Close
Showing posts with label জীবনী. Show all posts
Showing posts with label জীবনী. Show all posts

Saturday, January 11, 2025

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫২তম শহীদ কাজী মোশাররফ হোসাইন || ০৪ আগস্ট ১৯৭১ - ১২ জানুয়ারি ১৯৯৩


শাহাদাতের ঘটনা:

ইসলামের জন্য যুগ যুগান্তরে সাহসী মুজাহিদ ছিলেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন। দ্বীনের পথে তেমনি একজন সাহসী সৈনিক মোশাররফ হোসাইন। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা পিতার যোগ্যতম এক সন্তান। বাবা-চাচা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন দেশকে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী দলের ছাত্রসংগঠনের ফ্যাসিবাদী আচরণের নির্মম শিকার হন শহীদ কাজী মোশাররফ হোসাইন।

পারিবারিক পরিচয়:

শহীদ কাজী মোশাররফ হোসাইন ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার জয়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বাবা কাজী সামছুল হুদা তার স্ত্রীকেসহ পরিবারকে সীমান্তের ওপারে ভারতের করিমাটিয়া রেখে দেশে চলে আসেন মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্যে। স্ত্রী হোসনে আরা তার একমাত্র কন্যা কাজী দিলারা আকতারকে নিয়ে ভারতে বসবাস করতে লাগলেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই সামছুল হুদার পরিবারে নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া, আদরের কন্যা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টা করে বাঁচানো গেল না দিলার আকতারকে। মেয়ের শোকে ভেঙে পড়ে মা হোসেনে আরা। ঠিক সে মুহূর্তে অমবস্যার কালো আঁধারের মাঝে দেখা গেলো পূর্ণমিার চাঁদ। ৪ আগস্ট ১৯৭১। পৃথিবীতে আসলেন কাজী মোশাররফ হোসাইন। যাকে পেয়ে মা হোসনে আরা বেগম মেয়ের শোক কিছুটা কম অনুভব করতে লাগলেন। কিন্তু না; হোসনে আরা বেগমের সে আনন্দ বেশি স্থায়ী হতে দেয়নি মুজিববাদী ছাত্রলীগ। একদিন মোশাররফের মত নিষ্পাপ উদীয়মান তরুণকেও মুজিববাদী হায়েনাদের নির্মম ব্রাশফায়ারে শিকার হতে হয়েছে।

শিক্ষাজীবন:

শিক্ষার হাতে খড়ি পিতার কাছেই। ভর্তি করালেন শুভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতি ক্লাসেই ১ম স্থান অধিকার করে কৃতিত্বের সাথে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলেন। ভর্তি হলেন জয়পুর সরোজিনী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত মেধার সাক্ষ্য রাখলেন আগের মতই। এসএসসি পাস করলেন ১ম বিভাগে। ভর্তি হলেন ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজে। শরিক হলেন শহীদী কাফেলায়। এইচএসসি পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হলেন ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম কলেজে। গণিত বিভাগের ছাত্র ছিলেন মোশাররফ হোসাইন। তিনি শুধু মেধাবী ছাত্রই ছিলেন না বরং সুবক্তা ছিলেন। তাইতো তার মুক্তিযোদ্ধা চাচা তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার জন্য নিয়ে যেতেন।

সাংগঠনিক জীবন:

কাজী মোশাররফ হোসাইন সংগঠনের কর্মী ছিলেন। ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজে অধ্যায়নকালে সংগঠনে যোগ দেন। মেধাবী ছাত্র কাজী মোশাররফ হোসাইন পড়াশোনা ছাড়া অন্য সময়গুলো দাওয়াতি কাজে লাগাতেন। তার চরিত্র ছিল চুম্বকের মত আকর্ষণীয়। তিনি তার দাওয়াতি চরিত্র দিয়ে সহপাঠী বন্ধু বান্ধব সকলকে আকৃষ্ট করেছিলেন। শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে তিনি ইসলামী আন্দোলনের কাজ করতেন।

শাহাদাতের হৃদয়বিদারক ঘটনা:

১২ জানুয়ারি ১৯৯৩ এর সকালবেলা কাজী মোশাররফ হোসাইন তাঁর রুমমেটদের শোনালেন এক দুঃস্বপ্নের কথা। ছাত্রলীগের গুন্ডারা তার বাবাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে লাশ হস্তান্তরে জন্য বিশ হাজার টাকা দাবি করে। হঠাৎ স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। সারাদিন আনমনে কেটে যায় তার। বিকালে কখনও ফুটবল না খেললেও সেদিন ফুটবল খেলতে নামেন প্যারেড ময়দানে। অনেকের চেয়ে ভাল খেললেন তিনি। মনও কিছুটা হালাকা হয়েছে তার। মাগরিবের নামাজ পড়ে সরলেন পড়ার টেবিলে। কিছুক্ষণ পর খবর এলো শিবির কর্মী জিয়াকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগ। প্রতিবাদে মিছিল বের হল। মিছিলে যোগদান করলেন মোশাররফ। মিছিল চলছিল সিরাজউদদৌলা রোড হয়ে আন্দরকিল্লার দিকে। সামনের সারিতে দৃঢ়পদে চললেন কাজী মোশাররফ । মিছিল যখন দেওয়ান বাজার সাব এরিয়ায় পৌঁছল তখন গলির অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে ব্রাশফায়ার শুরু করল। বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হলো সামনে থাকা মোশাররফ, মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। পান করলেন শাহাদাতের অমিয় পেয়ালা। আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেলেন তিনি। অকালে ঝরে গেল একটি প্রাণ। প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই ঝরে গেল একটি তাজা গোলাপ। ইসলামী জীবনব্যবস্থা কায়েমের পথে অগ্র পথিক হয়ে রইলেন আমাদের মাঝে। শহীদের মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেন সহপাঠী বন্ধু, শিক্ষক সবাই। তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. আব্দুস সবর প্রিয় ছাত্রের মৃত্যুতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শহীদের কফিন গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে মা প্রশ্ন করেন কোন অপরাধে তার সন্তানকে জীবন দিতে হল। যদি তার ছেলে অপরাধ না করে তবে তাকে ফিরিয়ে দিতে। মা সন্তানকে ফিরে পাবেন না, সে জন্য ব্যথিত হৃদয়ে আজীবন কাটাবেন। ছেলে কিন্তু ব্যথিত নয়। কারণ তার তিনি জীবন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গল্প করছেন জান্নাতের সুবজ পাখিদের সাথে।
একনজরে শহীদ কাজী মোশাররফ হোসাইন:

-নাম: কাজী মোশাররফ হোসাইন
-পিতার নাম : মাস্টার কাজী সামছুল হুদা
-মাতার নাম : হোসনে আরা বেগম।
-ভাইবোনদের সংখ্যা : ২ ভাই, ৩ বোন
-ভাইবোনদের মাঝে অবস্থান : সবার বড়।
-স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম- জয়পুর, পো: শুভপুর, -থানা: ছাগলনাইয়া, জেলা: ফেনী।
-জন্মতারিখ : ৪ আগস্ট ১৯৭১
-শিক্ষাগত যোগ্যতা : অনার্স ২য় বর্ষ, গণিত বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ
-শহীদ হওয়ার তারিখ : ১২.০১.১৯৯৩ সাল (১১ তারিখ সন্ধ্যায় আহত)
-শহীদ হওয়ার স্থান : দেওয়ান বাজার সাব এরিয়া, চট্টগ্রাম
-কবরস্থান : নিজবাড়ির আঙিনা
-যে শাখার শহীদ : চট্টগ্রাম মহানগরী
-সাংগঠনিক মান : কর্মী
-যাদের হাতে শহীদ : মুজিববাদী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী।


•শহীদের চাচার বক্তব্য:

শহীদের চাচা কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কেন সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। আমরা কি জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছিলাম সন্তান হারাবার জান্য? সন্ত্রাস মদদ দানের জন্য? হোসনে আরা আজো কাঁদেন পুত্রশোকে। কেউ তাকে দেখতে গেলে ছেলের মতই ভাববেন তাদেরকে। এক সন্তানকে হারিয়ে লক্ষ সন্তানের মাতা আর সামছুর হুদা লক্ষ ছেলের পিতা হলেন। শহীদ মোশাররফ তার সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। জান্নাত থেকে তাকিয়ে আছেন আমাদের দিকে। দায়িত্ব আমাদের এ জমিনে কালেমার পাতাকা উড়াবার। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কষ্ট পাবেন, অভিযোগ করবেন আমাদের বিরুদ্ধে। আমাদের দাঁড়াতে হবে আখেরাতের কাঠগড়ায়।

Sunday, December 29, 2024

ইবনে আল-হাইসাম: জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকবর্তিকা ও আধুনিক বিজ্ঞানের পথিকৃৎ


ইবনে আল-হাইসাম (৯৬৫–১০৪০): সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

আবু আলী আল-হাসান ইবনে আল-হাইসাম, যিনি আলহাজেন (Alhazen) নামে বেশি পরিচিত, ছিলেন ইসলামের স্বর্ণযুগের একজন কিংবদন্তি বিজ্ঞানী। তার গবেষণায় অপটিক্স, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ইরাকের বসরায় জন্মগ্রহণকারী এই বিজ্ঞানী তার গবেষণা ও আবিষ্কারের জন্য আজও সম্মানিত।

• ইবনে আল-হাইসামের বৈজ্ঞানিক অবদান

১. অপটিক্স ও আলোর গতি
ইবনে আল-হাইসামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ "কিতাব আল-মানাযির" (Book of Optics)। এতে তিনি আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ ব্যাখ্যা করেন।

চোখের গঠন ও দৃষ্টির ব্যাখ্যা: তিনি প্রথম ব্যাখ্যা করেন যে চোখ থেকে রশ্মি বের হয় না; বরং আলোর রশ্মি চোখে প্রবেশ করে চিত্র তৈরি করে।

পিনহোল ক্যামেরা আবিষ্কার: তার গবেষণা থেকেই আধুনিক ক্যামেরার ধারণা গড়ে ওঠে।

আলোর বক্রতা ও প্রতিবিম্ব: তিনি বক্র ও সমতল আয়নার মাধ্যমে আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিবিম্বের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেন।

লেন্সের ধারণা: পরবর্তীতে এই গবেষণা থেকেই চশমা, টেলিস্কোপ ও মাইক্রোস্কোপের ভিত্তি তৈরি হয়।

২. গণিত ও জ্যামিতি:
পার্থিব জ্যামিতির ব্যবহার: ইবনে আল-হাইসাম পরিপ্রেক্ষিত ও আলোর গতি বোঝার জন্য জ্যামিতির ব্যবহার করেন।

অপরিবর্তনশীল রশ্মি: তার গবেষণাগুলো গণিতের ত্রিভুজ ও কোণের তত্ত্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসের ভিত্তি: গণিতের এই শাখায় তার কাজ আধুনিক গাণিতিক গবেষণার পথ দেখিয়েছে।

৩. জ্যোতির্বিদ্যা:
তিনি চাঁদের আলোর প্রতিবিম্ব ও গ্রহের গতি নিয়ে গবেষণা করেন।

তার আবিষ্কারগুলো ইউরোপের মধ্যযুগীয় জ্যোতির্বিদ্যায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।

চাঁদের প্রকৃতি ও আলোক বিচ্ছুরণ নিয়ে তিনি পরীক্ষামূলক গবেষণা চালান।

৪. পদার্থবিজ্ঞান:
তরল পদার্থের চাপ ও গতিবিধি নিয়ে তিনি গবেষণা করেন।

তিনি পানির প্রবাহ বিশ্লেষণ করেন যা আধুনিক জলবিদ্যুৎ প্রকৌশলের ভিত্তি স্থাপন করে।

ভারসাম্য ও মাধ্যাকর্ষণ নিয়ে তার গবেষণাগুলো নিউটনের গতিসূত্রের ভিত্তি গড়ে তোলে।

৫. বিজ্ঞান পদ্ধতির জনক:
ইবনে আল-হাইসামই প্রথম বিজ্ঞানকে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে যাচাইয়ের ধারায় নিয়ে আসেন।

তিনি পরীক্ষামূলক পদ্ধতির ওপর জোর দেন, যা আধুনিক বিজ্ঞানীদের জন্য পথপ্রদর্শক।

তার এই পদ্ধতি পরবর্তীতে গ্যালিলিও ও বেকনের 
গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


• ইবনে আল-হাইসাম ও ইসলামিক দর্শন:
ইবনে আল-হাইসাম কুরআনের জ্ঞান ও চিন্তার নির্দেশনাকে অনুসরণ করে গবেষণায় ব্রতী হন।

১. কুরআনের প্রেরণা:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
"তারা কি দৃষ্টি দেয় না আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি বিষয়ে?" (সূরা আল-আ’রাফ: ১৮৫)

এ আয়াত তাকে মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে অনুপ্রাণিত করে।

২. জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ:
"তোমরা বল, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?" (সূরা যুমার: ৯)

এই আয়াত ইবনে আল-হাইসামকে সত্যের অনুসন্ধানে অনুপ্রাণিত করে।


• পশ্চিমা বিশ্বের শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতি:
ইউরোপে তার প্রভাব:
১২ শতাব্দীতে ইবনে আল-হাইসামের গ্রন্থগুলো ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়।

রজার বেকন, কেপলার, এবং গ্যালিলিও তার গবেষণা থেকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হন।

তার "Book of Optics" ৭০০ বছরের বেশি সময় ধরে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হয়।

• আধুনিক সম্মাননা:
২০১৫ সালে ইউনেস্কো তার সম্মানে "International Year of Light" ঘোষণা করে।

নাসা তার নাম অনুসারে চাঁদে একটি গর্তের নাম রেখেছে—"Alhazen Crater"।

বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা তাকে ‘আধুনিক অপটিক্সের জনক’ বলে অভিহিত করেন।

উপসংহার:
ইবনে আল-হাইসাম শুধু একজন বিজ্ঞানী ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন চিন্তাবিদ এবং অনুসন্ধানী মননশীলতা ও কুরআনের নির্দেশনার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তার গবেষণা এবং অবদান আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি গড়েছে।

কুরআনের আয়াত দিয়ে শেষ করি:
"তোমরা বল, হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।" (সূরা ত্বাহা: ১১৪)

ইবনে আল-হাইসাম আমাদের শিক্ষা দেন কীভাবে বিশ্বাস ও যুক্তির সমন্বয়ে আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়া যায়। তার গবেষণা ইসলামের বিজ্ঞানমনস্ক ঐতিহ্য এবং আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপনের অন্যতম ভিত্তিপ্রস্তর।

Thursday, December 12, 2024

জান্নাতি পাখি || শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা রহ.



মিথ্যার দেয়াল তুলে ধ্রুব সত্যকে কখনো আড়াল করা যায় না। সত্য উদ্ভাসিত হয় তার নিজস্ব আলোয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ফাঁসী দেয়া হয় জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল সাংবাদিক নেতা শিক্ষাবিদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে। সরকার যুদ্ধাপরাধী সাজিয়ে ফাঁসী দিলেও শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা আজ স্মরণীয় শত কোটি প্রাণে; ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গকারী এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি সত্যপ্রেমীদের হৃদয় থেকে কখনো মুছে যাবেন না, আলোর পথের যাত্রীদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।

১৯৪৮ সালের ২রা ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলাস্থ সদরপুর উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গী গ্রামে নিজ মাতুলালয়ে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সানাউল্লাহ মোল্লা ও মাতার নাম বাহেরুন্নেসা বেগম। আব্দুল কাদের মোল্লা ছিলেন নয় ভাইবোনের মাঝে ৪র্থ। তার জন্মের কিছুকাল পরে তার পিতা-মাতা সদরপুরেরই আমিরাবাদ গ্রামে এসে বাড়ি করে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন।

প্রাথমিক শিক্ষাঃ 
তিনি মেধাবী একজন ছাত্র হিসেবে ১৯৫৯ ও ১৯৬১ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনিষ্টিটিউট থেকে প্রথম শ্রেণীতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। ফরিদপুরের বিখ্যাত রাজেন্দ্র কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে ১৯৬৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় উত্তীর্ন হন। ১৯৬৮ সালে তিনি একই কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন। কিন্তু প্রবল আর্থিক সংকটের কারনে এরপর তাকে শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করতে হয়। পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া হয়নি তখন আর। ফরিদপুরের শিব সুন্দরী (এস এস) একাডেমি নামক একটি স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেন কিছু কাল।

উচ্চশিক্ষাঃ 
১৯৬৯ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে এমএসসি করার জন্যে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণকালে তিনি ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।মুক্তিযুদ্ধের কারনে ১৯৭১ সালে তিনি মাস্টার্স পরীক্ষা না হওয়ায় তিনি বাড়ি চলে যান। পরবর্তীতে তিনি ১৯৭২ এর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। যুদ্ধের সময় প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আরো অনেকের মত আবদুল কাদের মোল্লার লেখাপড়াতেও ছন্দ পতন ঘটে। ১৯৭৪ সালে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর (ইন্সিটিউট অব এডুকেশনাল রিসার্চ) বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালে তিনি শিক্ষা প্রশাসনের ডিপ্লোমায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে আবার ১৯৭৭ সালে শিক্ষা প্রশাসন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রীতে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হন।

কর্মজীবনঃ 
আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঢাকার বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এমএড পরীক্ষার রেজাল্টের পরে তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন এবং পরে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এ সংস্কৃতি কর্মকর্তা হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে রিসার্চ স্কলার হিসাবে বাংলাদেশ ইসলামী সেন্টারে যোগ দেন। গৌরব-সাফল্যের ধারাবহিকতায় উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, রাইফেল পাবলিক স্কুল এবং মানারাত স্কুলের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮১ সালে ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় সাব-এডিটর পদে যোগদান করেন তিনি। শিক্ষকতা পেশায় যে সত্যের পরশ পেয়েছিলেন, তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তিনি সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। অত্যন্ত অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এ সময়ে তাঁর ক্ষুরধার ও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রকাশ হতে থাকে দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে। বীক্ষণ ছদ্মনামে তার লেখা আর্টিকেল গুলো সচেতন পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বৈবাহিক জীবনঃ 
জনাব মোল্লা দিনাজপুর নিবাসী বেগম সানোয়ার জাহানের সাথে ১৯৭৭ সালের ৮ অক্টোবর তারিখে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বেগম সানোয়ার জাহান ইডেন কলেজ থেকে পড়াশুনা করেছেন। তিনিও শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার মত বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন ও ইডেন কলেজের ছাত্রী ইউনিয়নের জিএস ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বেগম সানোয়ার জাহান তার বাবার সাথে কুষ্টিয়াতে ছিলেন ও সক্রিয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছিলেন। বেগম সানোয়ার জাহানদের বাসা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খাবার যেত। দুই পুত্র ও চার কন্যার সুখী সংসার তাদের। সব সন্তানই দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করেছেন। পরিবারের সকলেই ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত। বেগম সানোয়ার জাহান জামায়াতের রুকন ও দায়িত্বশীলা ।

সাংবাদিক কাদের মোল্লাঃ 
সেসময়েরই একজন নির্ভীক সাংবাদিক শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা। বর্ণাঢ্য জীবন নাটকের শেষ দৃশ্যে তিনি আমাদের কাছে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হলেও জীবনের সবচেয়ে গৌরবোজ্জল সময়টা অতিবাহিত করেছেন একজন নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে।
সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যে প্রত্রিকাগুলো তখন গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে সর্বমহলের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিল তাদের মধ্যে ‘দৈনিক সংগ্রাম’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আর এ পত্রিকাটিতে দক্ষ হাতে দায়িত্ব পালনের ফলে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য মনোনীত হন। সাংবাদিকতা ও লেখালেখির পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিকদের দাবী আদায়ের সংগ্রামে। ফলে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য মনোনীত হন। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ ও ১৯৮৪ সালে পরপর দু’বার তিনি ঐক্যবদ্ধ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। অন্তরে দ্রোহ আর বিপ্লবের চেতনা লালন করেও সদা হাস্যোজ্জল এ মানুষটি ছিলেন সাংবাদিক আড্ডার প্রাণ-ভ্রমরা। তার রসময় গল্পকথার সজীবতায় ভরে উঠতো গনমানুষের চেতনার প্রতীক জাতীয় প্রেসক্লাব।

কিন্তু একজন সাংবাদিকের জীবন সাধারণভাবেই কুসুমাস্তীর্ণ হয় না। কখনো সমাজের বিপথগামী অংশ, কখনো কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল, আবার কখনওবা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তির রোষানলে পড়তে হয় তাকে। সত্য-মিথ্যার চিরন্তন দন্দ্বে উৎসর্গিত হয় সাংবাদিকের জীবন। চারপাশের চেনাজন, পরিচিত বন্ধুমহল একসময়ে পরিণত হয় তার শত্রুতে। হানে প্রাণঘাতি ছোবল। যে ছোবলের রূপ হয় নানারকম। মানসিক যন্ত্রণায় বিপন্নতা, শারিরিক আঘাতে পঙ্গুত্ববরণ, প্রাণঘাতি হামলায় মৃত্যু, কারাবন্দিত্বের নিঃসঙ্গ যাতনা কিংবা প্রহসনের বিচারে জীবনাবসান। এসবই ছিল যুগে যুগে সাংবাদিক জীবনের অনিবার্য উপাদান। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার জীবনেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।

সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় একসময় সাংবাদিকতার পেশাকে বিদায় জানাতে হয় তাঁকে। কিন্তু যে পেশা তার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে এর মহত্বকে তিনি ধারণ করতেন সবসময়। তাইতো তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে ছিলেন সাংবাদিক সমাজের অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে। দৈনিক সংগ্রাম অফিসের প্রতিটি ধুলিকণা এখনো বহন করে বেড়াচ্ছে কাদের মোল্লার স্মৃতি ।

রাজনৈতিক জীবনঃ 
শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার রয়েছে সংগ্রামী রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যায়ন কালেই তিনি কম্যূনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার পর তাফহীমুল কুরআনের হৃদয়স্পর্শী ছোঁয়ায় তিনি ইসলামের প্রতি প্রবল আকর্ষিত হন এবং আলোকিত জীবনের সন্ধান পেয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে তিনি ছাত্রসংঘের তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান শাখায় যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে তিনি এ সংগঠনের সদস্য হন। ছাত্রসংঘের শহিদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারী ও একই সাথে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতের রুকন হন। তিনি অধ্যাপক গোলাম আযমের ব্যাক্তিগত সেক্রেটারি এবং ঢাকা মহানগরীর শূরা সদস্য ও কর্মপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে অল্পদিনের ব্যাবধানেই জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশ-এ-শূরার সদস্য হন। ১৯৮২ সালে তিনি ঢাকা মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারী ও পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালের প্রথম দিকে ঢাকা মহানগরীর নায়েব-এ-আমীর, অতঃপর ১৯৮৭ সালে ভারপ্রাপ্ত আমীর এবং ১৯৮৮ সালের শেষ ভাগে তিনি ঢাকা মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন যা বাতিলের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাড়ায়।

১৯৯১ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তিনি জামায়াতের প্রধান নির্বাচনী মুখপাত্র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯১ সালে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও ২০০০ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মনোনীত হন। তিনি ২০০৪ সালের মার্চ মাসে স্বল্প সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। উক্ত দায়িত্বের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে তিনি চারদলীয় জোটের লিয়াজো কমিটির গুরুত্বপূর্ন সদস্য হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন।

স্বাধীন বাংলাদেশর প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা। বিশেষ করে ৯০এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে লিয়াঁজো কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। তখন কমিটিতে গৃহীত আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কে ব্রিফিং করতেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম এবং তা বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করতেন শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা। লিয়াঁজো কমিটিতে বিভিন্ন সময়ে নানা দায়িত্ব পালন করার কারনে বিএনপি দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সহ উভয় দলের সিনিয়র নেত্রীবৃন্দের সাথে আন্দোলনের নীতি নির্ধারণী সভাতে মিলিত হতেন তিনি।

জনাব মোল্লাকে বিভিন্ন মেয়াদে চার চারবার জেলে যেতে হয়। আইয়ুব সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের দায়ে ১৯৬৪ সালে প্রথম বারের মত তিনি বাম রাজনীতিক হিসেবে গ্রেপ্তার হন। ১৯৭১ সালে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। কিন্তু স্থানীয় জনতার বিক্ষোভের মুখে পুলিশ তাকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন কাস্টোডী থেকেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। জেনারেল এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কারনে আব্দুল কাদের মোল্লাকে আবারও আটক করে রাখা হয় ১৯৮৫ সালের ২২শে এপ্রিল থেকে ১৪ই অগাস্ট । প্রায় চারমাস আটক থাকার পরে উচ্চ আদালত তার এ আটকাদেশকে অবৈধ ঘোষণা করলে তিনি মুক্ত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারী তত্তাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমদের সাথে একই দিনে গ্রেফতার হন। সাত দিন পরে তিনি মুক্ত হন।

শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার কূটনীতিকদের সাথে ছিল গভীর সম্পর্ক। সদা হাস্যোজ্জল ও রসময় কাদের মোল্লার কথা ছাড়া কোন প্রোগ্রাম জমজমাট হতো না। জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি নানা কূটনীতিক প্রোগ্রামে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। জনাব মোল্লা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করেছেন। তিনি আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, ভারত সহ নানা দেশ সফর করেছেন।

জনাব মোল্লা সক্রিয় ভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন। যার মধ্যে বাদশাহ ফয়সাল ইন্সটিটিউট, ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি ও এর স্কুল, সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী রিসার্চ একাডেমী, সদরপুর মাদরাসা ও এতিমখানা, ফরিদপুর জেলার হাজিডাঙ্গি খাদেমুল ইসলাম মাদরাসা ও এতিমখানা, সদরপুর আল-আমিন অন্যতম। এছাড়াও তিনি ঢাকার গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ছিলেন।

জনাব মোল্লা দেশ বিদেশের সমসাময়িক বিষয়ের উপর একাধিক কলাম ও প্রবন্ধ লিখেছেন। দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংগ্রাম, পালাবদল, মাসিক পৃথিবী, কলম ইত্যাদি নানা জায়গায় তার লেখা ছাপা হয়েছে। প্রত্যাশিত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে দেশে বিদেশে তিনি বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়ামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে তার গুরুত্বপূর্ণ লেখা পাওয়া যায়। তার লেখা কলাম ও প্রবন্ধ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ও বস্তুবাদ ও কম্যূনিজমের উপরে তার বৈজ্ঞানিক সমালোচনা শিক্ষিত মহলের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় তিনি প্রথমে আব্দুল কাদের নামে লেখা শুরু করেন।পরবর্তীতে তিনি বীক্ষণ ছদ্মনামে লেখা শুরু করেন ও উনার লেখা গুলো খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, সমসাময়িক সমস্যা ইত্যাদি নানা বিষয়ে তার লেখা মানুষের চিন্তা-চেতনার জগতে ঢেউ তুলতে শুরু করে।

জনাব মোল্লা নিয়মিত কুরআন পড়তে ও কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পছন্দ করতেন। তিনি সাংগঠনিক ব্যস্ত সময় মধ্যেও তিনি বিভিন্ন বিখ্যাত লেখক, কবি যেমন আল্লামা ইকবাল, সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী, সাইয়্যেদ কুতুব ইত্যাদি নানা লোকের লেখা পড়তে পছন্দ করতেন।

শাহাদাতঃ 
২০১০ সালের ১৩ জুলাই সরকার তাকে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। ট্রাইবুনালের রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। এরপর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগে স্থাপিত গণজাগরণ মঞ্চের দাবি অনুযায়ী সরকার আইন সংশোধন করে আপিল দায়ের করে। সংশোধিত আইনের ভিত্তিতে তাকে ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হয়। আবদুল কাদের মোল্লা ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ পাননি। এমনকি রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পূর্বেই তড়িঘড়ি করে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তাঁকে ফাসি দেয়ার প্রায় দেড় বছর পর তার রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এসব ঘটনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি বিচারের নামে কত বড় প্রহসনের শিকার হয়েছেন!

Tuesday, July 9, 2024

মকবুল আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ : জীবন ও কর্ম

মকবুল আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ : জীবন ও কর্ম

ফেনী জেলার অন্তর্গত দাগনভূঞা উপজেলার ৩নং পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ছায়াঘেরা, পাখি ডাকা সবুজের সমারোহে বেষ্টিত এক সুন্দর গ্রামের নাম ওমরাবাদ। যার পূর্ব পাশ ঘেঁষে বয়ে যাচ্ছে সিলোনিয়া নদী। এ নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম জোতদার পেশায় সার্ভেয়ার (আমিন) জনাব নাদেরুজ্জমানের বাড়ী। সে বাড়ীতে ১৯৩৯ সালের ৮ আগস্ট জনাব নাদেরুজ্জামান ও জনাবা আঞ্জিরের নেছার ঘর আলোকিত করে এক শিশু জন্মগ্রহণ করে। তারা এ প্রিয় সন্তানটির নাম রাখেন মকবুল আহমাদ। এ মকবুল আহমাদ ছিলেন ৫ ভাই ৩ বোনের মধ্যে পঞ্চম আর ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। সে শিশুটি কালক্রমে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে একসময় যে বিখ্যাত হয়ে উঠবে সেদিন মা-বাবা, ভাই-বোন বা গ্রামবাসী কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু সেটাই আজ বাস্তব সত্য।

ওমরাবাদ গ্রামের নাম ওমরাবাদ কেন হলো সে ইতিহাস জানা নেই। তবে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রা.) এর নামে নামকরণের পেছনে সে গ্রামের ভূমিপুত্রদের কেউ ইনসাফ আর আদলে সে গ্রামকে অনন্য হিসেবে অত্যুজ্জল ইতিহাস রচনায় কালের সাক্ষী করে রাখার মানসে করেছেন কিনা কে জানে? ওমরাবাদ গ্রামের সকল অধিবাসীই মুসলিম। সে গ্রামের শিশু মকবুল আহমাদ তার শৈশব, কৈশর, যৌবন আর বার্ধক্যের ক্রান্তিকালসহ পুরো জীবন ব্যাপী হযরত ওমরের মত ঈমানী দৃঢ়তা, অসীম সাহসীকতা, কঠিন আমানতদারী, ইনসাফ-আদল আর মানব কল্যাণে ভূমিকা রেখে ওমরের আদর্শকে আবাদ করে গেছেন এ জমিনে। এ মকবুল আহমাদের কারণে হয়তোবা ওমরাবাদ নামকরণের সার্থকতা একদিন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। রাহবারের পাঠকদের উদ্দেশ্যে জনাব মকবুল আহমাদের জীবন ও কর্ম সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো:

শিক্ষা জীবন:
জনাব মকবুল আহমাদের যখন প্রাইমারী স্কুলে যাওয়ার বয়স তখন চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বর্তমান বাংলাদেশ তখন ব্রিটিশ কলোনী। আর ফেনীতে ছিল ব্রিটিশদের বৃহৎ বিমান বন্দর। সে বিমান বন্দর এখন নেই। কিন্তু বিমান বন্দরের রানওয়ে আর হ্যাঙ্গারগুলো কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে। এ বন্দর থেকে প্রতিনিয়ত বোমা নিয়ে উড়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ বিমান। এখানে ওখানে বোমা পড়ছে, আকাশ লড়াইয়ে বিমান বিধ্বস্ত হচ্ছে। বিমানের ধ্বংসাবশেষ এদিক সেদিক ছিটকে পড়ছে। সে এক কঠিন পরিস্থিতি। এর মাঝে আবার সে সময় সুনসান পাকা রোড-ঘাট ছিল না। স্কুল ছিল অনেক দূরে দূরে। ভাগ্যবান ছাড়া বেশী শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেত না সে সময়। আর যারা এসব দূর-দূরান্তের স্কুলে যেত তাদের ভরসা ছিল স্রষ্টার দেয়া দু'টি পা। মাইলকে মাইল মেঠো পথে ধুলো কাদা মাড়িয়ে সংগ্রাম করেই লেখা পড়া করতে হতো। মকবুল সাহেবের বাড়ীর পাশে নদীর উপর তখনকার সময় ভাল কোন পুল কালভার্ট ছিল না। এসব প্রাকৃতিক বাধা আর যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে মকবুল সাহেবের প্রাইমারী শিক্ষা বর্তমানের শিশুদের চাইতে সম্ভবত দেরীতে শুরু হয়েছিল। তাই মকবুল সাহেব সংগ্রামী জীবন অতিক্রম করে প্রাইমারী শিক্ষা শেষ করেছেন পারিবারিক পরিসরে ও গ্রামীন স্কুলে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এক সময়কার অফিস সম্পাদক জনাব অধ্যাপক মাযহারুল ইসলাম ছিলেন মকবুল সাহেবের দীর্ঘ দিনের দ্বীনি আন্দোলনের সহকর্মী। তিনি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেন- "পূর্বচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে দাগনভূঞার কামাল আতাতুর্ক হাইস্কুলে ভর্তি হন। অতঃপর তিনি ফেনী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন।" কিন্তু তিনি নবম শ্রেণিতে পাইলট হাইস্কুলে ভর্তি হয়েও সেখান থেকে ম্যাট্টিক পরীক্ষা দেননি। কারণ বাড়ী থেকে পাইলট হাইস্কুলে পায়ে হেটে ক্লাস করতে কি পরিমাণ কষ্টকর ছিল তা শুধু বর্তমানে কল্পনাই করা যায়। বর্তমান সময়ে মোটর সাইকেলে ফেনী থেকে মকবুল সাহেবের বাড়ী যেতে ৩০/৪০ মিনিটের বেশী সময় লাগে। যা হোক সে কারণে তিনি স্কুল পরিবর্তনে বাধ্য হয়ে জায়লস্কর হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৫৭ সালে কৃতিত্বের সাথে এ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে ফেনী কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাস করেন এবং ১৯৬২ সালে বি.এ পাস করেন। এখানে মকবুল সাহেবের জাগতিক শিক্ষার সমাপ্তি। কিন্তু দ্বীনি শিক্ষা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

কর্ম জীবন:
বি.এ পাশ করার পর তিনি শিক্ষকতার মত মহান পেশাকে গ্রহণ করেন। এ ব্যাপারে জনাব অধ্যাপক আবু ইউসুফ লিখেন- “প্রথমে তিনি ফেনী উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ঐ সময়ের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরিষাদি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কথিত আছে যে, উক্ত বিদ্যালয়ে বিভিন্ন নিয়ম কানুন শক্তভাবে পালন করা হতো। মকবুল সাহেব তখন জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করার কারণে তার আচার আচরণে ইসলামের রীতিনীতির প্রতিফলন ঘটেছিল। তাই উক্ত বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী জনাব আবদুল খালেককে তিনি নাম ধরে না ডেকে খালেক ভাই বলে সম্বোধন করার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতির বিপরীত আচরণের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক প্রধান শিক্ষক তাঁকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন আবদুল খালেক ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হলেও সে তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। সুতরাং তাকে ভাই ডাকতে সমস্যা কোথায়? তিনি সরিষাদি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ বছর শিক্ষকতা করেছিলেন। পরবর্তীতে বর্ণিত ঘটনার জের ধরে তিনি উক্ত বিদ্যালয়ের চাকুরী ত্যাগ করেন এবং শহরে অবস্থিত ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলে চাকুরী গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন।

সাংবাদিকতায় মকবুল আহমাদ:
অধ্যাপক মাযহারুল ইসলাম লেখেন- "১৯৭০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতীয় দৈনিক 'দৈনিক সংগ্রাম' পত্রিকার ফেনী মহকুমার নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সত্তর দশকের দিকে 'বাংলাদেশের হোয়াইটগোল্ড' শিরোনামে বাংলাদেশের কক্সবাজারের চিংড়ি মাছের উৎপাদনের ওপর তার লেখা একটি প্রতিবেদন ব্যবসায়ী জগতে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিষয় ছিল 'বাংলাদেশের হোয়াইট গোল্ড' (চিংড়ি

সম্পদ) সৌদি আরবের 'তরল সোনা (পেট্রোল)' কে হার মানাবে।" তিনি সুযোগ পেলে পত্র পত্রিকা বা সাময়িকীতে লেখালেখি করতেন এবং প্রতিভাবানদের লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় উৎসাহিত করতেন। মিড়িয়ার গুরুত্ব তাঁর কাছে পরিষ্কার ছিল। তাই তাঁর পরিচিত কেউ সাংবাদিকতায় ঢুকলে এ পেশায় টিকে থাকার জন্য তাকে প্রণোদনা দিতেন। যত বাধা আসুক এ পেশা পরিত্যাগ করতে নিরুৎসাহিত করতেন।

সাংগঠনিক জীবন:

১৯৬২ সালে : জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান।

১৯৬৬ সালে : জামায়াতে ইসলামীর রুকন শপথ নেন।

১৯৬৭-৬৮ সালে : ফেনী শহর নাযেমের দায়িত্ব পালন।

১৯৬৮-৭০ সাল : ফেনী মহকুমা সভাপতির দায়িত্ব পালন।

১৯৭০ সালে : ফেব্রুয়ারী মাস থেকে ১৯৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত নোয়াখালী জেলা আমীরের দায়িত্ব পালন।

১৯৭১ সালে : বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি সংগঠনের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। তখন চট্টগ্রাম বিভাগ ছিল চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও সিলেট এর বৃহত্তর জেলা নিয়ে। বিভাগ হিসেবে তখন দেশের এ বিভাগ ছিল সবচেয়ে বড়।

১৯৭৯ সাল : থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৯ সাল : থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি সহকারী সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৪ সালে : ২০১০ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১০ সালের : ৩০ জুন থেকে ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত জামায়াতের তৎকালীন আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হলে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত হিসেবে সংকটকালীন সময়ে নেতৃত্ব দেন।

২০১৬ সালের : ১৭ অক্টোবর তিনি আমীর নির্বাচিত হন এবং ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৃতীয় নির্বাচিত আমীরে জামায়াত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


বিভিন্ন সংস্থায় দায়িত্ব পালন:

১৯৮৪ সালে : তিনি ঢাকায় অবস্থিত জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান “ফালাহ- ই-আম ট্রাস্টের" চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

১৯৯৭ সাল : থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইসলামী আন্দোলনের পতাকাবাহী জাতীয় পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া তিনি দৈনিক সংগ্রাম ট্রাস্টি বোর্ডের একজন ডাইরেক্টর ছিলেন।

২০০৪ সাল : তিনি বাংলাদেশ ইসলামিক ইনস্টিটিউটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।


বিদেশ সফর:

১৯৭৬ ও ৭৯ সালে তিনি "রাবেতা আলম আল ইসলামীর” মেহমান হিসাবে দু'বার পবিত্র হজ্জব্রত পালনের জন্য সৌদী আরব সফর করেন।

• জাপান ইসলামী সেন্টারের দাওয়াতে জাপান সফর করেন।

কুয়েতে প্রবাসী ভাইদের দাওয়াতে তিনি একবার কুয়েত সফর করেন।


সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা:

> তাঁর সহযেগিতায় সিলোনিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন 'আল ফালাহ মসজিদ' ও 'উম্মুল মু'মেনীন আয়েশা (রা.) মহিলা মাদরাসা' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

➤ ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তিনি ফেনীর বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাহীন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ ফেনী এর নিয়ন্ত্রক ট্রাস্ট 'ফেনী ইসলামিক সোসাইটি'র চেয়ারম্যান ছিলেন।

১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত 'আঞ্জুমানে ফালাহিল মুসলেমিন' নামক ট্রাস্টের তিনি ফাউন্ডার ও আজীবন মেম্বার ছিলেন। এ ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয় দেশের টপটেন মাদরাসার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা ফেনী' এবং ফেনী সদর উপজেলার 'লক্ষীপুর বাইতুল আমিন দাখিল মাদরাসা'।

১৯৮৮ সালে দাগনভূঞা সিরাজাম মুনিরা সোসাইটির সভাপতি ছিলেন।

> দেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী সাহিত্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আধুনিক প্রকাশনী বি.আই ট্রাস্টের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

> এছাড়া তিনি ঢাকা রহমতপুরস্থ ডা. আবদুস সালাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আশ-শেফা আর রাহমাহ নামক সমাজ কল্যাণ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন।


সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম:

* অধ্যাপক মাযহারুল ইসলাম লেখেন- "ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সমাজকল্যাণমূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। তার জীবনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো মানুষের সেবা করা। ১৯৬২ সালে যুবকদের সহযোগিতায় নিজ গ্রাম ওমরাবাদে "ওমরাবাদ পল্লীমঙ্গল সমিতি" নামের একটি সমিতি গঠন করেন। তিনি উক্ত সমিতির ১০ (দশ) বছর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। সমিতির সভাপতি হিসেবে তিনি স্থানীয় অনেক রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামতের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং গরিব ও অসহায় লোকদের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করেন।

* ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি গজারিয়া হাফেজিয়া মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


রাজনৈতিক জীবন:

১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নিজ এলাকায় প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।

১৯৮৬ সালে জামায়াতের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে ফেনী ২নং আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৯১ সালে তিনি জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে আরও একবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

২০১০ সালের জুন মাসের শেষ দিকে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর নিযুক্ত হয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত ২০ দলীয় জোট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে থেকে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের কঠিনতম পরিস্থিতিতে জামায়াতের আমীর ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা হিসাবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের প্রতিবাদ, জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, এদেশে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং গণমানুষের আধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

পারিবারিক জীবন: জনাব মকবুল আহমাদ ১৯৬৬ সালে লক্ষীপুর জেলা নিবাসী প্রখ্যাত আলেম ও শিক্ষাবিদ ঢাকা আরমানিটোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান মাওলানা ওহিদুল হকের কন্যা মুহতারামা সুরাইয়া বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী একজন রুকন। ছেলে-মেয়েরাও ইসলামী আন্দোলনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট।

মৃত্যু:
মৃত্যু মানব জীবনের অনিবার্য পরিণতি। কোন মনিষী এমনকি নবী-রাসুলগণও অমরত্ব লাভ করেননি। সে কারণে একটি পরিণত বয়সে খলিফাতুল্লাহ হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে আল্লাহর একান্ত প্রিয় এ গোলাম ১৩ এপ্রিল ২০২১ইং, মঙ্গলবার, দুপুর ১.০০টায়, ইবনে সীনা হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মহান মনিবের দরবারে হাজিরা দেন। সেদিন ছিল ১৪৪২ হিজরীর ২৯ শে শাবান। দিন শেষে পহেলা রমজানের প্রস্তুতি, সালাতুত তারবীহ। পরদিন থেকে শুরু হচ্ছে করোনা পরিস্থিতির কারণে সর্বাত্বক কঠোর লক ডাউন। তাই ঐ দিন গভীর রাতে নামাজে জানাজা শেষে ওমরাবাদ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমকে সমাহিত করা হয়। জানাযায় ইমামতি করেন বর্তমান আমীরে জামায়াত জনাব ডা. শফিকুর রহমান।

মহান আল্লাহ মরহুমের কবরকে জান্নাতের টুকরায় পরিণত করুন, তাঁর নেক আমলগুলো কবুল করুন, ভুলত্রুটিগুলো নিজ অনুগ্রহে ক্ষমা করে দিন। তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারকে সবরে জামিল ইখতিয়ারের তাওফিক দিন। তাঁর উত্তরসূরীদের আরো বেশী দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনকে কামিয়াবীর মঞ্জিলে পৌঁছে দেয়ার তাওফিক দিন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আ'লামীন।

Wednesday, June 5, 2024

“কবে আমার একরামের স্বপ্নের ইসলামী সরকার হবে, কবে হবে খুনিদের বিচার?” -শহীদ একরামুল হক ভাইয়ের মায়ের আকাঙ্খা






“কবে আমার একরামের স্বপ্নের ইসলামী সরকার হবে, কবে হবে খুনিদের বিচার?”

