহমাহ নামক সমাজ কল্যাণ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন।


সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম:

* অধ্যাপক মাযহারুল ইসলাম লেখেন- "ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সমাজকল্যাণমূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। তার জীবনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো মানুষের সেবা করা। ১৯৬২ সালে যুবকদের সহযোগিতায় নিজ গ্রাম ওমরাবাদে "ওমরাবাদ পল্লীমঙ্গল সমিতি" নামের একটি সমিতি গঠন করেন। তিনি উক্ত সমিতির ১০ (দশ) বছর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। সমিতির সভাপতি হিসেবে তিনি স্থানীয় অনেক রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামতের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং গরিব ও অসহায় লোকদের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করেন।

* ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি গজারিয়া হাফেজিয়া মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


রাজনৈতিক জীবন:

১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নিজ এলাকায় প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।

১৯৮৬ সালে জামায়াতের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে ফেনী ২নং আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৯১ সালে তিনি জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে আরও একবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

২০১০ সালের জুন মাসের শেষ দিকে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর নিযুক্ত হয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত ২০ দলীয় জোট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে থেকে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের কঠিনতম পরিস্থিতিতে জামায়াতের আমীর ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা হিসাবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের প্রতিবাদ, জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, এদেশে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং গণমানুষের আধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

পারিবারিক জীবন: জনাব মকবুল আহমাদ ১৯৬৬ সালে লক্ষীপুর জেলা নিবাসী প্রখ্যাত আলেম ও শিক্ষাবিদ ঢাকা আরমানিটোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান মাওলানা ওহিদুল হকের কন্যা মুহতারামা সুরাইয়া বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী একজন রুকন। ছেলে-মেয়েরাও ইসলামী আন্দোলনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট।

মৃত্যু:
মৃত্যু মানব জীবনের অনিবার্য পরিণতি। কোন মনিষী এমনকি নবী-রাসুলগণও অমরত্ব লাভ করেননি। সে কারণে একটি পরিণত বয়সে খলিফাতুল্লাহ হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে আল্লাহর একান্ত প্রিয় এ গোলাম ১৩ এপ্রিল ২০২১ইং, মঙ্গলবার, দুপুর ১.০০টায়, ইবনে সীনা হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মহান মনিবের দরবারে হাজিরা দেন। সেদিন ছিল ১৪৪২ হিজরীর ২৯ শে শাবান। দিন শেষে পহেলা রমজানের প্রস্তুতি, সালাতুত তারবীহ। পরদিন থেকে শুরু হচ্ছে করোনা পরিস্থিতির কারণে সর্বাত্বক কঠোর লক ডাউন। তাই ঐ দিন গভীর রাতে নামাজে জানাজা শেষে ওমরাবাদ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমকে সমাহিত করা হয়। জানাযায় ইমামতি করেন বর্তমান আমীরে জামায়াত জনাব ডা. শফিকুর রহমান।

মহান আল্লাহ মরহুমের কবরকে জান্নাতের টুকরায় পরিণত করুন, তাঁর নেক আমলগুলো কবুল করুন, ভুলত্রুটিগুলো নিজ অনুগ্রহে ক্ষমা করে দিন। তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারকে সবরে জামিল ইখতিয়ারের তাওফিক দিন। তাঁর উত্তরসূরীদের আরো বেশী দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনকে কামিয়াবীর মঞ্জিলে পৌঁছে দেয়ার তাওফিক দিন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আ'লামীন।

0 Comments: