Close

Sunday, July 7, 2024

দারসুল হাদিস : অধিকাংশ নারী জাহান্নামে যাবার কারণ


দারসুল হাদিস : অধিকাংশ নারী জাহান্নামে যাবার কারণ 

 وَعَنْ أَبِي سَعِيدِنِ الْخُدْرِيِّ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَضْحَى أَوْ فِطْرٍ إِلَى الْمُصَلَّى فَمَرَّ عَلَى النِّسَاءِ ، فَقَالَ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ ، فَإِنِّي أُرِيتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ ، فَقُلْنَ وَبِمَ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ ، وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلِ وَدِيْنٍ أَذْهَبَ لِلبِّ الرَّجُلِ الْحَازِمِ مِنْ إِحْدَا كُنَّ قُلْنَ وَمَا نُقْصَانُ دِيْنِنَا وَعَقْلِنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ أَلَيْسَ شَهَادَةُ الْمَرْأَةِ مِثْلُ نِصْفِ شَهَادَةِ الرَّجُلِ ؟ قُلْنَ بَلَى - قَالَ فَذَلِكَ مِنْ تُقْصَانِ عَقْلِهَا قَالَ أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلُّ وَلَمْ تَصُمْ؟ قُلْنَ بَلَى قَالَ فَذَلِكَ مِنْ نُّقْصَانِ دِيْنِهَا - (مُتَّفِقٌ عَلَيْهِ)

•হাদীসের অনুবাদ: 

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ একবার ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতরের দিন (রাবীর সন্দেহ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঈদগাহে গেলেন এবং উপস্থিত মহিলাদের কাছে পৌঁছলেন। অতঃপর তাদেরকে বললেনঃ হে নারী সমাজ! তোমরা দান-খয়রাত করো। কেননা, আমাকে জানানো হয়েছে যে, দোযখের অধিকাংশ বাসিন্দা তোমাদের নারীরাই হবে। তারা বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ কারণে? হুজুর উত্তরে বললেনঃ তোমরা অপরের প্রতি বেশী লা'নত (অভিশাপ) দিয়ে থাকো এবং স্বামীদের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো। যারা বুদ্ধি ও দ্বীনদারীতে অপূর্ণ এমন কেউ যে বিচক্ষণ বুদ্ধিমান পুরুষের বুদ্ধি তোমাদের কোনো একজন অপেক্ষা বেশী হরণ করতে পারে, তা আমি আর দেখিনি। তারা প্রশ্ন করলোঃ আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির অপূর্ণতা বলতে কি বুঝায় ইয়া রাসূলুল্লাহ্? হুজুর উত্তরে বললেনঃ নারীদের স্বাক্ষ্য কি পুরুষের স্বাক্ষের অর্ধেকের সমান নয়? (তার কারণ, কুরআনে দুইজন নারীর স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান উল্লেখ রয়েছে)। তারা উত্তরে বললোঃ জ্বী হ্যাঁ! হুজুর বললেনঃ এটাই নারীর বুদ্ধির অপূর্ণতা। অতঃপর হুজুর জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের কারও যখন মাসিক ঋতু হয় তখন সে যে, নামায-রোজা করে না (করতে পারে না) এটা কি সত্য নয়? উত্তরে তারা বললোঃ জ্বী হ্যাঁ হুজুর। নবী করীম (সাঃ) বললেনঃ এটাই তোমাদের দ্বীনের অপূর্ণতা। (বুখারী মুসলিম)

•রাবী বা বর্ণনাকারীর পরিচয়:

নাম-সা'দ। ডাকনাম আবু সাঈদ। খুদরাহ্ বংশের সন্তান হবার কারণে খুদারী বা খুদরী বলা হয। পিতার নাম-মালিক ইবনে সিনান। উহুদের যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। এ যুদ্ধে রাসূলে করীম (সাঃ) আহত হলে তিনি তাঁর পবিত্র রক্ত চুষে গিলে ফেলেন। এতে রাসূল (সাঃ) মন্তব্য করেনঃ আমার রক্ত যার রক্তে মিশে গেছে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। মাতার নাম-উনায়সা বিনতু আবী হারিসা। আবু সাঈদ জন্মগ্রহণ করনে হিজরতের ১০ বছর পূর্বে ৬১৩ খৃষ্টাব্দে ইয়াসরীবে (মদীনায়)। আবু সাঈদ মুসলিম মা-বাবার কোলেই বেড়ে উঠেন। তাঁর মৃত্যুক্ষণ সম্পর্কে কেউ বলেন ৭৪ হিজরীতে। আবার কেউ বলেন ৬৪ হিজরীতে। মৃত্যুর সময় তার অনেক বয়স হয়েছিলো। কারো মতে তিনি ৭৪ বছর বেঁচে ছিলেন। আবার কারো মতে ৮৬ বছর বয়সে মারা যান এবং এটাই সঠিক। তিনি একজন বিশিষ্ট হাদীস বর্ণনাকারী ছিলেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ১,১৭০টি। 

•হাদীসটি বর্ণনাকারী কিতাবের পরিচয়:

হাদীসের পরিভাষায় 'মুত্তাফিকুন আলাইহ্' বলতে বুখারী এবং মুসলিম শরীফকে বুঝানো হয়েছে।

 •হাদীসটি বর্ণনার সময়কাল
আল-কুরআন অবতরণের সময়কাল যেভাবে সহজে অনুধাবন করা যায়। হাদীসের ক্ষেত্রে সেভাবে পাওয়া যায় না। তার পরও হাদীসটির বিষয়বস্তু থেকে অনুভব করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) হাদীসটি মাদানী জীবনের মধ্যবর্তী অথবা তারও কিছু আগে বর্ণনা করেন। কেননা, হাদীসে ঈদের জামায়াতের কথার উল্লেখ রয়েছে। আর জামায়াতে ঈদের নামায আদায়ের পদ্ধতি হিজরতের পর মাদানী জীবনে চালু হয়। হাদীসে উল্লেখ রয়েছে তৎকালীন সময় মদীনার লোকেরা দু'টি মেলা জাহেলী পদ্ধতিতে উদ্যাপন করতো। রাসূল (সাঃ) তাদেরকে আহবান জানিয়ে বলেছিলেনঃ মুসলমানদের জন্য এর চেয়েও দুটি আনন্দের দিন রয়েছে তা হলো-"ঈদুল ফিতর" এবং "ঈদুল আযহা।"

•ব্যাখ্যা
নারীরা অধিকাংশই দোযখী এই সতর্কবাণী শুনাতে এবং তাদেরকে তা থেকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে গিয়ে নবী (সাঃ) বলেনঃ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيخَرَجَ أَضْحَى أَوْ فِطْرِ إِلَى الْمُصَلَّى فَمَرَّ عَلَى النِّسَاءِ "একবার ঈদুল আযহা (বকারাইদ) অথবা ঈদুল ফিতরের দিন (রাবীর সন্দেহ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ঈদগাহে গেলেন এবং (জামায়াতে উপস্থিত) মহিলাদের কাছে হাজির হলেন।"
মদীনার যুগে ঈদের নামায মাঠে পড়ার পদ্ধতি চালু হবার পর বর্ণনাকারীর সন্দেহ রয়েছে তা ঈদুল আযহার দিনও হতে পারে। আবার ঈদুল ফিতরের দিনও হতে পারে। যাই হোক কোনো একক্স ঈদের মাঠে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যেদিকে মহিলারা অবস্থান করেছিলো সেইদিকে চলে গেলেন এবং তাদের জন্য পৃথকভাবে নছিহত করলেন।