-শহীদ একরামুল হক ভাইয়ের মায়ের আকাঙ্খা



একনজরে শহীদ পরিচিতি

•নাম : মুঃ একরামুল হক খাঁন
•পিতা : মৃত সামছুল হক খাঁন
•ভাইবোন : ২ ভাই, ৫ বোনের মধ্যে ৪র্থ
•সাংগঠনিক মান : সাথী
•ঠিকানা : গ্রাম: সফরপুর, পোস্ট : কুদ্দুস মিয়ার হাট। থানা : সোনাগাজী, জেলা : ফেনী 
•শাহাদাত কালে : এম. এ. ফলপ্রার্থী।
•শহীদ হওয়ার স্থান : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ 
•যাদের আঘাতে নিহত : ছাত্রদল 
•যে শাখার শহীদ : চট্টগ্রাম মহানগরী উত্তর 
•শাহাদাত : ৫ই জুন, ১৯৯৫ইং।

⇨শাহাদাতের ঘটনা

তখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র। শাহজালাল হলের গেস্টরুমে পাঠচক্রের প্রোগ্রাম। পাঠচক্রের সদস্যদের সাথে একে অপরের পরিচয় হচ্ছে। কার-বাড়ি কোথায় কোন সাবজেক্টে পড়াশুনা আমার ও একরাম ভাইয়ের পরিচয় জানার পর একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে কাছাকাছি বসলাম। কারণ দুজনের বাড়ি একই জেলায় আবার দুজনের বিভাগীয় অফিসও পাশাপাশি। উল্লেখ্য আমি দর্শন বিভাগের ছাত্র আর একরাম ভাই ইতিহাস বিভাগের ছাত্র। পাঠচক্রের প্রোগ্রাম যথাযথ সময়ে শেষ হওয়ার পর দু’জনে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হল। ব্যক্তিগত, সাংগঠনিক, বিশেষ করে ফেনী জেলার কাজকর্মের ব্যাপারে।

এরপর থেকেই একরাম ভাইকে ফ্যাকাল্টিতে দেখলেই কাছে ছুটে যেতাম। প্রথম আলাপেই কেমন যেন ভক্ত হয়ে গেলাম। তিনি যদিও আমার এক বৎসরের সিনিয়র ছিলেন তবুও দু’জন বন্ধুর মতো ব্যবহার করতাম। উনি আমান বাজারে লজিং থাকতেন এবং সাংগঠনিক দায়িত্ব সেখানেই পালন করতেন তাই কোন প্রোগ্রাম উপলক্ষে বা ফ্যাকাল্টিতে ক্লাসের ফাঁকে দেখা হতো। দেখা হলেই কাছে ছুটে যেতাম। এ বিশাল হৃদয়ের মানুষটার কাছে গেলে মনে হতো অনেক দুঃখের কথা ভুলে যেতাম। মনে বড় সান্ত্বনা পেতাম হাস্যোজ্জ্বল চেহারাটা দেখে এবং সাহস পেতাম দৃঢ় চিত্তের ব্যক্তিত্ব দেখে। অপূর্ব সাহসী ছিলেন সদস্য প্রার্থী হয়েছে শুনে কোলাকুলি করলেন। অনার্স পরীক্ষা এবং পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে তিনি সদস্য হতে পারেননি এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলতেন, “এগিয়ে যান তাড়াতাড়ি সদস্য হয়ে যাওয়া দরকার। পারিবারিক সমস্যার কারণে আমি তো পারলাম না” আমি বললাম, কেন কী হল সময়তো এখনো আছে। তিনি একটু হেসে বললেন কই আর সময়! অনার্সের রেজাল্ট হয়ে গেছে ইতোমধ্যে মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, কয় দিন পর মাস্টার্স পরীক্ষা শুরু হবে। তাছাড়া পারিবারিক অনেক সমস্যা। অনার্সের রেজাল্ট এর কথা শুনে কি রেজাল্ট জিজ্ঞাসা করতেই হেসে বললেন, এই দুই ডান্ডা আর কি, সাথে সাথে তার এক বন্ধু (এই মুহূর্তে নামটি স্মরণে আসছে না) বললেন সেকেন্ড ক্লাস সেকেন্ড হয়েছে। আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং রস করে বললেন তখন স্যার স্যার বলে আমরা পেছনে পেছনে হাঁটবো। একরাম ভাই দুষ্টুমি করে বললেন, “আমি বেতন নিয়ে তোমাদের পিটাব” এটা বলেই অট্টহাসি দিয়ে আমার সাথে হাত মিলিয়ে বিদায় নিলেন দু’জন। এভাবে মাঝে মধ্যে দেখা হতো, কথা হতো।

আরেক দিনের ঘটনা। একদিন ফ্যাকাল্টিতে দেখা হল তিনি সিঁড়ি দিয়ে নামছেনএবং আমি উঠছি এমন সময় জড়িয়ে ধরলেন। বললেন শুনেছি সদস্য হয়েছেন এবং হল সেক্রেটারি। আমি বললাম সে তো অনেক পুরোনো কথা, তবে আপনি তো কি ব্যাপারে ছাত্রজীবন শেষ করলেন নাকি? তিনি একটু হেসে স্বভাবসুলভ দুষ্টুমিতে বললে হ্যাঁ মাস্টার্স পরীক্ষা এই তো শেষ করলাম। আমি বললাম তাতো জানি আমি সাংগঠনিক ছাত্রজীবনের কথা বলছি। তাঁর পারিবারিক সমস্যার কথা জানতাম বলে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে বললাম এখন কি করার চিন্তা করছেন। উত্তরে বললেন, দেখা যাক, আপাতত বাড়িতে আছি। একটা কলেজে ঢুকার চেষ্টা করছি। বললাম কি ব্যাপার এম.ফিল করবেন না? তিনি একটু হেসে বললেন দেখা যাক রেজাল্ট এর তো অনেক দিন বাকি এ সময়টায় কিছু একটা করি। আমিও তখন বললাম আসলে সুযোগ পেলে ঢুকে যাওয়া দরকার। তিনি বললেন দোয়া করবেন। এটা বলেই হাত মিলালেন, কে জানতো এটাই ছিলো একরাম ভাইয়ের সাথে আমার জীবনের শেষ দেখা।

যদি জানতাম তাহলে সে দিন তাঁকে ছাড়তাম না প্রাণ ভরে আরো কথা বলতাম যার কোন শেষ হতো না। এর কয়দিন পরেই আবার দেখা হয়েছে তাঁর সাথে তবে আগে সে একরাম নয়। আল্লাহর একজন অতি সম্মানিত মেহমান হিসেবে নূরানী জ্যোতিতে উদ্ভাসিত এক যুবক। তখন আগের মতো কুশল বিনিময় হয়নি তবে হয়েছে আত্মিকভাবে কথোপকথন। আগের মতো কথা বলতে পারিনি শ্রদ্ধার নত হয় আসছিল- ৫ই জুন’৯৫ সকাল ১০টায় ফ্যাকাল্টিতে সাথী মোশাররফ ভাই (একরাম ভাইয়ের বিভাগের ছাত্র ও আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু) বললেন একরাম ভাইয়ের অবস্থা খুবই খারাপ সোনাগাজীতে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা হামলা করে আহত করেছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে আছে। ডিপার্টমেন্টের অনেকেই দেখতে যাবে আপনি যাবেন? আমি কোন আকরাম ভাই জিজ্ঞাসা করতেই মোশাররফ ভাই বলে উঠলেন, “আরে সাথী ছিলেন যে অনার্স সেকেন্ড ক্লাস সেকেন্ড হয়েছেন, এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিলেন আমি আঁতকে উঠে বললাম কি বলেন? আমার সাথে মাত্র ৫দিন পূর্বে উনার সাথে দেখা হল কবে বাড়ি গেলেন? মোশাররফ ভাই বললেন আমার সাথে ওতো একদিন আগেই দেখা হল। আমি বললাম দেখা যাক হলে যাই তারপর সিদ্ধান্ত নিব।

হলে ঢুকতেই দু-তিন জন সাথী কর্মী এসে বলল মতিন ভাই একরাম ভাইকে চিনেন নাকি, সোনাগাজীর? হ্যাঁ শুনেছি আহত হয়েছেন। একজন বলে উঠল না এই মাত্র ফোন আসলো উনি শাহাদাত বরণ করেছেন। ইন্নালিল্লাহি পড়ে দ্রুত রুমে গেলাম, চেয়ারে বসে পড়লাম। পুরো দুনিয়াটা অন্ধকার মনে হল। চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ছে, কারো সাথে কোন কথা বলতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পর হল সভাপতি রহমান ভাই এসে আমাকে খুঁজছে, আমি চোখ মুছে বের হতেই বললেন মতিন ভাই খবরটা পেয়েছেন? আমি অশ্রুসজল চোখে মাথা নাড়ালাম তিনি বললেন মিছিল হবে লোকজন খবর দেন। এর পরপরই বিশাল মিছিল বের হল।

মিছিলের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস নিয়ে হাসপাতাল পৌঁছি। সেখানে পূর্ব থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু জনশক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র এবং তার নিজ এলাকার কয়েকজন লোককে দেখতে পেলাম। সকলের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে উঠল, আমরা লাশ ঘরে জোর করেই ঢুকে গেলাম। লাশ দেখে কেঁদে উঠলো সকলের মন। পরে যখন হাসপাতালের পাশে বসে আছি, মনে পড়তে লাগলো পুরনো সব স্মৃতির কথা, করিডোরের কথা, ফ্যাকাল্টিতে প্রোগ্রামের কথা বা সিঁড়িতে শেষ দেখার কথা। নিজের অজান্তেই অশ্রুতে বুক ভিজে গেল। এরপর আর একরাম ভাইয়ের চেহারা দেখিনি। দেখার মতো অবস্থাও আমার ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাযা এবং সোনাগাজী যানাযা শেষে চিরদিনের জন্য যখন সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে রেখে আসছিলাম। এভাবে শহীদ একরামকে রেখে সবাই চট্টগ্রাম রওয়ানা হলাম। কাফেলার সবাই ছিল শুধু ছিল না একজন যিনি একদম পৃথিবীকে ছেড়ে মহান প্রভুর দরবারে পৌছে গেছেন।

এরপর জেলা সভাপতি হয়ে ফেনী আসার পর যতবার শহীদের বাড়ি গিয়েছি বারবার মনে পড়েছে প্রথম পরিচয় এবং সর্বশেষ দেখার কথা। খালাম্মা প্রশ্ন করেন করে আমার একরামের স্বপ্নের ইসলামী সরকার হবে, কবে হবে খুনিদের বিচার। তখন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি আর অতীতের একরাম ভাইকে যেন শাহজাহাল হলের গেষ্টরুমে বা আর্টস ফ্যাকাল্টিতে সিঁড়িতে দেখতে থাকি। সাদা ধবধবে নূরানী জ্যোতিতে উদ্ভাসিত এক পবিত্র যুবক সাথীদের হৃদয় ফাটানো আর্ত চিৎকার যা কোন দিন শেষ হবার নয়, ভুলার নয়। নিজের অজান্তেই তখন দু'চোখ ভিজে ওঠে।


⇨শহীদের আচরণ

আমাদের দেশে কুচকুচে কালো পাখি কোকিল। বসন্তকালের কোকিল খুব সুন্দর গান শোনায়, কিন্তু কোকিল দেখার পর মনে হবে না সে এত সুন্দর গান শোনাতে পারে। শহীদ একরামের গায়ের রং খুব সুন্দর ছিল না। কিন্তু চেহারা ছিল সুন্দর মায়াবী, আর মুখের ভাষা ছিল মিষ্টি বড় ও ছোটদের মাঝে তিনি যোগ্যতম সমান আর স্নেহ-ভালবাসা প্রদর্শন করতেন। তার সাথে যখনই ছোট কারো দেখা হতো খুবই স্নেহের সাথে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করতেন কেমন আছ? তিনি ভাবুক ছিলেন। এলাকার গরিব দুঃখীদের নিয়ে তাইতো তিনি গরিব দুঃখীদের সাহায্যার্থে এলাকার একটি সমিতি গঠন করেছিলেন সেখান থেকে অভাবীদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। তিনি এলাকার গরিব দুঃখীসহ সকল মানুষের প্রিয়জন । তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল তিনি যেদিন শাহাদাতবরণ করেছিলেন। সেইদিন থেকেই তিন দিন পর্যন্ত এলাকার সর্বস্তরের মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন।

কী অপরাধ ছিল তার? কী অপরাধে হত্যা করা হলো, জনগণের বন্ধু আর ইসলামী আন্দোলনের নিরপরাধ এই কর্মীকে? তার তো এছাড়া আর কোন অপরাধ ছিল না যে, তিনি আল্লাহর দীন কায়েমের জন্য শপথ নিয়েছিলেন আর মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিলেন।


⇨যেভাবে ঘটনা ঘটলো

৩রা জুন ১৯৯৫। পড়ন্ত বিকেলে তিনি স্থানীয় একটি পাঠাগার বসে পত্রিকা পড়ছিলেন, অমনি মাস্তান বাহিনী খুনের নেশায় উন্মাত্ত হয়ে এসেই তাঁর মাথায় আঘাত করে, তার সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি জানতেন না তাকে এমন একটি পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। মাত্র দু’দিন আগে বাড়িতে ফিরেছিলেন শিক্ষাজীবনের পরীক্ষা দিয়ে, তিন দিন আগেই তার মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। পরীক্ষা শেষে মায়ের আদরে ধন মায়ের কাছেই এসেছিলেন, সোহাগী বোনের কাছে এসেছিলে বুকভরা সোহাগ নিয়ে। তার চোখে বিরাট আশার স্বপ্ন, মাত্র একবছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর তিনিই ছিলেন পরিবারের বড়। স্বাভাবিকভাবে পরিবারের সকল দায়িত্ব তার ওপরই বর্তায়। এজন্য তার চেতনা ছিল পরিবারের জন্য কিছু করতে হবে। বাড়িতে এসেই মাকে বলেছিলেন মা পরীক্ষা দিয়ে এসেছি, ভালই হয়েছে, দোয়া করবেন। মা এবার চাকরি করে বোনগুলোকে বিয়ে দিয়ে দেব আর পরিবারে অভাব পূরণ করবো। কিন্তু তার সকল স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে গেল তা আর বাস্তাবতার মুখ দেখেনি এবং কখনো দেখবেও না। আহ! কী নিষ্ঠুর এই পৃথিবী। আসলে এভাবে অনেক কিছুর স্বপ্ন দেখেই সবাইকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে।

আহত হওয়ার সোনাগাজী হাসপাতলে নেয়া হলে ডাক্তার সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে স্থানাস্তর করলেন। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলাম তাকে যেন সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে আনেন। আমরা চেয়েছিলাম তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে এসে আবার আন্দোলনের কাজ করবেন। কিন্তু আমাদের সেই চাওয়া বৃথাই গেল। তিনি বাড়িতে এসেছে ঠিকই কিন্তু জীবিত নয় কফিনে।


⇨শাহাদাতের ঘটনা

সোনাগাজীর সফরপুর মিয়ার বাজারে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা এক নিরীহ ছাত্রকে আটকিয়ে মারধর করে ও চাঁদা দাবি করে। এর প্রতিবাদ করায় ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা তার উপর চড়াও হয়। সারা শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রথমে সোনাগাজী হাসপাতালে ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে দুই দিন অচেতন অবস্থায় থেকে সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দেন।


-কেন্দ্রের অফিসিয়াল পেজ হতে সংগৃহীত 

Saturday, May 27, 2023

মাওলানা সুলতান আহমেদ ফারুকী রাহিমাহুল্লাহ্ (১৯৪৪-২০২৩) | একটি অমর জীবনী


“আলহাজ্ব মাওলানা সুলতান আহমেদ রাহিমাহুল্লাহ্ (১৯৪৪-২০২৩) | একটি অমর জীবনী”

•জন্ম ও বাল্যকাল:
পরম শ্রদ্ধেয় দাদাজান, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন জনাব আলহাজ্ব মাওলানা সুলতান আহমেদ ফারুকী রাহিমাহুল্লাহ্ ১৯৪৪ সালের ২রা ডিসেম্বর ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলাধীন ৩নং মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের অন্তর্গত সমপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মো: মুসলিম মিয়া, মাতার নাম হাফেজা খাতুন। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।

•ছাত্রজীবন ও পড়াশোনা:
ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। দাখিল শেষ করেন ১৯৫৭ সালে ছাগলনাইয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে। বারৈয়ারহাট সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ১৯৬১ সালে আলিম ও ১৯৬৪ সালে ফাজিল শেষ করেন। সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে ফেনী আলিয়া কামিল মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করে ছাত্রজীবন শেষ করেন। বক্তারমুন্সী ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কাশেম হুজুর দাদার ক্লাসমেট ছিলেন। দাদার হাতের লিখা ছিলো খুবই চমৎকার। 

•কর্মজীবন ও অবসর:

পাকিস্তান আমলে দাদা সরকারী চাকরিতে যোগদান করেন। কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসিবে। শিক্ষকতা করাকালীন সময়ে লজিং ছিলেন মানিকছড়ির এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। যে বাড়িতে তিনি থাকতেন, সেখানকার ছোট-বড় সকলেরই প্রিয়ভাজন ছিলেন।
২০০১ সালে তিনি কর্মজীবন থেকে অবসরে যান। দীর্ঘ প্রায় এত বছর পরেও দাদার ছাত্র-ছাত্রীরা দাদাকে কখনো ভুলেননি। বিশেষ করে দাদার দুই ছাত্রী শাহনাজ আন্টি ও রোকেয়া আন্টি দাদার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সুদুর খাগড়াছড়ি থেকে উনাদের পিতৃতুল্য প্রিয় স্যারকে শেষবারের মতো দেখতে ছুটে আসেন। অসুস্থ থাকাকালীনও এসে দাদাকে দেখে গিয়েছিলেন এবং নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন।
কর্মজীবন শেষ করে অবসর সময়ে দাদা বাড়িতে নিয়মিত কৃষি কাজে সময় দিতেন ও গরু পালন করতেন। অলস সময় কাটাতেন না, অবসরে কুরআন তিলাওয়াত ও বিভিন্ন বইপুস্তকে মনোনিবেশ করতেন। 

•অনাড়ম্বর জীবন যাপন:
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। মার্জিত ব্যবহার এবং হাসিমাখা মুখখানি দেখলে মন থেকে শ্রদ্ধা এবং ভক্তি চলে আসে। সদা-সর্বদা সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলার আশ্চর্য এক অনুপম গুণাবলির সমাহার ছিলেন। ছোট-বড় সবাইকে তিনি ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন। লজ্জাশীলতা ও সহনশীলতা ছিলো অতুলনীয়! দাদা সবসময় ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি ও পাগড়ী পরিধান করতেন, জামাকাপড় ছিলো সর্বদা পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন।
৭৫+ বছর বয়সে এসেও দাদা নিয়মিত পত্রিকা পড়তেন চশমা ছাড়া। সুস্থ সাবলীল ভাবেই চলাফেরা করতেন। এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুরুব্বি ছিলেন দাদা। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সকলেই দাদাকে সমীহ করতেন।
রাস্তায় সবসময় নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতেন। নিজের কাজ সবসময় নিজেই করার চেষ্টা করতেন।
আমাদের বাড়িতে আজ পর্যন্ত টিভি চলা তো দূরের কথা, কোনদিন গানের আওয়াজ পর্যন্ত শোনা যায়নি। দাদা সবসময় জাঁকজমকপূর্ণতা পরিহার করে চলতেন। বাড়িতে কোন অনুষ্ঠানে লাইটিং করা বা অতিরিক্ত সাজসজ্জা পছন্দ করতেন না। এসবের বিষয়ে তিনি বলতেন, 'এরকম কিছু করার চেষ্টা করলে আমি থাকবো না, বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যাবো।'
দাদার সামনে আব্বু-কাকাদেরকে কখনো উঁচু আওয়াজে কথা বলতে দেখিনি।

•পরহেজগারিতা
দাদা খুবই মুখলিস, পরহেজগার একজন মানুষ ছিলেন। কর্মজীবন থেকে অবসরে যাওয়ার পরই ২০০২ সালে হজ্জ করেন। দাদাকে জীবদ্দশায় কোনদিনও নামাজ ক্বাজা করতে দেখিনি। সবসময় চেষ্টা করতেন জামায়াতে তাকবীরে উলার সাথে নামাজ আদায় করার।
আমাদের বাড়ি থেকে মসজিদ একটু দূরে হওয়ায় শেষ বয়সে এসে নিয়মিত মসজিদে যেতে দাদার কষ্ট হয়ে যেতো। সেজন্য বাড়ির দরজায় দাদার দান করা জমিতে ২০১৯ সালে দাদার নামে পাঞ্জেগানা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ব্রেইন স্ট্রোক করে বিছানায় শয্যাশায়ী হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কখনো সজ্ঞানে নামাজ ক্বাজা করেননি। শেষ সময়ে শয্যাশায়ী থাকা অবস্থায়ও তিনি অসংখ্যবার নামাজ পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যেতেন। হাসপাতালে থাকাবস্থায় প্রায়ই বলতেন, 'আরমান আমাকে অজু করিয়ে দাও, নামাজের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে।' অথচ তখন তিনি নিজের শক্তিতে এপাশ-ওপাশ হওয়ার মতো অবস্থায়ও ছিলেন না।

সুস্থ থাকাবস্থায় তিনি প্রতি রমজানের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করতেন। জুম'আর দিন নামাজের আজান দেওয়ার সাথে সাথে তিনি মসজিদে চলে যেতেন। হাঁটতে-চলতে, কাজে-কর্মে সবসময়ই মুখে জিকির লেগে থাকতো। মৃত্যুশয্যায় তিনি প্রায়ই সশব্দে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পড়তেন, এবং বলতেন 'সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার হচ্ছে গুনাহ মাফের সর্দার, তোমরা এটা সবসময় পড়বে।'
দাদার খাওয়া-দাওয়া ছিল পরিমিত, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেতেন না। তিনি বলতেন, ‘বেশী খেলে এগুলোর হিসাব ‍দিবো কিভবে?’ দাদা কখনো দাঁড়িয়ে পানি পান করতেন না। যে কোন খাবার শুরুর পূর্বে সশব্দে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে তারপর খেতেন। খাওয়ার শেষেও সশব্দে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়তেন।
দাদা কখনো ছবি তুলতেন না। হায়াতের শেষ দিকে এসে সামান্য কিছু ছবি ছাড়া দাদার আর খুব বেশী ছবি নেই।

•পারিবারিক জীবন:
পারিবারিক জীবনে দাদা ছিলেন সফল একজন অভিভাবক, তিনি ছিলেন পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের পিতা। ছেলে ও মেয়ের ঘরের প্রায় ২৬ জন নাতি-নাতনী রেখে গেছেন।
পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে তিনি ইসলাম শিক্ষায় শিক্ষিত ও ইসলামী জীবনধারায় অভ্যস্ত করে গড়ে তুলেছেন। দাদা ইসলাম পালনের বিষয়ে কখনো ছাড় দিতেন না। সবাইকে ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্ব অনুধাবন করাতেন এবং সর্বদা দ্বীনি আন্দোলনে শামিল থাকতে উৎসাহিত করতেন।
দাদা নিজেও ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষী। যখনই বাড়িতে যেতাম, তিনি আগে সাংগঠনিক কাজকর্ম কেমন চলছে খোঁজখবর নিতেন।
জানাযায় আগত মুসল্লী বৃন্দ সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, দাদার প্রত্যেক সন্তানকে তিনি মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
বড় নাতি হিসেবে দাদাকে খুব কাছ থেকে দেখার ও দাদার সান্নিধ্যে থেকে অনেক কিছু শিখার সুযোগ হয়েছে, যা জীবন চলার পথে পাথেয় হিসেবে আমরণ কাজে লাগবে।

•সমাজসেবা:
দাদা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে সর্বদা মানুষদের পাশে থাকার চেষ্টা করতেন। কাউকে কখনো খালি হাতে ফিরে যেতে দেখিনি, যতটুকু পারতেন সামর্থ্যের আলোকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। আত্মীয়-প্রতিবেশী সবার খোঁজখবর রাখতেন এবং সবার জন্য দু’আ করতেন। কারো মৃত্যুর সংবাদ পেলে জানাযায় উপস্থিত থাকার চেষ্টা করতেন।

•অসুস্থতা:
দাদা ছিলেন অনেক আগে থেকেই ডায়াবেটিসের রোগী। দীর্ঘদিন যাবৎ কাশি সমস্যায় ভুগছিলেন, অনেক চিকিৎসার পরও তা সমাধান করা যায়নি। মৃত্যুর কিছুদিন আগে দাদার ডান চোখের ছানি অপারেশন করে লেন্স বসানো হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে দাদার চিকিৎসার কাজে দাদার সাথেই অনেক জায়গায় ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছে, দাদাকে কখনোই অধৈর্য্য বা পেরেশান হতে দেখিনি।
ব্রেইন ষ্ট্রোক: ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ইং দুপুর ১২টায় হঠাৎ বাড়ি থেকে ফোন পাই, দাদা বাথরুমে পড়ে গিয়েছেন। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় সাথে সাথে ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো। ডাক্তার জানালেন ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে। ফেনীতে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বিকেলে সিদ্ধান্ত হলো ঢাকা নিয়ে যাওয়ার। রাতে দাদাকে নিয়ে ভর্তি করালাম ঢাকা নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে। পাঁচদিনের চিকিৎসা শেষে অবস্থা উন্নতি হওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শে বাড়িতে শিফট করি।

১৭ মার্চ পুনরায় অবস্থার অবনতি ঘটে। দ্রুত ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে নিয়ে আসলে নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখে ডাক্তার তাৎক্ষনিক সিসিইউতে ভর্তি করে। তিনদিন সিসিইউতে থাকার পর অবস্থা একটু উন্নতি হলে কেবিনে শিফট করা হয়। ২২ তারিখ বিকেলে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো। সেদিন নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আলাউদ্দিন স্যারের সিরিয়াল দিয়েও অল্প সময়ের জন্য না দেখাতে পারার আফসোফটা থেকে যাবে!


"ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালের সিসিইউতে শয্যাশায়ী অবস্থায় দাদা"

রমজানের মাঝামাঝি সময়ে পুনরায় ফেনীতে নিউরোমেডিসিন ডাক্তার দেখানো হয়। সেটাই ছিলো শেষ ডাক্তার দেখানো। তারপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

দাদার অসুস্থতার খবর শুনে দেশ-বিদেশ থেকে দাদার অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী/শুভানুধ্যায়ীরা নিয়মিত খোঁজখবর নিতেন। ঢাকা নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে থাকা অবস্থায় দাদাকে দেখতে আসেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব ডাঃ ফখরুদ্দিন মানিক ভাই।

•দাদার সাথে আমার শেষ কথোপকথন:
আমি: দাদা! সকালে প্রোগ্রাম আছে, আমি ফেনী চলে যাচ্ছি।
দাদা: আল্লাহর হাওলা, ফি আমানিল্লাহ। সাবধানে থাকিও, আমার জন্য দোয়া করিও।
আমি: ঠিক আছে দাদা! আমার জন্যও দোয়া করবেন, ফি আমানিল্লাহ।

•শেষ বিদায়:
দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস শয্যাশায়ী থাকার পর ০৮ই মে ২০২৩ইং রোজ সোমবার রাত ২টা ৪৫ মিনিটে দাদা দুনিয়ার সফর শেষ করে মহান রবের দরবারে পাড়ি জমান। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন।
মৃত্যুকালে দাদার বয়স ছিলো প্রায় ৮০ বছর।

"দাদার জানাযায় উপস্থিতির একাংশ"

জানাযায় হাজারো মানুষের উপস্থিতি ও চোখের পানিই প্রমাণ করে, দল-মত নির্বিশেষে দাদা ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুরুব্বি। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ফেনী জেলা সেক্রেটারী, ফেনী আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসার সম্মানিত ফকীহ জনাব মুফতী আবদুল হান্নান হুজুর।

দুনিয়ার জীবনের এই সংক্ষিপ্ত সফরে তিনি রেখে গেছেন অসংখ্য শুভাকাংক্ষী, শুভানুধ্যায়ী ও গভীর রজনীতে সিজদাবনত চিত্তে উনার নাম ধরে দু’আ করার মতো একঝাঁক পরিবার-পরিজন, নাতি-নাতনী ও অগণিত আত্মীয়-স্বজন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরম শ্রদ্ধেয় দাদাজানের জীবনের সকল ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করে নিন, উনার রেখে যাওয়া আদর্শকে অনুসরন করে আমাদেরকে বাকি জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দিন, দুনিয়ার জীবনের সকল ভালো কাজ ও নেক আমলকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত জারি রেখে পরকালীন জীবনে নাজাতের উছিলা হিসেবে কবুল করে নিন, আমীন।

দু'আ কামনায়-
ইমাম হোসেন আরমান,
দাদার বড় নাতি(ছেলের ঘরের)

Tuesday, February 28, 2023

শহীদ মুস্তাফিজুর রহমান - একটি ফুটন্ত গোলাপের অকালে ঝরে পড়া : কিছু বেদনা-বিধুর স্মৃতি || জাহেদ হোসাইন

শহীদ মুস্তাফিজুর রহমান
একটি ফুটন্ত গোলাপের অকালে ঝরে পড়া : কিছু বেদনা-বিধুর স্মৃতি
-জাহেদ হোসাইন

একদিন পর দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের প্রচারাভিযান প্রায় শেষের দিকে। তবে বাড়ছে টান টান উত্তেজনা। মাগরিবের নামাজ জামায়াতে আদায় করে কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে একজন শুভাকাংখীসহ কথা বলছিলাম। পকেটে রাখা মোবাইল বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখি পরিচিত নাম্বার। নাম্বারটা মোবাইলের কল লিষ্টে সেইভ করা আছে। রিসিভ করতেই অপরিচিত কন্ঠস্বর। একটু ঘাবড়ে গেলাম। প্রথমে ওপাশ থেকে আসা কথাগুলো অস্পষ্ট মনে হলো। কিন্তু বুঝতে দেরী হলো না। খবরটা শুনার সাথে সাথে কলিজার ভিতরটায় কেউ যেন খামছে ধরলো। মুহুর্তেই মুখটা মলিন হয়ে গেলো। আমার পাশে দাঁড়ানো ভাইটি জিজ্ঞেস করলেন, “কি ব্যাপার, কি হলো?”
-সোনাগাজী সাথী শাখার সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ভাই মোটর সাইকেল এক্সিডেন্ট করেছেন।
-তো এখন?
-পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাচ্ছে। তারাই আমাকে ফোন করেছে। 

এদিকে আমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে খবর নিতে লাগলাম দূর্ঘটনা কতটুকু মারাত্মক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার যথার্থ চিকিৎসা হবে কিনা ইত্যাদি। অবশেষে সিদ্ধান্ত দিলাম ফেনী নিয়ে আসতে। কিছুক্ষনের মধ্যে ভাইকে ফেনীর প্রাইভেট হাসপাতাল কসমোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে আসা হল। সি এন জি থেকে ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহটি হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ঢুকানো হল। দেখলাম ভাইয়ের বাম পায়ের উরুর অংশে মারাত্মক ব্যথা পেয়েছেন। ধারনা করলাম সেটির হাড় ভেঙ্গে গেছে। নাকে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছেন এবং প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। ডাক্তার জানালেন, যেহেতু মাথায় কোন আঘাত পাননি এবং বমি করেননি এমতাবস্থায় আমরা আজকে রাত এখানে পর্যবেক্ষনে রাখতে পারি। আমি সায় দিলাম। এক্স-রে করার পর যখন দেখলাম ভাইয়ের উরুর হাড় ভেঙ্গে গেছে এবং নাকের নরম হাড় ভেঙ্গে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে, আমি চিন্তা করলাম আজকে রাত এখানে থাকলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠিয়ে দিবো।

এদিকে উন্নত চিকিৎসা করার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করলে ডাক্তার আমাকে জানালেন, “উনার পা অপারেশনের পূর্বে আপাতত আমরা এখানে সাধারন প্লাষ্টার করে দিই। পরে আপনারা কাল বিলম্ব না করে এখনই ঢাকায় নিয়ে যান সমস্যা নেই”। দায়িত্বশীলদেরকে খবরটা দিলাম এবং যত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভাইকে অপারেশন তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো এবং ক্ষতস্থান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরন হচ্ছে দেখে ডাক্তার বললেন এক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করতে। মুহুর্তেই কয়েক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করা হলো। আমি ছিলাম অপারেশন থিয়াটারের বাহিরে। কে একজন খবর দিলেন ভাই আপনাকে ডাক্তার খোঁজ করেছেন। দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখি ভাই বমি করেছেন। ডাক্তার গালিব ভাই ও কিছুটা উদ্বিগ্ন। আমাকে বললেন, “ভাই আমার মনে হয় ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না”। আমি সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিলাম ভাইকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়ার। তখন রাত প্রায় ১টা। জেলা সেক্রেটারী মোজাম্মেল হোসেন ভাইকে ফোন দিলাম, ভাই তাড়াতাড়ি কিছু টাকাসহ ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে হাসপাতালের দিকে আসুন। ইতিমধ্যে ঢাকা যাওয়ার জন্য ১টা এ্যম্বুলেন্স ভাড়া করলাম। ঢাকা পাঠিয়ে দেয়ার কথা শুনে মুস্তাফিজ ভাইয়ের বোন, ভগ্নিপতি ও চাচা সবাই তাকে এক নজর দেখতে আসলো। উনারা কি জানতেন এটাই তাঁর সাথে শেষ দেখা? রাত প্রায় ২টার দিকে এ্যাম্বুলেন্স ছাড়ল ঢাকার উদ্দেশ্যে। সাথে জেলা সেক্রেটারী ছাড়াও মুস্তাফিজ ভাইয়ের বোন, ভগ্নিপতি ছিলেন। কিছুটা মানসিক প্রশান্তি অনুভব করছিলাম এ ভেবে যে, ভাইকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠাতে পারলাম। জেলা সাহিত্য সম্পাদক ওসমান গনি আরিফ ভাই ও জেলা স্কুল সম্পাদক ওমর ফারুক ভাই সহ বাসায় ফিরলাম। ভাইয়ের আশু সুস্থতার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করলাম । ফজরের পর যখন মোজাম্মেল ভাইকে ফোন দিলাম তখন তিনি বললেন, “আমরা সবে মাত্র হাসপাতালে ঢুকছি । সকাল ৮টায় আবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম উনার মাথার সি.টি স্ক্যান করা হয়েছে। কিন্তু কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। এ কথা শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম ।

এ দিকে ফাঁকে ফাঁকে মোজাম্মেল ভাইকে ফোন দিয়ে বার বার মুস্তাফিজ ভাইয়ের চিকিৎসার খোজ খবর নিচ্ছি। মোজাম্মেল ভাই জানালেন মুস্তাফিজ ভাইয়ের অবস্থা ভাল আছে এবং মাঝে মাঝে মুস্তাফিজ ভাই তাদের সাথে কথাও বলছেন। বেলা ৩.০০ টার দিকে মোজাম্মেল ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বললেন মুস্তাফিজ ভাই আপনার সাথে কথা বলতে চান। আমি বললাম উনি অসুস্থ কথা বলার দরকার কি? মোজাম্মেল ভাই বললেন আমিও নিষেধ করেছি। কিন্তু উনি বার বার চাচ্ছেন আপনার সাথে কথা বলতে, আমি বললাম ঠিক আছে, উনাকে দিন। মুস্তাফিজ ভাই প্রথমে আমাকে সালাম দিয়ে জানতে চাইলেন আমি কেমন আছি? আমি সালামের উত্তর দিয়ে বললাম, ভাই আমি ভাল আছি। আপনি অসুস্থ তাই আপনাকে আমি ফোন করছিনা। মোজাম্মেল ভাইকে ফোন করে আপনার খোঁজ খবর নিচ্ছি।

এরপর মুস্তাফিজ ভাই যা বললেন তা আজও আমার কানে বাজে .... : ভাই আমার শাখাটার খোঁজ খবর নিয়েন।
- কি বলেন ভাই, আপনার শাখার খোঁজ খবর সব সময় আমি নিচ্ছি। আপনি কোন চিন্তা করবেন না।
: ভাই আমার হেদায়েত ভাইকে (শাখা সেক্রেটারী) একটু ফোন দিয়েন, তার খোঁজ খবর নিয়েন ।
: আপনি এতো চিন্তা করবেন না ভাই, আমি সার্বক্ষনিক তাদের খোঁজ খবর রাখছি। আজকে দিনে হেদায়েত ভাইর সাথে অন্তত তিন-চার বার কথা হয়েছে। আপনার সাথে আর বেশী কথা বলবোনা। আপনি আগে সুস্থ হোন তারপর আপনার সাথে সব কথা বলা যাবে। এই বলে আমি ফোন রেখে দিলাম। নিয়তির নির্মম পরিহাস, কে জানতো এটাই আমার করলাম ভাইয়ের সাথে আমার শেষ কথা।

সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ, তাদের পেটুয়া বাহিনী ও পুলিশলীগ দিয়ে সাধারন ভোটারদের হয়রানি, আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভোট ডাকাতির মোকাবেলায় বিএনপির দূর্বলতা ও নমনীয়তা, সার্বিক বিষয়ে সাধারন ভোটারদের মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলতে বলতে রাত প্রায় ১২ টা। রাতের খাবার শেষ করে রাশেদুল হাসান রানা ভাইকে বিদায় দিয়ে প্রায় ১টার দিকে যখন বাসায় যাচ্ছি তখনো স্মৃতিতে মুস্তাফিজ ভাইয়ের কথা ভেসে উঠছে। ভাইয়ের কষ্টের বিষয়টা চিন্তা করছি। কারণ ইতিপূর্বে নিজেও একাধিক বার মটর সাইকেল এক্সিডেন্ট করার কারনে এটার কষ্টকর অভিজ্ঞতা আমার মনে আছে।

রাতে ঘুমানোর আগে মোজাম্মেল ভাইকে ফোন দিয়ে আবার খোঁজ নিলাম। মোজাম্মেল ভাই আমাকে জানালেন রাতে মুস্তাফিজ ভাইয়ের প্রচন্ড জ্বর এসেছে। আমি উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞাস করলাম
: কি ব্যাপার, জ্বর কেন আসলো? ডাক্তার দেখাননি? ডাক্তার কি বলেছেন?
: ডাক্তার দেখে গিয়েছেন এবং জ্বর কমার ঔষধ দিয়েছেন।

ভোর পাচঁটার দিকে মোজাম্মেল ভাই আবার ফোন দিয়ে জানালেন মুস্তাফিজ ভাইয়ের জ্বর আরও বেড়ে গিয়েছে এবং নিঃশ্বাস ঘন ঘন নিচ্ছেন আর মুস্তাফিজ ভাইকে আইসিইউতে নেয়া হচ্ছে। এ কথা শুনে মনের মধ্যে একটা তীব্র চাপ অনুভব করলাম। মনে হল ঘাড়ের রগটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে। একটা মানসিক ব্যাকুলতার মধ্যে মোজাম্মেল ভাইর ফোন পাওয়ার জন্য সময় অতিবাহিত করতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর মোজাম্মেল ভাই ফোন দিলেন । ফোনে যা জানালেন সে অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক সংবাদ শুনার জন্য আমার কান মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। ওপাশ থেকে মোজাম্মেল ভাই ভাঙ্গা গলায় জানালেন,
: নেই, তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি...
: কি বলছেন মোজাম্মেল ভাই, এটা কিভাবে সম্ভব! ঐদিক থেকে মোজাম্মেল ভাই আর কথা বলতে পারছেন না।
আমারও নীরবে অশ্রু কপোল গড়িয়ে পড়ার টেবিলে পড়ল। নিজের মনকে কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না যে আমার মুস্তাফিজ ভাই আর নেই । তাঁর স্মৃতি গুলো মনে করে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। কতো সহজ ভাবে ভাইটা আমার সাথে মিশেছিল। দায়িত্ব পালনে ত্রুটি হলে কতো বকা-ঝকা করেছি। কাজ আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করেছি। একটা সংকটপূর্ণ ময়দানে তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। কিন্তু কখনো এতটুকু নালিশ করেননি । প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে আমাকে একবার করে ফোন দিতেন। কোন দিন ফোন দিতে না পারলে পরদিন আবার ফোন করে অনুযোগের সুরে বলতেন “ভাই আপনি বোধ হয় আমাকে ভুলে গেছেন”। আমি সান্তনা দিতাম। নিজের ব্যস্ততার অজুহাত দেখাতাম। নিজের কানে শুনা কথা নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। প্রতিদিন একবার করে ফোন করে ভাই | বলে কে খোঁজ নিবে? একথা গুলো ভাবতে ভাবতে নোনা জলের দরিয়া যেন আমার দু-চোখে আছড়ে পড়লো । আবেগ সংবরণ করে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম।

কেন্দ্রীয় সংগঠন, এখানকার জামায়াতে ইসলামী ও সাবেক ভাইদের কে খবরটা জানালাম। স্থানীয় সংগঠন জেলা জামায়াতের সাথে পরামর্শ করে জানাযার স্থান নির্ধারন করা হল মুস্তাফিজ ভাইদের বাড়ির দরজা। সে দিন ছিল জু'মা বার। আমি, জেলা দপ্তর সম্পাদক কফিল উদ্দিন ভাই ও জেলা সাংস্কৃতিক সম্পাদক জানে আলম ভাই সহ বেলা প্রায় ১১.৩০টার দিকে যখন মুস্তাফিজ ভাইয়ের বাড়ির দরজায় গিয়ে নামলাম তখন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য অবলোকন করলাম। নারী-পুরুষ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা যাকে দেখেছি তার চোখেই পানি। শোকের বিহবলতায় অনেকটা আনমনা হয়ে যখন মুস্তাফিজ ভাইদের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম তখন তার বড় দুলা ভাই বেলায়েত হোসেন ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে যখন বললেন,

: “ভাই আমার ছোট ভাইকে কোথায় রেখে এসেছেন। আমার ছোট ভাই কই”?