প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মহিলাদেরকে ঈদের মাঠে হাজির হবার জন্য তাগাদা দিতে গিয়ে অনেক হাদীসই উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে যেমন তিনি বলেনঃ "মেয়েরা হায়েজ অবস্থায় থাকলেও যেন তারা ঈদগাহে হাজির হয় এবং (নামায না পড়ে) দোয়াতে শরীক হয়"। অন্য হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেনঃ "মহিলারা যেন অন্যের চাদর ধার করে হলেও ঈদের মাঠে যায়।" উক্ত হাদীস দু'টি থেকে বুঝা যায় যে, রাসূল (সাঃ) মহিলাদরকে ঈদের মাঠে যাবার জন্য তাগাদা দিতেন এবং মহিলারাও স্বতস্ফূর্তভাবে পর্দার সাথে ঈদগাহে সমবেত হতো। প্রশ্ন হতে পারে যে, রাসূল (সাঃ) একেবারে মহিলাদের কাছে পৌঁছে গেলেন এতে কি পর্দার খেলাপ হলো না? উত্তরে বলা যায়, হুজুরের সময় মহিলারা অত্যন্ত সাদাসিধে এবং সালিন ভাবে চলাফেরা করতো। তারা শরীর ঢেকে পর্দার সাথে ঈদ ও জুমুয়ার নামাজে হাজির হতো এবং পুরুষদের থেকে পৃথক হয়ে বসতো। তাদের শরীর ঢেকে ও পবিত্রতা রক্ষা করে চলার বিধান সূরা নূর এবং আহযাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সূরা আহযাবে উল্লেখ রয়েছে "হে নবী আপনার স্ত্রীদেরকে, আপনার মেয়েদেরকে এবং মু'মিনদের স্ত্রীদেরকে বলে দিন যে, তারা যেন নিজেদের (শরীরের) উপর চাদর ঝুলিয়ে দেয়।" সুতরাং বলা যায় মহিলারা ঈদের জামায়াতে পর্দার সাথে পৃথকভাবে সমবেত ছিলো এবং সেখানে গিয়ে কেবলমাত্র মেয়েদের সম্পর্কেই গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ বাণী শুনিয়েছিলেন; যা ছিলো রাসূল (সাঃ) এর দায়িত্ব। রাসূল (সাঃ) ঈদগাহে সমবেত মহিলাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ، فَإِنِّي أُرِيتُكُنَّ أَكْثَرَأَ هْلِ النَّارِ

"হে নারী সমাজ। তোমরা দান-খয়রাত করো। কেননা, আমাকে জানানো হয়েছে যে, অধিকাংশ মহিলারাই দোযখী হবে।" হাদীসের এই অংশে মহানবী (সাঃ) মহিলাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে, তোমরা বেশী বেশী করে দান-সদকাহ্ করো, কেননা বেশীর ভাগ মহিলারাই জাহান্নামী হবে। এখানে রাসূল (সাঃ) বলছেন যে, 'আমাকে জানানো হয়েছে' অথবা 'দেখানো হয়েছে' উভয় হতে পারে। যদি 'জানানো হয়েছে' বলা হয় তাহলে, জীবরাঈল (আঃ) অহীর মাধ্যমে রাসূলকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর যদি 'দেখানো হয়' তাহলে, বলা যায় যে, মে'রাজের রাতে রাসূল (সাঃ) কে জীবরাঈল (আঃ) সাথে করে নিয়ে জান্নাত এবং জাহান্নাম পরিদর্শন করিয়েছিলেন। যেখানে রাসূল (সাঃ) অধিকাংশ মহিলাদেরকে জাহান্নামী দেখে 'জীবরাঈলকে প্রশ্ন করেছিলেন' কোন্ কারণে মেয়েরা এত জাহান্নামী? উত্তরে জীবরাঈল (আঃ) বলেছিলেনঃ মহিলারা তাদের স্বামীর প্রতি অভিশাপ অর্থাৎ অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে এজন্যই তারা বেশী জাহান্নামী।

হাদীসের এই বাক্যে মেয়েদেরকে নসীহত করতে গিয়ে বেশী বেশী দান- খয়রাত করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। এতে বুঝা যায় যে, দান-খয়রাত এমনই এক আ'মল যার প্রেক্ষিতে অনেক গোনাহ্ থেকে মুক্ত করে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে দেয়। সুতরাং এখানে দান-খয়রাতের গুরুত্ব অত্যধিক বেশী তা বুঝা যাচ্ছে। সুতরাং শুধু মহিলারাই নয় পুরুষদেরও দান-খয়রাতের হাত প্রসারিত করা উচিত। রাসূল (সাঃ) নারীদের ব্যাপারে এই কথা বলার প্রেক্ষিতে সমবেত মহিলারা রাসূল (সাঃ) কে প্রশ্ন করে জানতে চায় যে,

فَقُلْنَ وَبِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟

"তারা বললোঃ কোন্ অপরাধে হে আল্লাহ রাসূল! (নারীরা বেশী জাহান্নামী হবে?) প্রতি উত্তরে রাসূল (সাঃ) পর পর দু'টি কারণ উল্লেখ করে বলেন:

تُكْثِرْنَ اللَّعَنَ وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ

"তোমরা অন্যের প্রতি বেশী বেশী লা'নত (অভিশাপ) করে থাকো এবং স্বামীদের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো।"