বাধঁ ভাঙ্গা জোয়ারের মত চোখের পানি আর আটকাতে পারলাম না। কতক্ষন এভাবে অশ্রু গড়িয়েছে জানিনা। আবার বেলায়েত ভাইয়ের কথায় সম্বিত ফিরে পেয়েছি। জু'মার নামাযের সময় হচ্ছে। এ দিকে কেন্দ্ৰীয় মাদ্রাসা সম্পাদক জনাব মু. মহি উদ্দিন ভাই জানাযায় অংশ গ্রহণ করার জন্য ঢাকা থেকে ফেনীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। জানাযার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বাদ আসর তথা বিকাল ৫টা। মুস্তাফিজ ভাইয়ের মরদেহ ঢাকা থেকে তার বাড়িতে আনা হচ্ছে। মুস্তাফিজ ভাইয়ের ইন্তেকালের খবর শুনে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত শোকাহত সাথীদের তাদের পুরাতন বাড়ীতে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। জু'মার আগে ওনারা খাবার গ্রহনের জন্য তাড়া দিলেন। আমি দেখলাম শোকে মুহ্যমান এ ভাইয়েরা খাবার গ্রহন করার জন্য একজনও এগুচ্ছেনা। তখন কষ্ট বুকের বুকে চাপায়ে রেখে আমিই আগে গেলাম এবং বাকী ভাইয়েরা আমাকে অনুসরণ করলেন। খাবার টেবিলে বসেও চোখের পানি আটকানোর বৃথা চেষ্টা করলাম এবং খাচ্ছি এরকম অভিনয় করলাম। খাবারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে যখন জু'মার নামায পড়ার নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম। মুস্তাফিজ ভাইর বাড়ির দরজায় চিরচেনা মসজিদে প্রবেশ করলাম। মুস্তাফিজ ভাই কতদিন এ মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে জু'মার খুৎবাহ পড়েছেন। মুস্তাফিজ ভাই জু'মার দিন যখনি ঐ মসজিদে উপস্থিত হতেন মসজিদের বয়োবৃদ্ধ ইমাম সাহেব খুৎবাহ এবং নামাযের দায়িত্ব মুস্তাফিজ ভাইয়ের উপর ছেড়ে দিতেন ।

খুৎবাহ শেষে কাতার সোজা করে নামাযের জন্য যখন দাড়ালাম এ্যম্বুলেন্স এর হর্ন শুনে বুঝতে পারলাম মুস্তাফিজ ভাইয়ের মরদেহ বাড়ীতে পৌঁছেছে।

নামায শেষ করে ইমাম সাহেব যখন দোয়ার জন্য হাত তুললেন তখন পিনপতন নীরবতার মধ্যে উপস্থিত মুসল্লিদের হু হু করে কান্নার চিৎকার শুনে বুঝতে পারলাম আমার মুস্তাফিজ ভাই দলমত নির্বিশেষে সমাজের এ সাধারন মানুষগুলোর নিকট কত প্রিয়ভাজন ছিলেন। নামায শেষ করে ভগ্ন হৃদয়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যখন মুস্তাফিজ ভাইদের ঘরের সামনে গেলাম তখন দেখলাম ঘরের সামনে রাখা মুস্তাফিজ ভাই'র মৃতদেহ ঘিরে মানুষের ভীড়। সবাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নার শব্দে পরিবেশটা ভারি হয়ে উঠলো। এ করুণ দৃশ্যপটের সামনে দাঁড়িয়ে পকেটে রাখা টিস্যু নিয়ে বার বার চোখ মুছে আবেগের গভীরতা লুকিয়ে জনশক্তিদের বুঝানোর চেষ্টা করছি আমি খুব বেশী আবেগ আপ্লুত হইনি। কিন্তু মুস্তাফিজ ভাইর চেহারাটা একবার দেখার জন্য তার মরদেহের সামনে যেতে পারছিনা।

গতকাল ও যার সাথে কথা হয়েছে, ভেবেছি সুস্থ হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আন্দোলনের কাজে আবারও সদা চঞ্চল ও প্রাণসঞ্চারী ভূমিকা পালন করবেন। সে মুস্তাফিজ ভাইয়ের নিথর দেহের সামনে - - যে হাসি মাখা মুখে এক চিলতে হাসি উপহার দিয়ে বলতেন ভাইয়া কেমন আছেন? আজ কিভাবে আমি স্থির হয়ে দাঁড়াবো।

মুস্তাফিজ ভাইকে এক নজর দেখার জন্য, তার জানযায় অংশ গ্রহণ করার জন্য আগত লোকের সংখ্যা ততই বাড়ছে। আসরের নামাযের পূর্বেই জানাযার নির্ধারিত স্থান লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলো। আগত মুসল্লীদের সংখ্যাধিক্যের কারনে মুস্তাফিজ ভাইদের বাড়ির সামনের জামে মসজিদে চার দফায় আসর নামায আদায় করতে হয়েছে। সালাতুল আসর আদায়ের পর যথারীতি জানাযা পূর্ব সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশ পরিচালনা করেছেন জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ফখরুদ্দীন। জানাযায় উপস্থিত হয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা সম্পাদক মু. মহি উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিনের সভাপতি রাশেদুল হাসান রানা, জেলা জামায়াতের আমীর এ কে এম নাযেম ওসমানী ও সেক্রেটারী এ কে এম শামছুদ্দীন সহ সাবেক জেলা সভাপতিদের অনেকে। মাইকে আমার নাম ঘোষণা করে মুস্তাফিজ ভাইয়ের জীবনের উপর কিছু বলার জন্য বলা হলো। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে যখন দাঁড়ালাম তখন দেখলাম জানাযায় যেন মানুষের ঢল নেমেছে। কয়েক হাজার শোকাহত মানুষের করুণ চাহনির দিকে তাকিয়ে মনে হলো তারা যেন আর্তনাদ করছে, হে আল্লাহ তুমি আমাদের মাঝ থেকে মুস্তাফিজ ভাইকে কেন এত তাড়াতাড়ি নিয়ে গেলে। শত সহস্র সাথীদের চোখের পানি আর কান্নার গোঙানীর শব্দ এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা করলো। ভাঙ্গা গলায় কিছু কথা বলে আমার বক্তব্য শেষ করলাম। এরপর শহর সভাপতি তারেক মাহমুদ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিনের সভাপতি রাশেদুল হাসান রানা ভাই'র বক্তব্যের পর কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা সম্পাদক মু. মহি উদ্দিন ভাই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ মৃত্যু হলো শাহাদাতে মৃত্যু”। তিনি আল্লাহর রাসূলের একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “শাহাদাতের তামান্না যদি কেউ লালন করেন আর এমতাবস্থায় তিনি বিছানায় শুয়ে ইন্তেকাল করেন তবুও তাকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হবে”। তিনি আরো বলেন, “মুস্তাফিজুর রহমান ভাই সড়ক দূর্ঘটনায় ইন্তেকাল করলেও তিনি শহীদ হয়েছেন। কারণ তিনি মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত শাহাদাতের তামান্না বুকে ধারণ করে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আনুগত্যের যে শপথ গ্রহণ করেছেন সে শপথের উপর আমৃত্যু টিকে ছিলেন। জানাযার নামাযের ইমামতি করেন জেলা জামায়াতের আমীর এ কে এম নাযেম ওসমানী। জানাযা শেষে মুস্তাফিজ ভাইয়ের বাড়ীর সামনে জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁর আব্বার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

জানাযা শেষ করে যখন ফেনী আসার উদ্দেশ্য গাড়িতে উঠলাম তখন আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলামনা। চোখের পানি যেন কোন বাধা মানছেনা। নিজেকে কিছুটা সামলে নেয়ার চেষ্টা করলাম। মুহুর্তেই যেন হারিয়ে গেলাম মুস্তাফিজ ভাইয়ের মাঝে । ভাবলাম আমার এত ভাল দায়িত্বশীলটাকে আল্লাহ কেন এত তাড়াতাড়ি তার কাছে নিয়ে গেল? একটি ফুটন্ত গোলাপ কেন এত তাড়াতাড়ি ঝরে গেল? আসলে বাগানের ঐ ফুলটাকে মালিক বেশি পছন্দ করেন, যার সুগন্ধ একটু বেশি। শহীদ মুস্তাফিজুর রহমান ভাইকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জান্নাতের ফুল হিসেবে কবুল করেছেন বিধায় তার মাঝে অনেকগুলো অনুকরণীয় গুণের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। তার জীবনীর উপর স্মৃতি চারণ করে একটা লেখা লিখার জন্য বার বার চেষ্টা করেও যেন শেষ করতে পারছিলাম না। এত অল্প বয়সে মুস্তাফিজ ভাই আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন যেন আজও বিশ্বাস হয় না। মাঝে মধ্যে মনে হয় যেন ভাই আবার ফোন করে জিজ্ঞেস করবেন ভাইয়া কেমন আছেন? কিন্তু না, পৃথিবীর অমোঘ নিয়মের কাছে, জীবন মৃত্যুর দূর্গেয় রহস্যের কাছে আমাদের সে আবেগ শুধু অর্থহীন নয় বরং উপহাস তুল্য। তার স্মৃতির উপর লিখতে গিয়ে একাধিকবার চোখের পানিতে কাগজ ভিজিয়েছি। এখনো তার শূন্যতা প্রতিনিয়ত অনুভব করি। মনে হয় সোনাগাজীর ইসলামী আন্দোলন একজন যোগ্য দায়িত্বশীলকে হারালো । জানিনা কবে এ শূন্যতা পূরণ হবে। মুস্তাফিজ ভাই'র ইন্তেকালের পর অসংখ্যবার তার বৃদ্ধ মাকে দেখতে গিয়েছি। বুঝেছি সন্তানের জন্য কাঁদতে কাঁদতে দু'চোখের পানি সব শুকিয়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিন আমাকে ফোন করেন। ফোন করেই বলেন, বাবা আমার মানিক (মুস্তাফিজ) কই? এ কথা শুনার পর নিজের আবেগ সংবরণ করতে আজও কষ্ট হয়। উনাকে সান্তনা দেয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পাইনা। মুস্তাফিজ ভাই'র ২০/২২ বছরের মধ্যে অল্প ক'টা দিন তাকে কাছ থেকে উপলব্দি করার সুযোগ পেয়েছি, তার দায়িত্বশীল থাকার সুবাদে । তাকে যেমন দেখেছি তার পুরোটা এই স্বল্প পরিসরে লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। তার জীবনী থেকে যা লিখতে পেরেছি তার তুলনায় যা লিখতে পারিনি তার পরিমান বেশী। পিতামাতার কাছে যেমন তার সন্তানের দূর্বলতা সাধারণত গোপন থাকেনা তেমনি দায়িত্বশীলের নিকট তার জনশক্তির দূর্বলতা গোপন থাকেনা। কিন্তু মুস্তাফিজ ভাইর ব্যাপারটা ভিন্ন। যে কয়টা দিন তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি তার কাছে ভাল ছাড়া খারাপ কিছু দেখিনি ।

সত্যবাদিতা, তাকওয়া, আমানতদারীতা ইত্যাদি ছিল তার চরিত্রের ভূষন। সর্বোপরি সকল মানুষের সাথে সহজে মিশতে পারা, সকলকে মূল্যায়ণ করতে জানা, মানুষের হক আদায়ের প্রতি সচেতন থাকা, মানুষকে খাইয়ে নিজে তৃপ্তি পাওয়া এগুলো ছিল তার জীবনের অংশ। এতগুলো সদগুণাবলীর পাশাপাশি যে আল্লাহর এই জমিনে তার দেয়া বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিতে পারে আল্লাহর জান্নাত তো তার জন্যই অপেক্ষমান। হে আল্লাহ তুমি আমাদের মুস্তাফিজ ভাই'র জীবনের সকল ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে তাঁর মৃত্যুকে শহীদি মৃত্যু হিসেবে কবুল কর। তাকে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান কর । (আমিন)

★যেমন দেখেছি শহীদ মুস্তাফিজুর রহমান ভাইকে :-

প্রথম দেখা ও পরিচয়ঃ
২০১২ সাল। আমি তখন ফেনী শহর শাখার সেক্রেটারী। সে বছরের মাঝামাঝিতে কোন একদিন সোনাগাজী যাওয়ার পথে ডাকবাংলা নামক স্থানে একটা মিষ্টির দোকানের সামনে গেলে দেখলাম কয়েকজন মাঝারি বয়সের তরুণ একসাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। আমাকে দেখে একজন এগিয়ে এসে মুচকি হেসে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ভাইয়া কেমন আছেন”? ইতিপূর্বে তাকে আর কোথাও দেখেছি বলে মনে হয়নি। তবে ধারণা করলাম উনি এখানকার দায়িত্বশীল। সালামের উত্তর দিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে বললেন তিনি সোনাগাজী পশ্চিম সাথী শাখার সভাপতি । এরপর আর সেদিন বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি। তারপর আর দীর্ঘ দিন দেখা হয়নি।

মতের কোরবানীর ক্ষেত্রে অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপনঃ-

২০১৩ সালের ২২শে জানুয়ারী আমার উপর জেলা সভাপতির দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। শপথ গ্রহণের পরেই থানা ও সাথী শাখাগুলোর সেটআপ এর বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য সদস্য বৈঠক ডাকা হয়। সদস্য বৈঠকে সোনাগাজী পশ্চিম সাথী শাখার সভাপতি হিসেবে মুস্তাফিজুর রহমান ভাইর নাম পাশ হয়।

কিন্তু সোনাগাজী সাথী শাখার সভাপতি হিসেবে সদস্য বৈঠকে যাকে চিন্তা করা হয়েছিল একটা বিশেষ কারণে উনাকে ওখানে সেটআপ করা যায়নি। এ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে জরুরী সেক্রেটারীয়েট বৈঠক আহবান করলাম। সেক্রেটারীয়েট বৈঠকে পরামর্শ হলো মুস্তাফিজ ভাইকে সোনাগাজী সাথী শাখার সভাপতি করার। যথারীতি সাথী শাখার সেটআপ প্রোগ্রামে গিয়ে তাকে আল হেলাল একাডেমীর মসজিদে নিয়ে গিয়ে যখন বিষয়টা খুলে বললাম এবং তাকে নিয়ে আমাদের চিন্তার কথা জানালাম, তিনি কোন প্রতিবাদ করেননি। ছলছল করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘক্ষণ কান্নাকাটি করলেন। তার অবস্থা দেখে আমি নিজেও সে দিন অশ্রু সংবরণ করতে পারিনি। সংগঠনের একটি সংকট মুহুর্তে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে মতের কোরবানীর যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, নিজের মতের উপর সংগঠনের সিদ্ধান্তকে যেভাবে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, সে দিন থেকে তার উপর আমার আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তি অনেক মজবুত হয়ে যায়।

দায়িত্ব পালনে আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্ৰদৰ্শন :

সোনাগাজী সাথী শাখায় দীর্ঘ দিন যাবত আমরা অনেকগুলো সংকট মোকাবেলা করছিলাম। বিশেষ করে ময়দান থেকে যোগ্য নেতৃত্বের ধারাবাহিক রিক্রুটমেন্ট না থাকা। ময়দানের বিশাল ভৌগলিক এলাকার তুলনায় মানের জনশক্তি কম থাকা। শাখার আভ্যন্তরীন জান্নাতি পরিবেশ কাক্ষিত মানের চেয়ে কম থাকা। উপরোক্ত সমস্যা ও সংকট মোকাবেলা করার পাশাপাশি জেলার যে কোন দাবী এবং চাহিদা পূরণে মুস্তাফিজ ভাই'র ভূমিকা মাঝে মধ্যে আমাকে অভিভূত করতো। যে কোন দায়িত্ব বা কাজ দিতাম তা পালনে অনীহা তো দূরের কথা টু শব্দটি পর্যন্ত করেছেন আমার মনে পড়েনা। মাঝে মাঝে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতাম, আমার এই ভাইটা এত ভাল কেন?

অনাড়ম্বর জীবন যাপনঃ

রাসূল (সাঃ) বলেন “দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হও তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। আর মানুষের হাতে যা আছে তার প্রতিও অনাসক্ত হও তাহলে মানুষও তোমাকে ভালবাসবে”। অনাড়ম্বর জীবন যাপনের মূর্ত প্রতীক ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান ভাই। তার চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, পোশাক-পরিচ্ছদে গর্ব-অহংকারের লেশ মাত্র ছিলনা ।

সকল কষ্ট নিজের ভিতর রাখতেনঃ

২০১৩ সাল ছিল কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবীতে তীব্র আন্দোলনের বছর। কেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়তই হরতাল, অবরোধ, মিছিল আর বিক্ষোভের কর্মসূচী ছিল ধারাবাহিকভাবে। আর এ সমস্ত কর্মসূচী যথার্থভাবে পালনের ক্ষেত্রে স্থানীয় মুরুব্বী সংগঠন কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করতেন। একদিকে জেলা সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য চাপ অন্যদিকে স্থানীয় মুরুব্বী সংগঠনের সীমাবদ্ধতা আরোপের প্রেক্ষাপটে যে মানসিক কষ্ট পেতেন তার অভিযোগ কখনো করতেন না। সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করে উভয়ের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করতেন।

একদিন সোনাগাজী সাথী শাখা সফর করে ফেরার মুহুর্তে শাখা সেক্রেটারী হেদায়েত উল্লাহ ভাই আমাকে বললেন ভাইয়ের (মুস্তাফিজ ভাই) শরীরের কি অবস্থা হয়েছে একটু দেখবেন কিনা?