নারীদের বেশী জাহান্নাম যাবার দু'টি গুরুত্বপূর্ণ দূর্বলতার কথা যা তাদের সৃষ্টিগত ভাবেই এই ধরনের অপবাদের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, তারা কথায় কথায় অভিশাপ দিয়ে বসে এবং স্বামীদের সামান্যতম লেন-দেনে ত্রুটি দেখা দিলেই অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফেলে।

লা'নত-অর্থ অভিশাপ। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কোনো বান্দাকে তার দরবার বা রহমত হতে দূর করে দেয়া। যা শুধু কাফেরদের জন্যই হয়ে থাকে। মুসলমান তো নয়ই বরং কুরআন-হাদীসে কাফের বলে উল্লেখ নেই এমন কোনো নির্দিষ্ট অমুসলমান (আহলে কেতাব) ব্যক্তির প্রতিও লা'নত করা জায়েজ নেই। লা'নতের উপযুক্ত নয় এমন কোনো ব্যক্তির প্রতি লা'নত করা হলে সে লা'নত লা'নতকারীর প্রতিই ফিরে আসে বলে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। অথচ নারীরাই অন্যের প্রতি লা'নত করতে বড়ই ওস্তাদ। তারা কথায় কথায় বলে থাকে, "তোর উপর আল্লাহর লা'নত", 'তুই ধ্বংস হয়ে যা," "আল্লাহর রহমত থেকে দূর হয়ে যা", ইত্যাদি কথা দ্বারা লা'নত করে থাকে। সুতরাং রাসূল (সাঃ) এর হাদীস অনুযায়ী অধিকাংশ লা'নতই যে তাদের প্রতি ফিরে আসে এবং তাদের জাহান্নামে যাবার কারণ হয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাদের দ্বিতীয় বদ অভ্যাস হলো, স্বামীদের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

স্ত্রীদের প্রতি কোনো কিছু দিতে গিয়ে কিম্বা সংসারে কোনো কাজে অথবা ব্যবহারে যদি কোনো এক সময় ঘাটতি হয়ে যায় তা হলে হঠাৎ করেই বলে ফেলে "তোমার সংসারে এসে কোনদিন আমি সুখ পেলাম না" "তোমার কাছে এসে আমি ভালো কিছু পরতে পারলাম না" "কোনো দিন তোমার একটু ভালো ব্যবহার পেলাম না" "জীবন ভর তোমার দাসী হয়ে থাকতে হলো" ইত্যাদি কথা বলে স্বামীর অন্যসব অবদানকে অস্বীকার করে মনে কষ্ট দেয়। মানুষেরই হোক আর আল্লাহরই হোক কোনো অকৃতজ্ঞ বান্দাহকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন না। যার কারণে স্বামীর প্রতি এই অন্যায় অকৃতজ্ঞতার কারণে মেয়েলোকেরা বেশী বেশী দোযখী হবে। যা রাসূল (সাঃ) মে'রাজের রাতে স্বচক্ষে দেখে এসেছিলেন। অতঃপর রাসূল (সাঃ) মেয়েদের দু'টি ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বলেনঃ

مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلِ وَدِينِ أَذْهَبَ لِلَّةٍ الرَّجُلِ الْحَازَمِ مِنْ إِحْدَاكُنَّ

"যারা বুদ্ধি ও দ্বীনদারীতে অপূর্ণ এমন কেউ যে বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান পুরুষের বুদ্ধি তোমাদের কোনো একজন অপেক্ষা বেশী হরণ করতে পারে, তা আমি আর দেখিনি।" এখানে নারীদের পুরুষদের চেয়ে দু'টি ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়েছেঃ (১) তাদের দ্বীনের ঘাটতি এবং (২) বুদ্ধির ঘাটতি। কেননা, পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের দ্বীনের ঘাটতি রয়েছে এবং বুদ্ধিরও ঘাটতি রয়েছে। রাসূল (সাঃ) ঈদগাহে সমবেত মহিলাদেরকে এ দু'টি ঘাটতির কথা উল্লেখ করলে, উপস্থিত মহিলারা রাসূল (সাঃ)কে প্রশ্ন করলো:
وَمَا نُقْصَانُ دِيْنِنَا وَعَقْلِنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ "হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের দ্বীন এবং বুদ্ধির ঘাটতি কি?"
তখন প্রতি উত্তরে রাসূল (সাঃ) তাদের উক্ত দু'টি ঘাটতির প্রথমটির কারণ উল্লেখ করে বললেনঃ
أَلَيْسَ شَهَادَةُ الْمَرْأَةِ مِثْلَ نِصْفِ شَهَادَةِ الرَّجُلِ ؟ قُلْنَ بَلَى فَذُلِكَ مِنْ نُّقْصَانِ عَقْلِهَا