আমি বললাম কেন কি হয়েছে? মুস্তাফিজ ভাইর নিকট প্রকৃত ঘটনা জানতে চাইলাম। তিনি কিছুতেই আমাকে ঘটনা খুলে বললেন না। পরে আমি জানতে পারলাম রাতে বাসায় পুলিশ এসেছিল মুস্তাফিজ ভাইকে গ্রেপ্তার করতে। মুস্তাফিজ ভাই যে বাসায় থাকতেন সেটি ইটে তৈরী টিনশেড ঘর। নিরাপদে সরার জন্য ঐ বাসার পিছনে কোন দরজা ছিলনা। তাই পুলিশ থেকে আত্মরক্ষার জন্য তিনি বাসার ছাদ সংলগ্ন যে বেড়া (দমদমা) ছিল তার ফাঁক দিয়ে বহু কষ্টে পাশের একটি হিন্দু বাসায় আশ্রয় নেন। ঐ বেড়ার ফাঁক দিয়ে যাওয়ার সময় পিঠে এবং বুকে প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছেন। কিন্তু কষ্ট নিজের ভিতর রেখেছেন, কখনো আমাদেরকে জানতে দেননি।

অনুপম সামাজিক গুনাবলীঃ

সব ধরনের মানুষের সাথে মুস্তাফিজ ভাই'র সু-সম্পর্ক ছিল। তিনি রাজনৈতিক মত পার্থক্যের উর্ধ্বে উঠে শত্রু-বন্ধু সকলের সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে চলতেন। এ পর্যায়ে রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদিস মনে পড়লো, হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, “হে আয়েশা! আল্লাহ তা'য়ালার নিকট নিকৃষ্ট হল সে ব্যক্তি যার অভদ্র ও অশোভন আচরণ হতে বাঁচার জন্য মানুষ তাকে এড়িয়ে চলে।  (বুখারী)

দায়িত্ব পালনে পেরেশানীঃ

এ গুনটি মুস্তাফিজ ভাইয়ের মাঝে ছিল চোখে পড়ার মতো। কিসে আন্দোলনের উন্নতি হবে, সংগঠনের সমৃদ্ধি আসবে সে চিন্তার বাইরে দুনিয়াবী কোন চিন্তা তার ভিতর দেখা যায়নি। যে দিন সন্ধ্যায় তিনি এক্সিডেন্ট করেছেন সে দিন ও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এদিকে তার আম্মা খুব অসুস্থ। শাখার কাজ শেষ করে মাগরিবের নামায আদায় করে আম্মাকে দেখার জন্য বাড়ীতে যাওয়ার পথে সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হন। মাকে তো আর এক নজর দেখতে পারলেন না। এই জনম দুঃখীনি মাকে আজ কে সান্তনা দিবে আমরা জানি না ।

মৃত্য যন্ত্রনা ছিলনাঃ

আপন মালিককে সন্তুষ্ট করার জন্য যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে দয়াময় মালিক তাদের শাহাদাতের আঘাতকে ব্যথাহীন করে দেন।

হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, শাহাদাত লাভ কারী ব্যক্তি নিহত হবার কষ্ট অনুভব করেনা। তবে তোমাদের কেউ পিঁপড়ার কামড়ে যতটুকু কষ্ট অনুভব করে কেবল তারা ততটুকুই অনুভব করে। (তিরমিযী)

মুস্তাফিজ ভাই'র ক্ষেত্রে এ হাদীসের বাস্তব প্রতিচ্ছবি দেখেছি। সড়ক দূর্ঘটনার পর তাকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখনো তার নিত্য দিনের মতোই হাস্যজ্জল চেহারা ছিল। আঘাতের স্থান নির্ধারণের জন্য তাঁর হাত পা বার বার নাড়া চড়া করে দেখা হচ্ছে। এক্স-রে করার জন্য তাকে এপিঠ-ওপিঠ, চিৎ করে কা‍ করে শোয়ানো হচ্ছে তারপরও মনো হলো ওনার কিছুই হয়নি। ব্যথার কোন অনুভূতি তার চেহারায় পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু এক্সরের ফিল্মে যখন দেখলাম তার পায়ের হাড় ভেঙ্গে পরস্পর স্থানচ্যুত হয়ে গেলো, তখন অবাক লাগলো আমার কাছে। এত বড় মারাত্মক আঘাত পাওয়ার পরও ভাইয়ের ব্যথার অনুভূতি কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। জরুরী বিভাগের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে যখন তাকে হাসপাতালের বেডে আনা হলো মারাত্মক জখম নিয়েও সবার সাথে কথা বলছেন। রাত তখন প্রায় ১০:৩০ টা। মুস্তাফিজ ভাইর এক্সিডেন্টের খবর শুনে যারা তাকে দেখতে এসেছিলো তারা প্রায় সকলে ততক্ষণে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। আমি জরুরী বিভাগের কাজ শেষ করে বিভিন্ন ডাক্তারের সাথে তার চিকিৎসার ব্যাপারে পরামর্শ করে মুস্তাফিজ ভাই যে বেডে আছেন তার অদুরে চেয়ার টেনে বসলাম। নিজেও একদিকে চিন্তিত অন্যদিকে ক্লান্ত। দেখলাম মুস্তাফিজ ভাই'র চোখ দুটি বন্ধ। ভাবলাম ঘুমাচ্ছেন। নাকে তার প্লাষ্টার করা, ঠোট এবং মুখ কিছুটা ফুলে গেছে। সম্ভবত আমার উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন, ভাইয়া কেমন আছেন? আমি অবাক হলাম। এত কষ্টের মাঝেও ভাই নিত্যদিনের মতই আমার খোঁজ নিচ্ছেন। এ স্মৃতি গুলো মনে পড়লে আজও অশ্রুতে দু'চোখের কোণ ভিজে যায়।

পরিবারের অনুভূতি
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন
শহীদ মোস্তাফিজুর রহমানের বড় দুলা ভাই

“আমার প্রিয় ছোট ভাই (শ্যালক) দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একনিষ্ঠ সৈনিক। সোনাগাজী সাথী শাখার সংগ্রামী সভাপতি শহীদ মোস্তাফিজুর রহমান। আজ আর দুনিয়াতে নেই। এই কথা যখন মনে পড়ে তখর যেন বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। সকলের অতি আদরের মোস্তাফিজ লেখা পড়ায় যেমন ছিল মনযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রে ছিল আরো বেশি ত্যাগী । দুনিয়ার কোন রক্ত চক্ষু তাকে এক মূহুর্তের জন্যেও দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ময়দান থেকে পিছু হঠাতে পারেনি। সে ছিল সদা হাস্যোজ্জ্বল ও ধৈর্য্যশীল। ২৫ই ফেব্রুয়ারী’১৪ মাগরিবের নামাযের পর প্রোগ্রাম শেষ করে আসার পথে মটর সাইকেল এক্সিডেন্ট করে। এক্সিডেন্ট হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়ার আগে আমি হাসপাতালে পৌঁছি। তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে তখন থেকে দুই দিন তার সাথে সার্বক্ষণিক ছিলাম। সে বুঝে ছিল যদিও বেঁচে থাকি পা হারাতে হবে। কিন্তু কোন কষ্ট তার চেহারায় আমি দেখিনি, সে ছিল স্বাভাবিক হাস্যোজ্জ্বল। হাসপাতালে দেখতে আশা সকলের সাথে সে কথা বলতো। মৃত্যুর পূর্বে হঠাৎ সুস্থ মানুষের মত উঠে, বসে তার বোনকে বলতেছে, “আপু কিসের ঘুম যাচ্ছেন, উঠুন নামাজ পড়ুন, আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি” । এই ঘুম যে আর কখনো ভাঙবেনা তার আপু হয়তো বুঝতে পারেনি। আমি মহান আল্লাহ তা'য়ালার নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন মুস্তাফিজকে শহীদ হিসাবে কবুল করেন এবং জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করেন।”


লেখক
মোঃ জাহিদ হোসাইন
সাবেক সভাপতি,
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
ফেনী জেলা

মূল লিখা: রক্তাক্ত ফেনী

Tuesday, November 22, 2022

সংক্ষেপে সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (র.) এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী

সংক্ষেপে সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (র.) এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী

মাওলানা মওদূদী (: একটি জীবন একটি ইতিহাস

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক ইসলামি আন্দোলনের বিপ্লবী সিপাহসালার মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল 'লা মওদূদী (ابو الاعلی مودودی) (Sayyid Abul A'la Maududi) (র.) ছিলেন ইসলামি জাগরনের অগ্রপথিক তাঁর সমগ্র জীবন অতিবাহিত হয় একদিকে কঠোর শ্রম, সাধনা, অগাধ জ্ঞানচর্চা গবেষণায় এবং অপরদিকে বিশ্বমানবতার কাছে দ্বীন ইসলামকে তার প্রকৃতরূপে উপস্থাপনায় যেমন তাকে উপস্থাপন করেছে কুরআনুল কারীম তারপর ইসলামকে যারা বুঝলো এবং সত্য বলে গ্রহণ করল তাঁদের কাছে তাঁর দা'ওয়াত ছিলো ইসলামের ছাঁচে গোটা জীবন গড়ে তোলার, বাতিল ব্যবস্থা ভেঙ্গে চুরমার করে ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দুর্বার সংগ্রাম করার তার জন্য তাঁকে হাসিমুখে বরণ করতে হয়েছে অজস্র কটূক্তি, অমূলক অভিযোগ, অপবাদ এবং বিশেষ শ্রেণির পক্ষ থেকে ফতোয়ার অবিরল গোলাবর্ষণ বারবার তাঁকে যেতে হয়েছে কারার অন্তরালে, এমনকি ফাঁসির মঞ্চে অন্ধকার সংকীর্ণ কঠুরীতে

সর্বশেষ নবীর পর আর কোনো নবী আসবেন না বলেই আল্লাহ যুগে যুগে উম্মাতে মুহাম্মদির মধ্যেই এমন ব্যক্তি পয়দা করে এসেছেন যারা শেষ নবীর শিক্ষাকে সঠিকরূপে আবার মানব জাতির সামনে তুলে ধরার মহান দায়িত্ব পালন করেছেন প্রসঙ্গে রাসুল (সা:) ঘোষণা করেছেন:- “প্রতি শতাব্দীর শুরুতে আল্লাহ তা'য়ালা এই উম্মতের জন্য এমন ব্যক্তি পাঠাবেন যিনি উম্মতের দীনকে নতুন করে পূন:জীবত করবেন (আবু দাউদ)

ইকামতে দ্বীন ইসলামের পুনরুজ্জীবনে মাওলানা মওদূদী (:) এর অবদান যে কত বিরাট, সে কথার বলিষ্ঠ বাস্তব সাক্ষী তাঁর রচিত তাফসির গ্রন্থ বিপুল ইসলামি সাহিত্য আর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া ইসলামি আন্দোলনের রুপরেখা

 

মাওলানার জন্ম বংশ পরিচয়:

সাইয়্যেদ আবুল 'লা মওদূদী () ১৯০৩ সালে ২৫ শে সেপ্টেম্বর, হিজরি সন ১৩২১ সালের ৩রা রজব ভারতের হায়দারাবাদ রাজ্যের (বর্তমানে অন্ধ্র প্রদেশ) দাক্ষিণাত্যের আওরঙ্গবাদ শহরে জন্মগ্রহন করেন তাঁর পিতার নাম সাইয়্যেদ আহমেদ হাসান, যিনি পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন মাওলানার মায়ের নাম রুকাইয়া বেগম মাওলানা (রহ:) আল হুসাইন ইবনু আলীর (রা) বংশের বিয়াল্লিশতম পুরুষ পাক- ভারতের সুফি দরবেশ হযরত খাজা মুইনুদ্দীন চিশতীর সাথে মওদুদীর (রহ:) খান্দানের সম্পর্ক আছে হিজরি ৩য় শতাব্দীতে হযরত আলী-ফাতেমীয় বংশের একটি শাখা আফগানিস্তানের হিরাট শহরের সন্নিকটে যে স্থানে বসবাস শুরু করেন, সে স্থানটির পরবর্তিতে নাম হয়চিশত বংশের খ্যাতিনামা ওয়ালীয়ে বয়ুর্গ শাহ সুফি আবদাল চিশতী (:) ইমাম হাসানের বংশধর ছিলেন তিনি ৩৫৫ হিজরিতে ইন্তিকাল করেন পরবর্তিতে একই বংশের খাজা কুতুবুদ্দিন মওদূদী চিশতী (:) ভারতবর্ষের চিশতীয়া পীরগণের আদিপীর ছিলেন মওদূদী -খান্দানের উদ্ভব তাঁরই নাম অনুসারে তিনি ৫৭২ হিজরিতে ইন্তিকাল করেন আবুল 'লা চিশতি (:) এর নাম অনুসারে মাওলানা মওদূদীর পিতা জনৈক বুজুর্গের পরামর্শমতো নাম রাখেন সাইয়্যেদ আবুল 'লা মওদূদী


মাওলানার বাল্যকাল :

মাওলানা মওদুদী (:) এর বাবা ছিলেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন আইনজীবী তিনি খুব কমই ধর্ম কর্মের প্রতি খেয়াল রাখতেন কিন্তু যখন জনৈক বুজুর্গ হাসান মওদূদী কে বলেছিলেন, “দেখ, আল্লাহর ফযলে তোমার একটি পুত্রসন্তান হবে তার নাম রাখবে আবুল 'লা মওদূদী কারন এই নামে একজন প্রসিদ্ধ কামেল পীর তোমাদের পূর্বপুরুষ হিসেবে সর্বপ্রথম ভারতে এসেছিলেন মাওলানা মওদূদীর জন্মের বছর পূর্বে বাবা উক্ত বুজুর্গের নসিহত শোনার পর মনের মধ্যে এক বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছিল পরবর্তিতে পুত্রের জন্মের মাত্র এক বছর পর তিনি সংসারত্যাগী হয়ে খোদার প্রেমে পাগল হয়েছিলেন

বাল্যকাল থেকেই মাওলানা মওদূদী তাই ইসলামি পরিবেশে বড় হতে থাকেন শিশু মওদূদীর কচি হৃদয়ে ইসলামি ভাবধারাপূর্ণ চিত্র অঙ্কিত হলো পিতার স্বপ্ন ছিলো মওদূদীকে একজন আলেমে দীন বানাবেন, তাই তিনি অন্যান্য বালকদের মতো তাঁকে হাতছাড়া করেননি সাধারণের সাথে মেলামেশা গল্পগুজবে নৈতিকতা ভদ্রতা রক্ষা করে চলবার ব্যাপারে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল পিতা শিশু মওদূদীকে উন্নত চরিত্র গঠনের জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করেছিলেন দুষ্ট অসৎ সংসর্গে মিশে তার চরিত্র যাতে কলুষিত না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতেন

পিতা তার ছেলেকে মাতৃভাষা উর্দু যত্ন করে আয়ত্ত্বে রাখাতেন পুত্রের ভাষার বিশুদ্ধতা রাখার জন্য বাইরে মিশতে দিতেন না !

 

মাওলানার শিক্ষাজীবন:

মাওলানা মওদূদীর পিতা সাইয়্যেদ আহমেদ হাসানের ইচ্ছা ছিল তার ছেলেকে বড় আলেমে দীন বানাবেন তাই তিনি ছোটবেলা থেকেই শিশু পুত্রের শিক্ষক ছিলেন মাওলানা মাত্র বছর বয়সেই বর্ণমালা শিখে ফেলেন বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার জন্য গৃহশিক্ষক রাখা হয় তাঁর জন্য সে সময় মাওলানার পরিবারের মাতৃভাষা ছিল উর্দু বাবা তার ছেলেকে বিশুদ্ধ মাতৃভাষা শিখতে যথেষ্ট উদ্যোগী ছিলেন তিনি নিজে ছেলের সামনে বিশুদ্ধ প্রাঞ্জল উর্দু ভাষা বলতেন যাতে ছেলের ভাষাও বিশুদ্ধ থাকে

বছর বয়স পর্যন্ত মাওলানা মওদূদীকে বাড়িতেই বিদ্যাচর্চা করানো হয় সময়ে তিনি আরবি ব্যাকরণ, সাহিত্য এবং ফেকাহ-শাস্ত্রের বিভিন্ন প্রাথমিক পুস্তকাদি শেষ করেন পরবর্তীতে মওদূদীর ওস্তাদ মৌলভী নাজীমুল্লাহ হুসাইনীর পরামর্শে তাঁকে আওরংগাবাদের ফোরকানিয়া (উচ্চ) মাদ্রাসায় রুশদিয়া মানের শেষ বর্ষ ৮ম শ্রেনীতে সরাসরি ভর্তি করানো হয় সময় তাঁর বয়স ছিল ১১ বছর ১৯১৬ সালে মাওলানা মাদ্রাসা ফোরকানিয়া থেকে ম্যাট্রিকুলেশান মানের পরীক্ষায় পাশ করেন সময় তাঁর মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ছিলেন মোল্লা দাউদ তাদের শিক্ষার মাধ্যম ছিলো উর্দু তবে রসায়ন, পদার্থ, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস, ভুগোল প্রভৃতি বিষয়েও তখন পড়ানো হতো প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শিবলী নোমান পরিচালিত এসব শিক্ষা-ব্যবস্থায় কোরআন-হাদিস, ফেকাহ, আরবি সাহিত্যের ব্যাকরণ-সহ বিজ্ঞানও পড়ানো হতো তখন ম্যাট্রিককে মৌলভী, ইন্টামেডিয়েটকে মৌলভী আলেম, আর ডিগ্রি কলেজ কে দারুল উলুম বলা হতো ম্যাট্রিকের পর হায়দারাবাদ কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বাবার অসুস্থতায় তাঁর প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি ঘটে

 

মাওলানার কর্মজীবন:

পিতার অসুস্থতার কারণে ১৯১৬ সালে দারুল উলুমের পড়াশুনা বাদ দিয়ে হায়দারাবাদ থেকে অসুস্থ পিতাকে নিয়ে ভূপালে চলে আসেন পিতার অসচ্ছলতা অসুস্থতায় পরিবারের অর্থনৈতিক হাল ধরার জন্য মাওলানা মওদূদী ১৯১৮ সালেমাসিক মদিনাপত্রিকায় চাকুরী নেন সম্পাদকীয় স্টাফের একজন সদস্য হিসেবে তখন তাঁর বড় ভাই সাইয়্যেদ আবুল খায়ের মওদূদী বিজনৌর থেকে প্রকাশিতমাসিক মদিনা' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তবে চাকুরীর দুই মাস পরেই সেখান থেকে চলে আসেন দিল্লিতে পরে ১৯১৮ সালেই জব্বলপুরের জনৈক তাজউদ্দিন নামক ব্যক্তিরসাপ্তাহিক তাজ' পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নেন মাওলানা মওদূদীসহ তার বড় ভাই কিন্তু কিছুদিন পর পত্রিকাটি অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় মাওলানা দিল্লি ছেড়ে ভূপালে চলে যান ১৯২০ সালে 'তাজ পত্রিকা' আবার চালু হলে মাওলানাকে সম্পাদক নিযুক্ত করা হয় তখন তার বয়স মাত্র ১৭ বছর মওদূদীর নিরলস প্রচেষ্টায় সাপ্তাহিকতাজ’ ‘দৈনিক তাজ' পরিণত হয় কিন্তু ব্রিটিশ-বিরোধী নিবন্ধ প্রকাশ করায় পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় সময় মাওলানার বাবা সাইয়্যেদ হাসান ইন্তিকাল করেন ১৯২০-এর শেষে মাওলানা দিল্লিতে চলে আসেন ১৯২১ সালে পরিচিত হন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুফতি কিফায়েতউল্লাহ মাওলানা আহমেদ সাঈদের সাথে তখন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দমুসলিমপত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিলে মাওলানাকে এর সম্পাদক নিযুক্ত করা হয় ১৯২৩ সালে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেলে মাওলানা আবার ভূপালে আসেন, ১৯২৫ সালে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দআল জমিয়তনামে একটি পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করলে মাওলানাকে পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় ১৯২৬ সালে তিনি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন যখন স্বামী বিকেকানন্দ নিহত হয় তখন তার বয়স ছিল ২৬ বছর তিনি তখন জমিয়তের সদস্য ছিলেন না; তবে যোগ্যতা বলেই সম্পাদক নিযুক্ত হন এই পত্রিকার সম্পাদক থাকা কালে ১৯২৬ ১৯২৭ সালে ২৪ কিস্তিতে তার জ্ঞানগর্ভ লেখাআল জিহাদু ফিল ইসলামলিখে জিহাদ সম্পর্কে মুসলিমদের ধারণা পরিষ্কার করেন যা হিন্দু নেতাদের ইসলাম সম্পর্কে বিরোধিতার প্রতিবাদের হাতিয়ার ছিল ১৯২৮ সালে জমিয়তে উলামায় হিন্দ All India National Congress এর রাজনেতিক স্ট্যান্ডের প্রতি সমর্থন জানালে মাওলানা তাদের পত্রিকাআল জমিয়ত”-এর সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দেন সময় তিনি বিভিন্ন ইসলামি গবেষকদের গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করতে থাকেন ১৯৩২ সালে আবু মুহাম্মদ মুসলিহ নামের এক ব্যক্তি হায়দারাবাদ থেকেমাসিক তরজুমানুল কুরআননামে একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিলে মাওলানাকে সম্পাদক নিযুক্ত করা হয় সময় তার বয়স ছিল ২৯ বছর অল্পকালের মধ্যেই তিনি পত্রিকার মালিকানা নিয়ে নেন পত্রিকাটিকে ইসলামি জাগরণের নকিব বলা হয় ১৯৩৬ সালের পরে মাওলানা . আল্লামা ইকবালের পরামর্শে হয়দারাবাদ ছেড়ে পাঞ্জাবে যাবেন বলে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক বিভাগের প্রধান মানাকি আহসান মাওলানাকে ২৮০০ রুপি মাসিক বেতনে ইসলামিয়াতের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত করতে প্রস্তাব দেন মওলানা তা প্রত্যাখ্যান করেন ১৯৩৯ সালে ৭ই সেপ্টেম্বর মাওলানা লাহোর ইসলামিয়া কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন তবে তিনি বেতন নিতে রাজি হননি পরে ১৯৪০ সালে চাকুরি ছেড়ে দেন

 

মাওলানার চেহারা সৌন্দর্য:

তিনি লম্বা ছিলেন না তেমন খাটোও ছিলেন না পরিপুষ্ট দেহের অধিকারী ছিলেন লালচে সাদা রঙের প্রশস্ত চেহারা বড়ই আকর্ষনীয় ছিল চেয়ে থাকার মতো চেহারা ছিল দাড়ি সুন্দর মানানসই ছিল তাঁর বড় দুটি চোখ চেহারাকে আরও আকর্ষনীয় করেছিল তিনি চশমা পড়তেন মুখের চেহারার সাথে চশমাও জুতসই মানাতো তাঁর মুখমণ্ডল চাপা ছিলো না মুখমণ্ডল ভর্তি স্থল মাংস মুখকে সতেজ গোলাকৃতি দিয়েছিল তাঁর চোখের ভ্রু আকর্ষনীয় ছিলো অধ্যাপক গোলাম আযম বলেন, “তিনি সৈয়দ বংশের লোক ছিলেন সীরাত বইতে রাসুল (সা:)-এর চেহারা মুবারকের যে বর্ণনা-পেয়েছি তার সাথে যতটুকু মিল মাওলানার চেহারায় পেয়েছি বলে আমার মনে হয়েছে এতটা মিল আর কারো চেহারায় দেখিনি মাওলানা মওদূদীর ব্যক্তিগত অভ্যাস, আচার-আচরণ, বলার ভঙ্গি, চলার ধরন, পোশাক- পরিচ্ছেদ, তাঁর বৈঠকখানার অনাড়ম্বর সাঁজ, তাঁর গোছানো-টেবিল ইত্যাদি কোনোটিই চমৎকার সুন্দর বলে স্বীকার না-করে পারা যায় না মাওলানার পরিণত বয়সে যখন দাড়ি পেকে যায় তখন তিনি সাদাই রেখেছেন কোনো কালার করেননি মাওলানার চুল ছিল রাসুল (:)-এর তিন স্টাইলের একটির মতো পিছনের দিকের চুল কানের লতি পর্যন্ত মাওলানা পাঞ্জাবি, কোর্তা, কোট-সহ আধুনিক ইসলামিক নেতার মতো জুতসই পোশাক পরিধান করতেন তাঁর পোশাকে তাঁর সৌন্দর্য ফুটে উঠতো তিনি বড় খাড়া মখমলের টুপি পরিধান করতেন যা তাঁর মাথার সাথে মানানসই হতো

 

মাওলানার পরিবারিক জীবন :

১৯৩৭ সালে মাওলানা ৩৪ বছর বয়সে বিয়ে করেন দিল্লির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারেদারুল ইসলামেহিজরত করার এক বছর পূর্বে ১৯৩৭ সালের ৫ই মার্চ মাওলানা সাইয়েদ বংশের এক মেয়ে মাহমুদা বেগমকে বিয়ে করেন মাওলানার স্ত্রী ছিলেন ইংলিশে অত্যন্ত পন্ডিত মহিলা তিনি ছেলেবেলায় দিল্লির এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশুনা করতেন তিনি বালিকা-থাকা অবস্থায় বাইসাইকেল চালানো জানতেন মাওলানার সাথে তাঁর বিয়ে হওয়ার সময় দেনমোহর নিয়ে দরকষাকষি হয়েছিল মাওলানা অতি উচ্চাকাঙ্খী মোহরানা ধার্য্য না করে বরং তার সাধ্য অনুযায়ী-অল্প টাকা দেনমোহর হিসেবে দিতে চান এবং তা নগদ বুঝিয়ে দিয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসেন মাওলানার চার ছেলে তিন মেয়ে

 

বিকেলের আসর:

মাওলানার বাড়িতে তাঁর জীবদ্দশায় প্রত্যেকদিন আসর- মাগরিব বিকেলের আসর বসত তাঁর বাড়ির উঠানে ফুলবাগানে ঘেরা একটি জায়গায় ঘাসের উপর মখমলের চাদর বিছিয়ে এই আসরে-আসা লোকজন বসতেন এখানেই মাওলানার ইমামতিতে আসর মাগরিরের নামাজ হতো এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন আসতেন তাঁকে দেখতে প্রশ্ন করে উত্তর নিতে -সময় তাঁরা বিভিন্ন জটিল জটিল প্রশ্ন করতেন আর মাওলানার নির্ভুল সহজ-সাবলীল উত্তর শুনে মুগ্ধ হতেন তাঁদের প্রশ্নগুলো ছিল ইসলাম, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবারিক জীবনাচার, সরকার, সম্পদ ইত্যাদি নিয়ে একবার উড়োজাহাজ বিষয়ে কথা উঠলে মাওলানা এমনভাবে উড়োজাহাজ সম্পর্কে বলেন যেন তিনি একজন বিমান- প্রকৌশলী তিনি যাবতীয় কলকজ্জা, তার গঠন, যান্ত্রিক ক্রিয়া সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করেন, এতে শ্রোতাগণ মুগ্ধ-মনে শুনতে থাকেন একবার ইসরাইলের প্রসঙ্গে কথা উঠলে তখন তাদের আদ্যোপান্ত ইতিহাস, তাদের যুদ্ধকৌশল, তাদের গুপ্তচর বৃত্তি এমনভাবে বর্ণনা করলেন যে, শ্রোতাগণ মনে করলেন যে, তাঁরা কোনো ইসরাইলী পন্ডিতের মুখেই কিছু শুনছেন মাওলানারশেষ বিকেলের আসরবইটি পড়লে এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুজে পাওয়া যায় যে-প্রশ্নগুলো আমাদের মনে প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খায় কিন্তু কেনো লেখকের বই পড়ে উত্তর পাওয়া যায় না আব্বাস আলী খানের মতে, তিনি -যুগের বিশ্বকোষ বা ইনসাইক্লোপিডিয়া ছিলেন

 

 

সালভিত্তিক একনজরে মাওলানার জীবনপঞ্জি

১৯০৩ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর ভারতের হায়দারাবাদের আওরঙ্গবাদ শহরে জন্ম গ্রহন করেন

১৯০৬-১৯১৩ সাল গৃহে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন

১৯১৪ সালে ১১ বছর বয়সে মৌলভী পরীক্ষায় পাশ

১৯১৬ সালে দারুল উলুম হায়দারাবাদে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ভর্তি

১৯১৭ সালে পিতার অসুস্থতায় শিক্ষাজীবন বন্ধ করে ভুপালে অবস্থান

১৯১৮ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সেমাসিক মদিনা' পত্রিকার সম্পাদক

১৯১৮ সালে খিলাফত আন্দোলনে যোগদান

১৯১৯ সালে আঞ্জুমানে ইয়ানতে নযরবন্দানে ইসলাম এর সক্রিয় সদস্য

১৯২০ সালে জব্বলপুরেদৈনিক তাজ' পত্রিকার সম্পাদনার ভার গ্রহণ

১৯২১ সালে দিল্লি গমন ইংরেজি, আরবি, হাদিস, ফেকাহও তাফসীর অধ্যয়ন

১৯২২ সালে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এর মুসলিম পত্রিকার সম্পাদক

১৯২৩ সালে মুসলিম পত্রিকা বন্ধ হলে ভুপালে গমন গভীর অধ্যয়ন শুরু

১৯২৪ সালেহামদর্দআলজমিয়তপত্রিকায় সম্পাদনার ভার গ্রহন

১৯২৫ সালে মাওলানা আহমদ সাঈদেরআলজমিয়ত' পত্রিকার প্রধান সম্পাদক

১৯২৭ সালে ২৪ বছর বয়সেআল জিহাদ ফিল ইসলামগ্রন্থ প্রনয়ন

১৯২৮ সালে জমিয়ত কংগ্রেসকে সমর্থন করায় তাঁদের পত্রিকা থেকে ইস্তফা

১৯৩০ সালে হায়দারাবাদে প্রত্যাবর্তন এবংইসলাম পরিচিতগ্রন্থ রচনা

১৯৩১ সালে বই লেখনীতে আত্মনিয়োগ

১৯৩২ সালে হায়দারাবাদ থেকেমাসিক তরজুমানুল কোরআনপ্রকাশ

১৯৩৩ সালেইসলামী তাহযিব আওর ইসকে ওসুল মুবাদিগ্রন্থ প্রনয়ন

১৯৩৩ সালেইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা তাকদীরের হাকিকতগ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৩৩-৩৮ সালেইসলাম পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্বগ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৩৩-৩৮ সালে তাফহীমাত ১ম,২য় খণ্ড গ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৩৪-৩৫ সালে ইসলামি দাওয়াত জনসম্মুখে তুলে ধরার সূচনা

১৯৩৫ সালে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রন গ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৩৬ সালে কবি আল্লামা ইকবালের সাথে মত বিনিময়ের সূচনা

১৯৩৬ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা খসড়া প্রনয়ন

১৯৩৬-৩৭ সালে ইসলাম পরিচিতি, সুদ, পর্দা গ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৩৮ সালে হায়দারাবাদ থেকে পূর্ব পঞ্জাবের পাঠান কোর্টে হিজরত

১৯৩৮ সালে পাকিস্তানের স্বপ্ন দ্রষ্টা কবি আল্লামা ইকবালের পরামর্শে দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা

১৯৩৮ সালে আল্লামা ইকবালের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ

১৯৩৯ সালেমুসলমান আওর মওজুদা সিয়াসী কাশামাকাশপ্ৰবন্ধ প্ৰকাশ

১৯৩৮ সালেইসলাম জাতিয়তাবাদগ্ৰন্থ প্ৰকাশ

১৯৩৮ সালে হাকীকত সিরিজের গ্রন্থ প্রকাশ

১৯৩৯ সালে তাজদীদ এইয়ায়ে দ্বীন, ইসলামী ইবাদতের পর তাহককী গ্রন্থ রচনা

১৯৩৯ সালে ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ ইসলামী ইবাদতের মর্মকথা রচনা

১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা খসড়া প্রণয়ণ কমিটির সদস্য

১৯৪০ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়েইসলামী বিপ্লবের পথ' শীর্ষক আলোচনা

১৯৪০ সালেইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলনগ্রন্থ প্রণয়ন

১৯৪১ সালের ২৬ শে আগষ্ট ৭৫ জন লোক নিয়েজামায়াতে ইসলামীপ্রতিষ্ঠা

১৯৪১ সালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জামায়াতের আমির নির্বাচিত

১৯৪১ সালেকুরআনের চারটি পরিভাষা” “ইসলাম জাহিলিয়াতপ্রণয়ন

১৯৪১ সালেনয়ানেজামে তালিম” “অর্থনৈতিক সমস্যার ইসলামী সমাধানরচনা

১৯৪১ সালেএকটি সত্যনিষ্ঠ দলের প্রয়োজনগ্রন্থ রচনা

১৯৪২ সালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস লাহোর থেকে দারুল ইসলামে স্থানান্ত

১৯৪২-৪৭ সালেরাসায়েল মাসায়েলএবংশান্তির পথ গ্রন্থপ্ৰকাশ

 ১৯৪৩ সালে বিখ্যাত আন্দোলনমুখী তাফসীর গ্রন্থতাফহীমুল কোরআনরচনা শুরু

১৯৪৩ সালেএকমাত্র ধর্মইসলমী আইনে মুরতাদের শাস্তিগ্ৰন্থ প্রণয়ন

১৯৪৪ সালেইসলামের নৈতিক দৃষ্টিকোনশিরকের হাকীকতগ্ৰন্থ প্ৰণয়ন

১৯৪৫ সালেতাওহীদের হাকিকত” “সমাজতন্ত্র ইসলামগ্রন্থ রচনা

১৯৪৪-৪৬ সালে ইসলামী আন্দোলনকে সুসংগঠিত সুদৃঢ়করনের উদ্যোগ

১৯৪৬ সালেসত্যের সাক্ষ্য” “ইসলামী দাওয়াত কর্মনীতিগ্ৰন্থ প্ৰকাশ

১৯৪৭ পাকিস্তান ভারত ভাগ হওয়ার পর জামায়াতও দুই ভাগ হয়ে যায়

১৯৪৭ সালে ২৪০ জন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ ৩৮৫ জন রুকন নিয়ে জমায়াতে ইসলামী পাকিস্তান গঠন

১৯৪৭ সালের শেষের দিকে জমিয়তে তালাবা (ছাত্রসংগঠন) প্রতিষ্ঠা হয়

১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস শহরে স্থানান্তর

১৯৪৭ সালে রিক্তহস্ত ছিন্নমূল অসহায় মুহাজিরিনের জন্য পুনর্বাসনের উদ্যোগ

১৯৪৭ সালে রেডিও পাকিস্তান থেকে কুরবানির উপর মাওলানার প্রথম বেতার ভাষণ

১৯৪৭ সালে জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত ভাঙ্গা গড়া তাকওয়ার হাকীকত রচনা

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাস পরে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু

১৯৪৮ সালে জানুয়ারী পাকিস্তান আইন কলেজে ভাষণে ইসলামি দাবি পেশ

১৯৪৮ সালে মার্চ ভাষনে ইসলামি শাসনব্যবস্থার জন্য দফা দাবি পেশ।

১৯৪৮ সালে ইসলামি শাসনের দাবিতে সভা সমাবেশ জনমত গঠনে অভিযান

১৯৪৮ সালে মওলানা কাশ্মীরের জিহাদকে হারাম বলেছেন বলে মিথ্যা অভিযোগ

১৯৪৮ সালের ১২ অক্টোবর মাওলানাকে সহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার কারাগারে প্রেরণ।

১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ জামায়াতের আন্দোলনের ফলে সরকারের আদর্শ প্রস্তাব প্রকাশ

১৯৪৯ সালে - মে জামায়াতের প্রথম নিখিল পাকিস্তান সম্মেলন

১৯৪৯-৫০ সালেসুদ -২য় খণ্ডভূমি মালিকানার বিধানগ্রন্থ প্রনয়ন

১৯৪৯-৫০ সালেজাতীয় মালিকানাপাকিস্তান আওরাত দুরাহেগ্রন্থ রচনা

১৯৫০ সালের ২৮ শে মে মাওলানার কারামুক্তি

১৯৫০ সালে সারাদেশে জনসভায় বক্তৃতা দান

১৯৪৫ সালেতাওহীদের হাকিকত” “সমাজতন্ত্র ইসলামগ্রন্থ রচনা

১৯৪৪-৪৬ সালে ইসলামী আন্দোলনকে সুসংগঠিত সুদৃঢ়করনের উদ্যোগ

১৯৪৬ সালেসত্যের সাক্ষ্য” “ইসলামী দাওয়াত কর্মনীতিগ্ৰন্থ প্ৰকাশ

১৯৪৭ পাকিস্তান ভারত ভাগ হওয়ার পর জামায়াতও দুই ভাগ হয়ে যায়

১৯৪৭ সালে ২৪০ জন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ ৩৮৫ জন রুকন নিয়ে জমায়াতে ইসলামী পাকিস্তান গঠন

১৯৪৭ সালের শেষের দিকে জমিয়তে তালাবা (ছাত্রসংগঠন) প্রতিষ্ঠা হয়

১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস শহরে স্থানান্তর

১৯৪৭ সালে রিক্তহস্ত ছিন্নমূল অসহায় মুহাজিরিনের জন্য পুনর্বাসনের উদ্যোগ

১৯৪৭ সালে রেডিও পাকিস্তান থেকে কুরবানির উপর মাওলানার প্রথম বেতার ভাষণ

১৯৪৭ সালে জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত ভাঙ্গা গড়া তাকওয়ার হাকীকত রচনা

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাস পরে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু

১৯৪৮ সালে জানুয়ারী পাকিস্তান আইন কলেজে ভাষণে ইসলামি দাবি পেশ

১৯৪৮ সালে মার্চ ভাষনে ইসলামি শাসনব্যবস্থার জন্য দফা দাবি পেশ।

১৯৪৮ সালে ইসলামি শাসনের দাবিতে সভা সমাবেশ জনমত গঠনে অভিযান

১৯৪৮ সালে মওলানা কাশ্মীরের জিহাদকে হারাম বলেছেন বলে মিথ্যা অভিযোগ

১৯৪৮ সালের ১২ অক্টোবর মাওলানাকে সহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার কারাগারে প্রেরণ।

১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ জামায়াতের আন্দোলনের ফলে সরকারের আদর্শ প্রস্তাব প্রকাশ

১৯৪৯ সালে - মে জামায়াতের প্রথম নিখিল পাকিস্তান সম্মেলন

১৯৪৯-৫০ সালেসুদ -২য় খণ্ডভূমি মালিকানার বিধানগ্রন্থ প্রনয়ন

১৯৪৯-৫০ সালেজাতীয় মালিকানাপাকিস্তান আওরাত দুরাহেগ্রন্থ রচনা

১৯৫০ সালের ২৮ শে মে মাওলানার কারামুক্তি

১৯৫০ সালে সারাদেশে জনসভায় বক্তৃতা দান

১৯৬১ সালে আফ্রিকা সফরে সরকারের বাঁধা প্রদান

১৯৬১ সালে হাদিস অমান্য কারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

১৯৬২ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইসলামি সম্মেলনে যোগদান

১৯৬২ সালে বিশ্বরাবেতায়ে আলমে ইসলামিপ্রতিষ্ঠার রুপরেখা দান

১৯৬২ সালে রাবেতায়ে আলম প্রতিষ্ঠা আজীবন সদস্য নির্বাচিত (কমিটির)

১৯৬৩ সালে লাহোরে নিখিল পাকিস্তান জামায়াত এর সম্মেলন বন্ধে সরকারের ব্যর্থ চেষ্টা

১৯৬৩ সালে লাহোরে সম্মেলনে বক্তৃতা কালে গুলিবর্ষন জামায়াত কর্মীর শাহাদাত

১৯৬৪ সালে ৪ঠা জানুয়ারি জামায়াত নিষিদ্ধ মাওলানা সহ সূরা সদস্যগণ গ্রেপ্তার

১৯৬৪ সালে ১৯ শে জানুয়ারি জামায়াতের সকল রেকর্ডপত্র বাজেয়াপ্ত করণ

১৯৬৪ সালে জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকারি প্রচারনা তীব্রকরণ

১৯৬৪ সালে ২৫ শে জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সরকারের পদক্ষেপ বেআইনী ঘোষণা

১৯৬৫ সালে মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যলয়ের বৈঠকে অংশগ্রহনের পূর্বে পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত

১৯৬৫ সালে ভারত কর্তৃক পাকিস্তান আক্রমন রেডিও পাকিস্তানে জিহাদের উপর মওলানার ৬টি ভাষণ

১৯৬৫ সালে যুদ্ধে জামায়াতের পক্ষ থেকে উদ্ধাস্তুদের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার ত্রান

১৯৬৬ সালে লাহোরে সর্বদলীয় জাতীয় সম্মেলনে তশখন্দ চুক্তির সমালোচনা

১৯৬৬ সালে আলোচিত অনবদ্য গ্রন্থখিলাফত রাজতন্ত্ররচনা

১৯৬৬ সালে মাওলানার পূর্ব পাকিস্তান সফর দেশের সমস্যা নিরুপণ

১৯৬৬ সালে রাবেতা আলমে ইসলামির বৈঠকে কাশ্মীর নিয়ে মাওলানার পুস্তিকা বিতরন।

১৯৬৭ সালে ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে মাওলানা-সহ জন খ্যাতনামা আলেম গ্রেপ্তার

১৯৬৭ সালে ১৯ শে জানুয়ারি গ্রেপ্তারের পর কয়েকদিন গুম করে রাখা হয়

১৯৬৮ সালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মাওলানার লন্ডন গমন

১৯৬৮ সালে লন্ডনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুসলমানদের উদ্দেশ্য করে মাওলানার ... ভাষণ

১৯৬৮ সালে UK ইসলামিক মিশনে বিশ্বের সকল দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মাওলানার ভাষণ

১৯৬৯ সালে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে আইয়ুব খান কতৃর্ক গোলটেবিলে বৈঠকে যোগদান