"নারীদের স্বাক্ষ্য কি পুরুষের স্বাক্ষ্যের অর্ধেকের সমান নয়? তারা উত্তরে বললোঃ জি হ্যাঁ! হুজুর বললেনঃ এটাই হলো নারীর বুদ্ধির অপূর্ণতা।"

অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) পুরুষদের চেয়ে নারীদের বুদ্ধির ঘাটতির কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি প্রশ্ন আকারেই তাদের বললেনঃ নারীদের স্বাক্ষ্য কি পুরুষদের স্বাক্ষ্যের অর্ধেকের সমান নয়? তাতে তারা স্বীকার করে বলেছিলো, জি হ্যাঁ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনার কথায় আমরা একমত। সাথে সাথে রাসূলও তাদেরকে বুঝিয়ে দিলেন, এটাই হলো- নারীদের বুদ্ধির ঘাটতি। উপস্থিত মহিলাদের রাসূলের কথায় একমত হবার কারণ হলো, তারা ইতোমধ্যে আল-কুরআনের মাধ্যমে জানতে পেরেছে দু'জন নারীর স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান। সুতরাং তারা আর পাল্টা প্রশ্ন না করে সাথে সাথে স্বীকার করে নিয়েছে।

অপূর্ণ বুদ্ধিঃ কুরআন এবং হাদীসে নারীদের বুদ্ধি পুরুষদের চেয়ে কম বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা আধুনিক বিজ্ঞানে প্রমাণ করে দিয়েছে। বিজ্ঞানীদের সর্বসম্মত মত হলো এই যে, মানুষের বুদ্ধির এই তারতম্য তাদের মগজের তারতম্যের উপর নির্ভর করে। কেননা, একজন নির্বোধ বোকা লোকের মগজ হতে একজন অতি বুদ্ধিমান লোকের মগজের ওজন অনেক বেশী। অনুরূপ ভাবে পুরুষদের মগজের ওজন নারীদের তুলনায় গড়ে অনেক বেশী। পুরুষদের মগজের সাধারণ ওজন ৪৯২ উকিয়া,. আর নারীদের হচ্ছে- ৪৪ উকিয়া। (আরবীয় ওজন)
২৭৮ জন পুরুষের মগজ ওজন করে দেখা গেছে যে, বড় মগজের ওজন ৬৫ উকিয়া এবং সর্বাপেক্ষা ছোট ওজনের মগজ হলো ৩৪ উকিয়া। অপরপক্ষে ২৯১ জন নারীর মগজ মেপে দেখা গেছে যে, সর্বাপেক্ষা বড় মগজের ওজন ৫৪ উকিয়া এবং সবচেয়ে ছোট মগজের ওজন ৩১ উকিয়া। (আল্ মারআতুল মুসলিমা' ফরীদ ওয়াজদী')।

তবে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, কিভাবে একজন পুরুষের উপর মহিলা নেতৃত্ব কর্তৃত্ব করছে? তাহলে এর উত্তর হবে এই যে, আসলে তুলনা হবে বিচক্ষণের সাথে বিচক্ষণের। দেশের কোনো বিচক্ষণ নারীর তুলনা করতে হলে সেই দেশের বিচক্ষণ পুরুষের সাথে তুলনা করতে হবে। একজন বিচক্ষণ নারীর সাথে আর একজন বোকা পুরুষের তুলনা করলেতো চলবে না! কেননা, পুরুষ এবং নারীর জ্ঞান-বুদ্ধি সকলের একই সমান নয়। সুতরাং বিচক্ষণের সাথে বিচক্ষণের তুলনা করলে ঠিকই দেখা যাবে এই বিচক্ষণ, পুরুষের চেয়ে ঐ বিচক্ষণ মহিলার বুদ্ধির ঘাটতি রয়েছে। তবে সমাজে একটা বিষয় চালু আছে যে, মহিলাদের কোনো পরামর্শ নেয়া যাবে না। কেননা, তারা কু-বুদ্ধি দিয়ে আদম (আঃ) কে গন্দম ফল খাওইয়ে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করেছিলো। আসলে কিন্তু ঘটনা তা নয়। কুরআনে উল্লেখ রয়েছে তারা উভয়েই শয়তানের প্ররচনায় আল্লাহর নির্দেশ ভুলে গিয়ে গন্দম ফল খেয়ে ফেলেছিলো। সুতরাং খালি খালি মেয়েদেরকে এককভাবে দায়ী করে তাদের পরামর্শ নেয়া থেকে দূরে থাকা ঠিক হবে না। সংসার এবং দেশ পরিচালনার জন্যও রাসূল (সাঃ) তাঁর বিবিগণের সাথে পরামর্শ করতেন। ফলে আমাদেরও সংসার এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজেদের স্ত্রীদের সাথেও প্রয়োজনে পরামর্শ করা উচিত।