১৯৬৯ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসমাবেশে বলেন, আল্লাহ ছাড়া সামরিক শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করা আন্দোলনের মাধ্যমে কঠিন

১৯৬৯ সালে মরক্কো ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে যোগদান

১৯৭০ সালে ১৭ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে নবম সফর

১৯৭০ সালে মাওলানা ঘোষিতশওকাতে ইসলাম দিবসপালিত

১৯৭০ সালে ১৮ জানুয়ারি মাওলানার ঢাকার পল্টন সমাবেশে হামলায় জন ছাত্র নিহত ৫০০ জনের বেশি আহত

১৯৭০ সালে / যায়দার পার্কে শেষ বিকেলের আসরে ছুরি হাতে যুবকের মাওলানাকে হত্যার চেষ্টা

১৯৭০ সালের ২৮ জুন মাওলানার ঢাকায় ১০ম সফর এটাই শেষ সফর

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় পরিষদ নির্বাচন জামায়াত-সহ সকল দলের অংশগ্রহন

১৯৭১ সালে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির (আওয়ামীলীগ-মুজিব) হাতে ক্ষমতা দিতে বিবৃতি

১৯৭৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে ইসলামি সম্মেলনে রাষ্ট্রপ্রধানের অংশগ্রহনে যোগদান ভাষণ

১৯৭২ জুন মাসে বিখ্যাত তফসির গ্রন্থ তাফহীমুল কুরআন রচনা সমাপ্ত

১৯৭২ অবিরাম অসুস্থতার কারনে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের পদ থেকে ইস্তফা

১৯৭৪ সালে ইসলামি সম্মেলনে মুসলিম শাসকদের উদ্দেশ্যে মেমোরেন্ডাম পেশ ১২ দফা

১৯৭৪ সালে এপ্রিলে সস্ত্রীক USA সফর, ইসলামি ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ সম্মেলনে।

১৯৭৭ সালের ৪ঠা জুলাই সেনাপ্রধান জিয়াউলের ক্ষমতা গ্রহণ, ইসলামি বিধান প্রবর্তনের পদক্ষেপ

১৯৭৭ সালে ৬ষ্ঠ প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক ছিলেন মওদূদীর অনুপ্রাণিত ব্যাক্তি

১৯৭৯ সালে কিং ফয়সাল এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন এবং প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ ইসলামি গবেষণায় দান

১৯৭৯ সালে ছেলে ডা. আহমদ ফারুক মওদূদীর সাথে স্বস্ত্রীক চিকিৎসার জন্য USA গমন

১৯৭৯ সালের ৪ঠা আগষ্ট পেটের আলসার অপারেশন হয় সুস্থ হন

১৯৭৯ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর হঠাৎ হার্ট এটাক করেন

১৯৭৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মিলার ফ্লাওয়ার হাসপিটালে ইন্তিকাল করেন

১৯৭৯ সালের মৃত্যু পর্যন্ত তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর

১৯৭৯ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে জানাযা

১৯৭৯ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর - যাইলদার পার্কের বাসগৃহের সামনে দাফন

 

 

মাওলানার কিছু মূল্যবান বাণী

আমি অতীত বর্তমানের কারো কাছ থেকে দ্বীনকে বুঝবার চেষ্টা না করে সর্বদা কোরআন সুন্নাহ থেকে বুঝবার চেষ্টা করেছি অতএব খোদার দ্বীন আমার প্রত্যেক মুমিনের কাছ থেকে কি দাবি করে- কথা জানার জন্যে দেখার চেষ্টা করি না যে, অমুক বুযুর্গ কি বলেন কি করেন বরঞ্চ শুধু দেখার চেষ্টা করি যে, কোরআন কি বলে এবং তার রাসূল (সাঃ) কি করেছেন

-আবুল আলা মওদূদী

 

আমরা প্রকৃতপক্ষে এমন একটা দল তৈরি করতে চাই, যারা একদিকে দ্বীনদারী পরহেযগারীতে পারিভাষিক দ্বীনদার মুত্তাকী থেকে হবে অধিকতর অগ্রসর এবং অপরদিকে দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা চালানোর জন্যে সাধারণ দুনিয়াদার থেকে হবে অধিকতর যোগ্যতা ক্ষমতাসম্পন্ন সৎ লোকের এমন একটা দল গঠিত হওয়া উচিত, যারা লোকগুলো হবে খোদাভীরু, নিষ্ঠাবান বিশ্বস্ত আর তারা ভূষিত হবে খোদার মনঃপূত চরিত্র গুণাবলীতে তাঁর সাথে তাঁরা দুনিয়ার কাজ- কারবার বুঝতে পারবে দুনিয়াদারদের থেকে অধিকতর ভালোভাবে

-আবুল 'লা মওদূদী

 

আমার আমার সহকর্মী বন্ধুদের কাছে যখনই কথা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, আমরা চুল বরাবর কোরআন সুন্নাহ থেকে সরে পড়েছি, তখন ইনশাআল্লাহ দেখবেন যে, আমরা হকের দিকে ফিরে যেতে এক মুহুর্তও ইতস্তত করব না কিন্তু আপনারা যদি হক বাতিলের কষ্টিপাথর খোদার কিতাব রাসূলের সুন্নাতের পরিবর্তে কোন ব্যক্তিকে করেন, তাহলে আপনারা নিজেদেরকে নিজেদের ভবিষ্যত ব্যক্তির উপরেই সোপর্দ করুন এর পূর্ণ অধিকার আপনাদের কাছে অতঃপর খোদার কাছে এরুপ জবাব দিবেন, ‘হে খোদা, আমরা আমাদের দ্বীনকে তোমার কিতাব তোমার রাসূলের সুন্নাতের পরিবর্তে অমুক অমুক লোকের উপরে ছেড়ে দিয়েছিলাম' আপনাদের জবাব যদি আপনাদেরকে খোদার কাছ থেকে বাঁচাতে পারে, তাহলে তা সন্তুষ্ট চিত্তে করতে থাকুন

-আবুল 'লা মওদূদী

 

কাজ যদি আমরা দোকানদারীর মনোভাব নিয়ে করে থাকি, তাহলে আমাদের উপরে এবং আমাদের কারবারের উপরে হাজার হাজার লা'নত আর যদি এটা ঐকান্তিকতার সাথে খোদার দ্বীনের খেদমত হয়, তাহলে আমাদের উপরে প্রত্যেকের খুশী থাকা উচিত যে, কাজ সে শুধু একাই করছে না বরং অন্যান্যরাও এতে লিপ্ত আছেন আমাদের কাজ হচ্ছে এই যে, আমরা তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করব না বার বার আমরা তার কাছে যাব, যাতে আল্লাহ তার মনকে ফিরিয়ে দেন

- আবুল 'লা মওদুদী

 

দ্বীনকে যেভাবে বিকৃত করা হচ্ছে, তা যদি আমি মেনে নিই এবং কিছু লোক আমাকে যেভাবে দেখতে চায়, আমি যদি তা হয়ে যাই, তাহলে এমন অপরাধী হবো যে, আল্লাহর কাছে আমাকে কঠিন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে সেদিন আমাকে কেউ সাহায্য করতে আসবে না অতএব আমি তাদের ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্র হওয়াকে শ্রেয় মনে করি আখেরাতে নিজেকে বিপন্ন করা থেকে

-আবুল 'লা মওদূদী


খোদা সাক্ষী আছেন, কোন ব্যক্তি অথবা দলের প্রতি আমার কোন শত্রুতা নেই আমি শুধু সত্যের বন্ধু এবং মিথ্যার দুশমন যা আমি সত্য মনে করেছি, তার সত্যতার যুক্তিও পেশ করেছি যা মিথ্যা মনে করেছি, তারও যুক্তি উপস্থাপন করেছি যিনি আমার সাথে একমত নন, তিনি যুক্তি দিয়ে আমার ভুল ধরে দিলে, আমি আমার মত পরিবর্তন করতে পারি এখনো কিছু লোক এমন আছেন, যাঁরা শুধু জন্যে ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন যে, তাঁর অথবা তাঁদের প্রিয় নেতার বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়েছে অথচ তাদের বিবেচ্য এটা নয় যে, যা বলা হয়েছে তা সত্য না মিথ্যা এরূপ লোকের ক্রোধবহ্নিকে আমি কোন পরোয়া করি না আমি তাঁদের গালির জবাব দেবো না এবং আমার পথ থেকে বিচ্যুত হবো না

 

-আবুল 'লা মওদূদী

আমার স্পষ্টবাদিতা নিশ্চয়ই সব মহাত্মার কাছে কটু লাগবে, যারা মানুষকে সত্যের দ্বারা যাচাই করার পরিবর্তে সত্যকে মানুষের দ্বারা যাচাই করতে অভ্যস্ত এর জবাবে আরো কিছু গালি খাবার জন্যে আমি নিজকে প্রস্তুত রেখেছি

-আবুল 'লা মওদূদী

 

আমার বড় দুঃখ হয়, মুসলমানদের নৈতিক অধঃপতন বর্তমানে এমন চরমে পৌছেছে যে, খোদার আইন-ভঙ্গকারীরা সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে অপরদিকে যারা রাব্বুল আলামীনের আইন মেনে চলে অপরকে চলতে বলে, আজ তাঁরাই হচ্ছে লাঞ্ছিত অপমানিত

-আবুল 'লা মওদূদী

 

খোদার ফযলে আমি ভাবাবেগে কোন কাজ করিনি আমার বক্তৃতায় যা কিছু বলেছি, তার প্রতিটি শব্দ পরিমাপ করে বলেছি কথা চিন্তা করে যে, এর হিসাব খোদার কাছে দিতে হবে, কোন বান্দার কাছে নয় আমি নিশ্চিত যে, সত্যের বিপরীত একটি শব্দও আমি বলিনি যা কিছু বলেছি, তা দ্বীনের খেদমতের জন্যে ছিল একান্ত অপরিহার্য আমার আশংকা হয়েছিলো যে, কথা বলার জন্যে নয়, বরং না বলার জন্যে আমাকে খোদার কাছে দায়ী হতে হবে

-আবুল 'লা মওদূদী

 

আমি তাদের মধ্যে নই, যারা মিথ্যা প্রচারণা, ব্যক্তিগত কোন্দল এবং গালাগালি করাকে নিজেদের পেশা বানিয়ে নিয়েছে বুযুর্গানে কওমের পাগড়ি বহনকারী এবং রাজনৈতিক মতভেদকে ব্যক্তিগত শত্রুতায় পরিবর্তনকারীদের আচরণ আমি সর্বদাই ঘূর্ণার চোখে দেখে এসেছি আমাকে যাঁরা জানেন, তাঁরা সত্যটিও জানেন"

-আবুল 'লা মওদূদী

 

আমি বসে গেলে দাঁড়িয়ে থাকবে কে?”

(১৯৬৩ সালে লাহোরে নিখিল পাকিস্তান জামায়াতের সম্মেলনে সরকারি গুন্ডা বাহিনীর গুলিবর্ষনের মুখে)

-আবুল 'লা মওদূদী

 

মৃত্যুর ফয়সালা যমীনে নয়, আসমানে হয়ে থাকে

(১৯৫৩ সালের ১১ই মে সামরিক আদালতে মাওলানার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হলে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইতে বললে)

 


একনজরে মাওলানা প্রনীত গ্রন্থাবলি:

কুরআন

তরজমায়ে কুরআন মাজীদ পৃ: ১২৪৮

তাফহীমুল কুরআন -১৯ খণ্ড পৃ: ৪১৬৫

তাফহীমুল কুরআনের বিষয়সূচি পৃ: ৫৪০

কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা পৃ: ১১৯

কুরআনের মর্মকথা৷ পৃ: ৪৮


হাদিস/ সুন্নাহ

সুন্নাতে রাসুলের আইনগত মর্যাদা পৃ: ৩৩৬

হাদিসের আলোকে কুরআনের মহত্ত্ব মর্যাদা পৃ: ১৩৩


ইসলামি জীবন দর্শন

ইসলাম পরিচিত পৃ: ১১২

তাওহীদ রিসালাত আখিরাত পৃ:৪৪

১০ ইসলামের জীবন পদ্ধতি পৃ: ৫৫

১১ একমাত্র ধর্ম ইসলাম পৃ: ৪৫

১২ শান্তির পথ পৃ: ২৭

১৩ ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা পৃ: ২৭৯

১৪ নির্বাচিত রচনাবলি - খণ্ড পৃ: ১৩৪৪

১৫ আল জিহাদ পৃ: ৫৯২

১৬ ইসলাম জাহিলিয়াত পৃ: ৪৮

১৭ ইসলাম পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব পৃ: ২২৮

১৮ ইসলামি জীবন ব্যবস্থার মৌলিক রূপরেখা পৃ: ৩৮৪

১৯ ইসলামি দাওয়াতের দার্শনিক ভিত্তি পৃ: ৩২

২০ ইসলামের নৈতিক দৃষ্টিকোণ পৃ: ৩২

২১ ইসলাম জাতীয়তাবাদ পৃ: ১১৯

২২ ইসলাম সামাজিক সুবিচার পৃ: ২৪

২৩ ইসলামে শক্তির উৎস পৃ: ৬৭

২৪ কুরবানীর শিক্ষা পৃ: ৪৮

২৫ ইমানের হাকিকত পৃ: ৪৮

২৬ ইসলামের হাকিকত পৃ: ৪৪

২৭ নামায রোজার হাকিকত পৃ:৬৫

২৮ হজের হাকীকত পৃ: ৪৮

২৯ যাকাতের হাকীকত পৃ: ৫৮

৩০ জিহাদের হাকীকত পৃ: ২৮

৩১ তাকদীরের হাকীকত পৃ: ১০২

৩২ শিক্ষা ব্যবস্থা : ইসলামী দৃষ্টিকোণ পৃ: ১৩৩


আইন, রাজনীতি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা

৩৩ ইসলামী আইন পৃ: ৬৩

৩৪ ইসলামী রাষ্ট্র পৃ: ৭০০

৩৫ খেলাফত রাজতন্ত্র পৃ: ২৯৪

৩৬ ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ পৃ: ৬৩

৩৭ উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন মুসলমান -খণ্ড পৃ:৮৭৭

৩৮ ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রনয়ণ পৃ: ৮৬

৩৯ ইসলামী শাসনতন্ত্রের মূলনীতি পৃ: ৮৬

৪০ মৌলিক মানবাধিকার পৃ: ৩২

৪১ ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার পৃ: ৫০

৪২ দক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক ইতিহাস পৃ: ২৮৬

৪৩ কুরআনের রাজনৈতিক শিক্ষা পৃ:

৪৪ জাতীয় ঐক্য গণতন্ত্রের ভিত্তি পৃ:২৪

৪৫ মুরতাদের শাস্তি পৃ: ৬৮


ইসলামি আন্দোলন সংগঠন

৪৬ ইসলামী দাওয়াত কর্মনীতি পৃ: ৪৭

৪৭ ইসলামি রেনেঁসা আন্দোলন পৃ: ১২২

৪৮ জামায়াতে ইসলামির উদ্দেশ্য ইতিহাস কর্মসূচী পৃ: ৮০

৪৯ আল্লাহর পথে জিহাদ পৃ: ৩২

৫০ ইসলামি আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি পৃ: ৬২

৫১ ইসলামি আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী পৃ: ৬৪

৫২ মুসলমানদের অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতের কর্মসূচী পৃ: ৭৮

৫৩ ইসলামি বিপ্লবের পথ পৃ: ৫৬

৫৪ ইসলামি আন্দোলনের ভবিষ্যত কর্মসূচী পৃ: ১৩৪

৫৫ আন্দোলন সংগঠন কৰ্মী পৃ: ২২৪

৫৬ দায়ী ইলাল্লাহ দাওয়াত ইল্লাল্লাহ পৃ: ৪২

৫৭ ভাঙ্গা গড়া পৃ: ৩২

৫৮ একটি সত্যনিষ্ঠ দলের প্রয়োজন পৃ:২৩

৫৯ শাহাদতে হুসাইন (রা:) পৃ: ১৬

৬০ বিশ্ব মুসলিম ঐক্যজোট আন্দোলন পৃ: ৪৩

৬১ সত্যের সাক্ষ্য পৃ:৪০

৬২ আজকের দুনিয়ায় ইসলাম পৃ: ৪২

৬৩ জামায়াতে ইসলামীর ২৯ বছর পৃ: ৫৪


অর্থনীতি ব্যাংক ব্যবস্থা

৬৪ ইসলামী অর্থনীতি পৃ: ৩২৮

৬৫ অর্থনৈতিক সমস্যার ইসলামী সমাধান পৃ: ৩৮

৬৬ কুরআনের অর্থনৈতিক নির্দেশিকা পৃ: ৫০

৬৭ ইসলাম আধুনিক অর্থনৈতিক মতবাদ পৃ: ১২৬

৬৮ ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূলনীতি পৃ: ৩১

৬৯ সুদ আধুনিক ব্যাংকিং পৃ: ৩০২

৭০ ভুমির মালিকানা বিধান পৃ: ৯৬


দাম্পত্য জীবন নারী

৭১ পর্দা ইসলাম পৃ: ২৮০

৭২স্বামী স্ত্রীর অধিকার পৃ: ১৫১

৭৩ ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ পৃ: ১৩১

৭৪ মুসলিম নারীর নিকট ইসলামের দাবি পৃ: ২৪


তাযকিয়ায়ে নফস

৭৫ হিদায়াত পৃ: ৫৫

৭৬ ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা পৃ: ২৭৪

৭৭ ইসলামী ইবাদতের মর্মকথা পৃ: ৮৮

৭৮ আত্মশুদ্ধির ইসলামী পদ্ধতি পৃ: ৪৮


সীরাত

৭৯ সীরাতে সরওয়ারে আলম - খণ্ড পৃ: ১২৭৬

৮০ খতমে নবুওয়াত পৃ: ৭৫

৮১ নবীর কুরআনী পরিচয় পৃ: ৪০

৮২ আদর্শ মানব পৃ: ৩২

৮৩ সাহাবায়ে কিরামের মর্যাদা পৃ: ৪০


সামগ্রিক

৮৪ রাসায়েল মাসায়েল - খন্ড পৃ: ১৬৭৯

৮৫ যুবসমাজের মুখোমুখি মাওলানা মওদূদী পৃ: ৪৫০

৮৬ যুগ জিজ্ঞাসার জবাব - খণ্ড পৃ: ৪৪৮

৮৭ বিকেলের আসর - খণ্ড পৃ: ২৫০

৮৮ পত্রাবলী - খন্ড পৃ: ৪৫৫

৮৯ বেতার বক্তৃতা

৯০ মাওলানা মওদূদীর সাক্ষাৎকার পৃ: ৪০০

৯১ খুতবাতুল হারাম পৃ: ৩৮

৯২ পত্রালাপ মাওলানা মওদূদী মরিয়ম জমিলা পৃ: ২০০

৯৩ কাদিয়ানী সমস্যা পৃ: ৭০

 

 

 

মাওলানা মওদূদী সম্পর্কে বাংলাভাষায় কয়েকটি বই

        বইয়ের নাম                              লেখকের নাম

. বিশ্বের মনীষীদের দৃষ্টিতে মাওলানা মওদূদী - আব্বাস আলী খান সম্পাদিত

. মাওলানা মওদূদী - আব্বাস আলী খান

. আলেমে দ্বীন মাওলানা মওদূদী - আব্বাস আলী খান

. ইসলামের পুনরুজ্জীবনে মাওলানা মওদূদীর অবদান - অধ্যাপক গোলাম আযম

. জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস - আব্বাস আলী খান

.জামায়াতে ইসলামীর কার্যবিবরণী- ১ম খণ্ড

. জামায়াতে ইসলামীর কার্যবিবরণী- ২য় খণ্ড

. সত্যের আলো - মাওলানা বশীরুজ্জামান

. কুরআনের দেশে মাওলানা মওদূদী - মুহাম্মদ আসেম

১০. মাওলানা মওদূদীর বহুমুখী অবদান - আব্বাস আলী খান

১১. জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতার অন্তরালে - আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ

১২. আজাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের ভূমিকা - জুলফিকার আহমদ কিসমতী

১৩. ছোটদের মওদূদী - শেখ আনসার আলী

১২. মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব - মাওলানা আবদুল হাকীম

১৫. মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তাত্ত্বিক পর্যালোচনা - মুফতী মুহাম্মদ ইউসুফ

১৬. খৈলাফত রাজতন্ত্র গ্রন্থ সম্পর্কে অভিযোগের জবাব - বিচারপতি মালিক গোলাম আলী

১৭. মাওলানা মওদূদীকে যেমন দেখেছি - অধ্যাপক গোলাম আযম

 

 

 

তথ্যসূত্র সংগৃহীত-

০১. সংক্ষেপে মাওলানা মওদূদী – মু. সাইয়্যেদ আজম মওদূদী

০২. মাওলানা মওদূদী: একটি জীবন একটি ইতিহাস - আব্বাস আলী খান


সংকলনে: আরমানের খেরোখাতা