অতপর নারীদের দ্বিতীয় ঘাটতির কারণ উল্লেখ করে রাসূল (সাঃ) বললেনঃ

الَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصْمْ؟ قُلْنَ بَلَى قَالَ فَذَلِكَ مِنْ نُّقْصَانِ دِيْنِهَا

"তোমাদের যখন কারো মাসিক ঋতু হয় তখন তো সে নামাজ রোজা করে না বা করতে পারে না এটা কি সত্য নয়? তারা উত্তরে বললোঃ জ্বী হ্যাঁ। হুজুর বললেনঃ এটাই তাদের দ্বীনের অপূর্ণতা।"

নারীদের দ্বীনের ঘাটতির কারণ মাসিক ঋতু বা হায়েজ। এটা তাদের ক্ষমতাধীন নয়। এটা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে দেয়া এক প্রকারের রোগ। ইসলামী শরীয়তে মেয়েদের দু'টি অবস্থায়- ঋতু কালীন ১০ দিন এবং নেফাস অর্থাৎ বাচ্চা ভূমিষ্ট হবার পর ৪০ দিন পর্যন্ত নামাযও পড়া যায় না এবং রোজাও রাখা যায় ন। অপর পক্ষে পুরুষদের এই ধরনের কোনো কিছুর সম্মুখীন হতে হয় না। ফলে পুরুষেরা উক্ত সময় নামাজ রোজা আদায়ের মাধ্যমে নারীদের চেয়ে দ্বীনের কাজে অগ্রগামী হয়ে যায়। সুতরাং এর দ্বারা বোঝা যায় যে, নারীরা সৃষ্টিগত ভাবে পুরুষের সমান নয়।


শিক্ষা:
• মহিলাদেরকে পরিবেশ তৈরী করে ঈদের মাঠে নিয়ে যাওয়া এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং জুমুয়ার নামাজ জামাতের সাথে আদায়েরও ব্যবস্থা করা। এই জন্য সামাজিক ভাবে পর্দা প্রথা চালু করা এবং ঈদগাহে ও মসজিদে মহিলাদের নামাজ আদায় করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা। 

• মা-বোনদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, যে কোনো কারণেই হোক না কেন নিজের ছেলে-মেয়ে সহ অন্যান্য যে কোনো লোককে (কাফের বাদে) লা'নত বা অভিশাপ বা বদ দোআ না দেয়া। কেননা অভিশপ্ত ব্যক্তি অভিশাপের উপযুক্ত না হলে সেই অভিশাপ নিজের উপর বর্তাবে এবং পরিনামে জাহান্নামে যেতে হবে।

• কোনো স্ত্রী যেন আপন স্বামীর প্রতি কখনো কোনো সময় নাশুকরী বা অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে। কেননা, কৃতজ্ঞ বা অল্পে তুষ্ট নারী যেমন স্বামীর দোআ এবং ভালবাসা পায় তেমনি আল্লাহ্ও সন্তুষ্ট হন।

• নারীদের উচিত বেশী বেশী করে দান-খয়রাত করা। কেননা, রাসূলের নসিহত অনুযায়ী তাদের দু'টি অপরাধ-অভিশাপ এবং নাশুকরির কারণে জাহান্নাম থেকে বাঁচার বিশেষ ব্যবস্থা হলো দান-খয়রাত করা।
• পুরুষদের উচিত নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সংসার এবং নিজের সামাজিক দায়-দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরামর্শ করা। এতে সংসারে শৃংখলা এবং শান্তি থাকে। তবে পুরুষদেরকে স্ত্রীদের পরামর্শ বাছাই করার যোগ্যতা থাকতে হবে। কেননা, নারীদের সকল পরামর্শ গ্রহণ করা ঠিক হবে না।


0 Comments: